রাজনৈতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাগ গুরুত্বপূর্ণ:

অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে রাজনীতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রাজনীতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের সরকারী কাঠামোর মধ্যে সাদৃশ্যমূলক এবং বৈসাদৃশ্যমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। তা ছাড়া এই শ্রেণীবিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক কাঠামো এবং রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবন করা যায়। সামগ্রিক বিচারে রাজনীতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সরকারের অংশসমূহের সংযোগ ও সম্পর্ক রাজনীতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাগের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করা যায়। প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনীতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাগের প্রয়োজনীয়তা বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “the comparison of different structures of processes assiste us in understanding the working of various aspects of the system, especially in terms of the relationship of the separate parts to the whole.” তাঁর আরও অভিমত হল যুক্তরাষ্ট্রীয় ও এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য অথবা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ও রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য পর্যালোচনা করলে রাজনীতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাজনের তাৎপর্য অনুধাবন করা যাবে। বল বলেছেন: Federal and unitary division cuts across the threefold typology outline for political systems.”

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা:

বলের অভিমত অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের রাজনীতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র গঠনকারী রাজ্য বা প্রদেশগুলির মধ্যে বণ্টিত থাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: “The federal structure can lead to significant differences in the way in which the political process works.” তাঁর মতানুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিম জার্মানীর যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং গ্রেট ব্রিটেন, সুইডেন ও ফ্রান্সের এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনার স্বার্থে দু’টি পৃথক শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এই রকম শ্রেণীবিভাজনের সাহায্যে পারস্পরিক সম্পর্কের কতকগুলি ধরন সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। তা ছাড়া এই পার্থক্যমূলক আলোচনার ভিত্তিতে সরকারের প্রতিটি ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা এবং এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার রাজনীতিক বিভিন্ন কাঠামোর কাজকর্মের পদ্ধতি- প্রক্রিয়া এবং কাঠামোগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক স্বতন্ত্র ধরনের। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে বণ্টিত থাকে। বণ্টনের এই ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইন-বিভাগ, শাসন-বিভাগ, বিচার বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এবং তদনুসারে সরকারের এই বিভাগগুলি তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত অবস্থায় থাকে। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিক দল, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এবং আমলাতন্ত্রের কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি পৃথক প্রকৃতির হয়। বল বলেছেন: “…. federalism affects the working of the party system, the operation of pressure groups, the relationships between assemblies and executives, the status of the judiciary and the organisation of the bureaucracy” বিপরীতক্রমে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই কেন্দ্রীভূত থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারই হল সকল ক্ষেত্রে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী ও প্রয়োগকর্তা। এই কারণে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দল, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এবং আমলাতন্ত্রের কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি এককেন্দ্রিক প্রকৃতির হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ভারত— এই তিনটি দেশের রাজনীতিক কাঠামো হল যুক্তরাষ্ট্রীয়। কিন্তু এই তিনটি রাষ্ট্রের সরকারী কাঠামো ও শাসনকার্য পরিচালনার পদ্ধতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বর্তমান। অনুরূপভাবে গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের রাজনীতিক কাঠামো হল এককেন্দ্রিক। অথচ এই তিনটি রাষ্ট্রের সরকারী ব্যবস্থা ও শাসনকার্য পরিচালনার পদ্ধতি অভিন্ন প্রকৃতির নয়।

রাষ্ট্রপতিশাসিত ও মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত সরকার:

সরকারের শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি-শাসিত এবং মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত সরকার সম্পর্কে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দু’ধরনের রাজনীতিক কাঠামোর মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনা তাৎপর্যপূর্ণ। এ ধরনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই দু’ধরনের রাজনীতিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ও বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। আবার যে সমস্ত দেশে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা বর্তমান সেই সমস্ত দেশের সরকারী কাঠামো ও কার্যপদ্ধতির মধ্যে তারতম্য আছে। অনুরূপভাবে যে সমস্ত দেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে সেই সমস্ত দেশের সরকারী ব্যবস্থা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর করার পদ্ধতি একেবারে একরকম নয়। অর্থাৎ রাজনীতিক কাঠামোর শ্রেণীবিভাগ ও বিচার-বিশ্লেষণ সম্পর্কিত বিষয়টি সমস্যাবহুল ও জটিল প্রকৃতির। যাইহোক রাষ্ট্রপতি শাসিত ও মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা আবশ্যক। বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “Another useful division is that between presidential system and parliamentary systems. A comparison of the two throws up certain important distinctions between the two, emphasises the essential characteristics of each, and, moreover, further underlines the limitations of any form of classification.”

Rate this post