পরোক্ষ গণতন্ত্রের ভিত্তি হল ভোটাধিকার: প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমে ছোট ছোট নগর-রাষ্ট্র (city state) ছিল। এই সময় অভিজাত শ্রেণীই প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করত। কিন্তু সেই আমলের প্রত্যক্ষ শাসনব্যবস্থার দিন এখন আর নেই। আধুনিক পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এই গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিনিধিমূলক। রাজনীতিক দল ও ভোটাধিকারের ভিত্তিতে এ শাসন প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনসাধারণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত হয় না। এখনকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের সম্মিলিত সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণের এই সম্মতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সুতরাং প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোটাধিকার ছাড়া সাম্প্রতিককালের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়বে। ভোটাধিকারের মাধ্যমেই জনগণ শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। সেইজন্য ভোটাধিকার আধুনিক পরোক্ষ গণতন্ত্রের প্রাণস্বরূপ।

গণতন্ত্রে ভোটাধিকার একটি দায়িত্ব: বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আইন প্রণয়ন করেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মন্ত্রিসভা গঠন করে। এই মন্ত্রিসভাই দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে। আর রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। জনগণ যোগ্য, বিজ্ঞ, দক্ষ প্রার্থী নির্বাচন করতে পারলে তবেই সুষ্ঠুভাবে প্রয়োজনীয় আইন প্রণীত হবে এবং সাফল্যের সঙ্গে শাসনকার্য সম্পাদিত হবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উৎকর্ষের মান নির্বাচিত প্রার্থীদের গুণগত যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্যের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করা জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিশেষ। ন্যায্যভাবে ও বিচার-বিবেচনার সঙ্গে ভোটাধিকার ব্যবহারের উপর গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে।

ভোটাধিকার সকল প্রকার রাজনীতিক অধিকারের মূল উৎস হিসাবে পরিগণিত হয়। ফরাসী দার্শনিক রুশোকে অনুসরণ করে বলা হয় যে গণতন্ত্রে গণমত বা সাধারণের ইচ্ছাই (General Will) হল সার্বভৌম শক্তির আধার। অর্থাৎ রাষ্ট্রের জনগণই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। জনগণের এই শক্তি ভোটদানের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। সুতরাং গণতন্ত্রে ভোটাধিকারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ নেই।

প্রতিনিধিত্বের ইতিহাস

মধ্যযুগের সীমাবদ্ধ প্রতিনিধিত্ব: আধুনিক পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বর্তমান। এখনকার গণতান্ত্রিক শাসন হল পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ভোটাধিকার হল নাগরিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক অধিকার তথা কর্তব্য। এই প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা স্বচ্ছ নয়। কবে ও কোথায় এই ব্যবস্থা প্রথম চালু হয় তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে প্রচলিত ধারণা হল এই যে প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে মধ্যযুগে। তবে এই সময়কার প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ অর্থে গণতন্ত্রসম্মত বলা যায় না। কারণ তখন জনগণের সকলের ভোটাধিকার ছিল না। নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায় যেমন, ধনিক-বণিক শ্রেণী, ভূস্বামী, অভিজাত সম্প্রদায় প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারত। ইংল্যাণ্ডের পার্লামেন্ট, জার্মানীর ডায়েট (Diet), স্পেনের করটেস (Cortes), ফ্রান্সের এস্টেটস জেনারেল প্রভৃতি তখনকার এই সমস্ত প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থায় সীমাবদ্ধ প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

ইংল্যাণ্ডে প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার বিবর্তন: এরপর মানবজাতির ইতিহাস জাতীয় রাষ্ট্র (National States) -এর আবির্ভাব ঘটে। জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণার ভিত্তিতে রাজতন্ত্রও যথেষ্ট শক্তপোক্ত হয়ে পড়ে। রাজতন্ত্রের এই ক্ষমতা বৃদ্ধি আইনসভার কর্তৃত্ব ও ভূমিকাকে খর্ব করে। ইংল্যাণ্ডে আইনসভার ভূমিকার প্রাধান্য, গুরুত্ব ও প্রতিপত্তিকে কেন্দ্র করে পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজতন্ত্রের দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম চলতে থাকে। গৌরবময় বিপ্লব (Glorious Revolution, 1688) -এর পর ইংল্যাণ্ডে পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এর পরেও মধ্যযুগের প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। এই ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন সাধন করা হয় ১৮৩২ সালে এবং সীমাবদ্ধভাবে জনপ্রতিনিধিত্বের কিছু ব্যবস্থা করা হয়। ইংল্যাণ্ডে ভোটাধিকার ও নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু সংস্কারমূলক আইন তৈরি করা হয় ১৮৩২ ও ১৯২৮ সালের মধ্যে। এখন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্স সভা (House of Commons)-র প্রতিনিধি নির্বাচনে ১৮ বছর বয়স্ক সকল ব্রিটিশ নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত।

এখন পৃথিবীর অপরাপর রাষ্ট্রেও জনপ্রতিনিধিত্বের নীতি ও প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকার করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের স্বীকৃতির পিছনে সুদীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস বর্তমান।

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার

ভোটাধিকারের ভিত্তি সম্পর্কে দু’টি তত্ত্ব:

উইলোবির মতানুসারে নির্বাচকমণ্ডলী হল প্রতিনিধিমূলক শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি। তিনি বলেছেন: “In a popular government of the representative type, the electoral branch may be viewed as the foundation upon which the whole structure of government is created.” গণতন্ত্রে ভোটাধিকার একটি অতি মূল্যবান অধিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বটে। তাই সকলকেই নির্বিচারে ভোটাধিকার প্রদান করা উচিত কিনা এ বিষয়ে মোটামুটি দু’টি মত প্রচলিত আছে। একটি মত হল যোগ্যতার বিচারে জনসংখ্যার কেবল একটি নির্দিষ্ট অংশকে ভোটাধিকার দেওয়া উচিত। আরেকটি মত হল প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকেরই ভোটাধিকার থাকা উচিত। এই দ্বিতীয় ব্যবস্থাকে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার (Universal Adult suffrage) বলা হয়। বর্তমানে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের দাবি স্বীকৃত।

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার:

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রদানের নীতিকে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার বলে। ধর্মের দোহাই দিয়ে বা উচ্চ-নীচ জাতি বিচার করে কোন ব্যক্তিকেই এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এই নীতি অনুসারে ভোটাধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে একটিমাত্র যোগ্যতা বিবেচিত হবে, তা হল ভোটাধিকার লাভের জন্য ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট বয়ঃক্রমে উপনীত হতে হয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট বয়সে উপনীত প্রত্যেক ব্যক্তির ভোটদানের অধিকার থাকবে। এই সর্বনিম্ন বয়স-সীমা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারতে বর্তমানে ১৮ বছরের সকল ব্যক্তির ভোটাধিকার স্বীকৃত। আগে ভারতের এই বয়ঃসীমা ছিল ২১ বছর। ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, রুমানিয়া, পূর্ব জার্মানী, যুগোশ্লাভিয়া প্রভৃতি দেশে আঠারো বছরের সকল ব্যক্তির ভোটাধিকার স্বীকৃত। তবে সকল দেশেই উন্মাদ, দেউলিয়া, গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি, বিদেশী প্রভৃতি ব্যক্তিদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় না।

সার্বিক ভোটাধিকারের ইতিহাস:

ভোটাধিকার হল একটি রাজনীতিক অধিকার। রাষ্ট্র সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়নি। এই অধিকার অর্জনের জন্য মানবজাতির ইতিহাসে বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ, আন্দোলন ও রক্তপাত ঘটেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত সার্বিক ভোটাধিকারের দাবী তেমন বিশেষ সোচ্চার হয়ে ওঠেনি। তখনও সমাজের কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিই ভোট দিতে পারত। কিন্তু বর্তমানে এই সামস্ততান্ত্রিক রীতির পরিবর্তন ঘটেছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই ভোটাধিকার সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের দাবি স্বীকৃত হয়েছে। ভিক্টর হুগোর মতে, সার্বিক ভোটাধিকার মানুষকে রাজমুকুটে ভূষিত করে নাগরিকত্ব দান করেছে। তিনি বলেছেন: “Adult suffrage has crowned man as citizen.”

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের সপক্ষে যুক্তি:

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের পক্ষে প্রবক্তাগণ বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেন।

(১) ভোটাধিকার জনগণের একটি বিশেষ শক্তি:

গণতন্ত্র বলতে জনগণের শাসনকেই বোঝায়। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ এবং আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সকলের সমান অধিকার থাকা দরকার। সরকারী আইনকানুন সকলকেই প্রভাবিত করে। তাই সকলেরই ভোটাধিকার থাকা চাই। যা সকলকে স্পর্শ করে, তা সকলের দ্বারাই স্থিরীকৃত হওয়া উচিত (“What touches all must be decided by all.”)। ভোটাধিকার জনগণের একটি বিশেষ শক্তি। এই শক্তির দ্বারাই ব্যক্তি সরকারের আইন প্রণয়নকে প্রভাবিত করতে পারে। 

(২) জনগণের ভোটাধিকার স্বাভাবিক ও জন্মগত:

গণতন্ত্রে জনগণই হল রাষ্ট্রের প্রকৃত চালিকাশক্তি। প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের এই শক্তির প্রকাশ ঘটে। তাই জনগণের শাসন হিসাবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থাকা দরকার। 

(৩) গণ-সার্বভৌমিকতার যুক্তি:

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌম শক্তি জনগণের মধ্যে নিহিত থাকে। এই শক্তি ব্যবহারের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। এই অধিকার স্বাভাবিক বা জন্মগত ভোট দিবার জন্মগত অধিকারই হল এর এক অপরিহার্য পরিণতি। প্রতিনিধিমূলক গণতন্ত্রে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের মাধ্যমে এই গণ-সার্বভৌমিকতা বাস্তবে রূপায়িত হয়। আপ্পাডোরাই (Appadorai) বলেছেনঃ “The primary means by which the people exercise their sovereignty is the vote.” 

(৪) ভোটাধিকার প্রদানের ব্যাপারে বৈষম্য অকাম্য:

ভোটাধিকার কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে সরকার সেই শ্রেণীর স্বার্থসাধনে অধিক তৎপর হয়। ভোটাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরই সরকার সম্ভ্রমের চোখে দেখে এবং বিশেষ মর্যাদা দেয়। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিদের স্বার্থ অবহেলিত হয়। সরকার তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করে। আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে এ ধরনের বিভেদমূলক আচরণ আদৌ কাম্য নয়। ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অর্থ হল ক্ষমতাপ্রসূত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া (“Exclusion from power means exclusion from the benefit of power.”)। 

(৫) সাম্য ও সমানাধিকারের নীতি:

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সাম্য ও সমানাধিকারের উপর প্রতিষ্ঠিত। কোনরকম বৈষম্যমূলক আচরণকে গণতন্ত্রে স্বীকার করা হয় না। ভোটাধিকার প্রদানের ক্ষেত্রেও বৈষম্য থাকা অনুচিত।

(৬) সরকারের স্বেচ্ছাচার রোধ:

শাসকশ্রেণীকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে সার্বিক ভোটাধিকার হল জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। পরোক্ষ গণতন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণই আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করেন। প্রতিনিধিগণ নির্দিষ্ট কার্যকালের মধ্যে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে না পারলে, জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। এই কারণে সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না। তার ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দায়িত্ববোধহীন ও অকর্মণ্য সরকারকে অপসারিত করতে এবং নতুন সরকার গঠন করতে পারে।

(৭) জনগণের রাজনীতির শিক্ষার বিস্তার:

ভোটাধিকার হল একটি রাজনীতিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটদাতাগণ নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে অবহিত হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়। এইভাবে তাদের মধ্যে রাজনীতিক শিক্ষা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে সমাজের এক অপরিহার্য অংশ হিসাবে মনে করে। নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রত্যেক রাজনীতিক দল দেশের পরিস্থিতি ও অন্যান্য সমস্যাদি সম্পর্কে নিজেদের মতামত জনসমক্ষে তুলে ধরে। বিভিন্ন দলের কার্যক্রম ও নীতির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব মতামত গঠন করে। এইভাবে নাগরিকের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়। বস্তুত সার্বিক ভোটাধিকার জনসাধারণের মধ্যে রাজনীতিক চেতনার ব্যাপক বিস্তার ঘটায়।

(৮) সার্বিক ভোটাধিকারের বিকল্প নেই:

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার অস্বীকার করার অর্থ হল। একটি শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থকে অবহেলা করা। সরকার এই বঞ্চিত ব্যক্তিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করে। এই উপেক্ষা ও বঞ্চনা পুঞ্জীভূত হয়ে বৃদ্ধি পেলে বিক্ষোভ বিদ্রোহ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিদের মধ্যে সরকার-বিরোধী মনোভাব দানা বাঁধতে পারে। তার ফলে বিক্ষোভের দ্বারা বিদ্রোহের সৃষ্টি হতে পারে। এই সবের পরিণতিতে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব বিপন্ন হওয়ার আশংকা থাকে। এই কারণেও সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকার করে নেওয়া উচিত। সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হলে সরকার জাতীয় সরকারের মর্যাদায় ভূষিত হয়।

(৯) নৈতিক যুক্তি:

নৈতিক কারণেও সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকার করা উচিত। কারণ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। গণতন্ত্রের এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে হলে ভোটাধিকার সর্বজনীন হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাজনীতিক জীবনে সমান ও স্বাধীন সুযোগ না থাকলে ব্যক্তিবর্গের সহজাত ক্ষমতার ও জীবনের সার্বিক বিকাশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের বিপক্ষে যুক্তি:

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নানা যুক্তির অবতারণা করেছেন। বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে মেকলে, মেইন, মিল, লেকী প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম উল্লেখযোগ্য।

(১) অবিজ্ঞোচিত বিপদজনক ও প্রগতিবিরোধী:

গণতন্ত্রে সরকারের সাফল্য ও উৎকর্ষ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগত যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। তাই প্রতিনিধি নির্বাচন হল একটি বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ কাজ। এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ভোটদাতাদের উপযুক্ত যোগ্যতা থাকা দরকার। অশিক্ষিত ও অজ্ঞ জনগণকে ভোটাধিকার প্রদান অবিজ্ঞোচিত এবং বিপজ্জনক। গণতন্ত্রে সমানাধিকারের ভিত্তিতে সকলেই ভোটাধিকার পায়। কিন্তু জনগণের অধিকাংশই হল অশিক্ষিত ও অজ্ঞ। এই অজ্ঞতা ও অশিক্ষা দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায়স্বরূপ। যোগ্য এবং প্রতিভাবান ব্যক্তিরা কখনই সার্বিক ভোটাধিকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন না। তাই যোগ্য ও বিজ্ঞ ব্যক্তির পরিবর্তে অজ্ঞ ও অশিক্ষিত ব্যক্তিগণ শাসনকার্য পরিচালনা করার সুযোগ পান। ফলে দেশের প্রগতি ব্যাহত হয়, সরকারের সাফল্য ও কাম্য সংস্কার বাধাপ্রাপ্ত হয়।

মেকলে, মেইন ও লেকী: মেকলে, হেনরী মেইন, লেকী প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতানুসারে সমাজের সামগ্রিক বিকাশ সাধনের জন্য বিশেষ শিক্ষা, দূরদৃষ্টি ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। সকলের তা থাকে না। এই কারণে ভোটাধিকার সহজাত বা জন্মগত অধিকার হিসাবে গণ্য হতে পারে। এই অধিকার বিশেষ যোগ্যতার ভিত্তিতে অর্জন করতে হয়। মেকলের মন্তব্য অনুসারে সর্বজনীন ভোটাধিকার এক ব্যাপক ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে এবং মহান ইউরোপীয় নগরগুলির ধ্বংসাবশেষকে কিছু অর্ধনগ্ন মৎস্যজীবী, শৃগাল ও পেচকের সঙ্গে ভাগ করে নেবে। মেইনের মতানুসারে সর্বজনীন ভোটাধিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে বাধাস্বরূপ। লেকীর অভিমত অনুযায়ী সার্বজনীন ভোটাধিকারের স্বীকৃতি এবং অজ্ঞ-অশিক্ষিত জনগণের শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা সমার্থক। 

কিন্তু সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার দেশের প্রগতির পরিপন্থী এ ধরনের যুক্তি অসঙ্গত। সার্বিক ভোটাধিকার দেশের অগ্রগতিকে রুদ্ধ করেছে এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। 

(২) মিলের মতে শিক্ষা ভোটাধিকারের ভিত্তি হওয়া দরকার:

শিক্ষাকে অনেকে ভোটাধিকার প্রদানের‌ যোগ্যতা হিসাবে গণ্য করার পক্ষপাতী। শিক্ষাকে ভোটাধিকারের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে জে. এস. মিল বিশেষ যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। তাঁর মতে শিক্ষা ব্যতিরেকে ভোটাধিকার প্রদান সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যে ব্যক্তির সাধারণ অক্ষর-পরিচয় জ্ঞান নেই এবং যে গণিতশাস্ত্রের সাধারণ বিষয়গুলিও সম্পাদন করতে পারে না তার পক্ষে ভোটাধিকারের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক অধিকার সঠিকভাবে ভোগ করা সম্ভব নয়। মিল বলেছেন: “I regard it as wholly inadmissible that any person should participate in the suffrage without being able to read and write, and I will add, perform the common operations of arithmetic.” এই কারণে মিলের মত হল সার্বজনীন ভোটাধিকারের স্বীকৃতির আগে সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তার আবশ্যক। তিনি বলেছেন: “Universal teaching must precede universal enfranchisement.”

(ক) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে উপরিউক্ত যুক্তি সর্বাংশে সত্য নয়। ভোটাধিকারের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন হল রাজনীতিক বিচারবুদ্ধির। স্কুল-কলেজের পুঁথিগত শিক্ষার উপর তা বড় একটা নির্ভরশীল নয়। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষা-দীক্ষা অপেক্ষা অভাবের চেতনাই ভোটদাতার রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। তাই অশিক্ষিত মানুষও রাজনীতিক বিষয়ে সচেতন হতে পারে। 

(খ) তা ছাড়া শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলেই ভাল-মন্দ বোঝে। তাই জনগণের এক বিরাট অংশকে অশিক্ষার দায়ে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। 

(গ) আবার ভোটাধিকারের যথাযথ প্রয়োগের জন্য কিছুটা শিক্ষার প্রয়োজনের কথা স্বীকার করলেও বলতে হয় যে জনগণকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন না করে অর্থাৎ সার্বিক শিক্ষার ব্যবস্থা না করে জনগণের একটি বড় অংশকে ভোটাধিকারের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা জনগণের উপর চাপিয়ে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা নীতিগত দিক থেকে সমর্থিত হতে পারে না। 

(৩) সম্পত্তিগত যোগ্যতা ভোটাধিকারের ভিত্তি হওয়া উচিত:

অনেকে সম্পত্তিগত যোগ্যতাকে ভোটাধিকারের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করার কথা বলেন। এঁদের মতে সম্পত্তির অধিকার জনগণকে অধিকতর সমাজ-সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তোলে। বিত্তবান ব্যক্তিরাই হল দেশের শিক্ষিত সুনাগরিক। তা ছাড়া যাদের সম্পত্তি আছে তারাই কেবল সরকারকে কর দেয়। সম্পত্তিহীন ব্যক্তিগণ রাষ্ট্রের প্রতি দরদী হবে না এবং ভোটাধিকারকে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করবে। এই সব ব্যক্তি ক্ষমতাসীন হলে সরকারী অর্থের উপর তাদের কোন মায়া-মমতা থাকবে না। তার ফলে রাজস্ব যথেচ্ছভাবে ব্যয়িত হবে এবং সরকারী অর্থের অকারণ অপচয় ঘটবে। জন স্টুয়ার্ট মিলের কথায়: “Those who pay no taxes, disposing by their votes of other people’s money have every motive to be lavish and none to be economic.”

(ক) সম্পত্তিগত শর্ত আরোপ করে ভোটাধিকারের দাবিকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সম্পত্তিগত যোগ্যতা ভোটাধিকারের ভিত্তি হতে পারে না। এই যুক্তি প্রতিক্রিয়াশীল এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের বিরোধী। প্রাচীনকালের অভিজাত সম্প্রদায় ও সামন্ত শ্রেণীরাই ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে ভোটদানের ভিত্তি হিসাবে গণ্য করতেন। প্রাচীনকালের এই প্রতিক্রিয়াশীল নীতি এখন আর কোনও বিশেষ শ্রেণীর স্বার্থে প্রযুক্ত হতে পারে না। 

(খ) ভোটাধিকার হল একটি রাজনীতিক অধিকার। এর সঙ্গে সম্পত্তিগত শর্ত জুড়ে দেওয়া অযৌক্তিক। সম্পত্তির মালিকানা রাজনীতিক যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না 

(গ) তা ছাড়া বর্তমানে সকল দেশেই দরিদ্রতম ব্যক্তিও কোন-না-কোন পরোক্ষ করের মাধ্যমে সরকারকে কর দেয়। সুতরাং সম্পত্তিগত বিচারে কোনভাবেই সার্বিক ভোটাধিকারের দাবিকে উপেক্ষা করা যায় না। 

(ঘ) তা ছাড়া মানবসমাজে বৈষম্যের মূলে আছে সম্পত্তির অধিকার। আর্থনীতিক বৈষম্যের ভিত্তিতে সুস্থ রাজনীতিক পরিবেশ তৈরি করা যায় না। 

(ঙ) সর্বোপরি সম্পত্তিহীন ব্যক্তিবর্গ দেশের সম্পদের প্রতি দরদী হয় না, এ অভিযোগও অনৈতিহাসিক।

(৪) স্ত্রীলোকের ভোটাধিকার প্রদান অনুচিত:

অনেকে আবার স্ত্রীলোকের ভোটাধিকার প্রদানের বিরোধী। তাঁদের মতে নারী কখনই পুরুষের সমকক্ষ হতে পারে না। উভয়ের কর্মক্ষেত্রের সীমানা নির্দিষ্ট। নারীর কর্মক্ষেত্র গৃহের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের দায়িত্ব হল সন্তান পালন ও অন্যান্য পারিবারিক কর্তব্য সম্পাদন। তারা রাজনীতি বিষয়ে উদাসীন। নারী সহজেই পুরুষের দ্বারা প্রভাবিত হয়। আবার দৈহিক শক্তি বা স্বাধীন চিন্তার ক্ষেত্রে তারা কোনক্রমেই পুরুষের সমকক্ষ হতে পারে না। সুতরাং স্ত্রীলোকের ভোটাধিকার থাকা উচিত নয়। তা ছাড়া নারী সামরিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না এবং শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রেও নারী পুরুষের সমকক্ষ নয়। নারীকে ভোটাধিকার দিলে পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিপন্ন হবে এবং নারীর সুকুমার বৃত্তিগুলি বিনষ্ট হবে।

(ক) নারীত্বের অজুহাতে স্ত্রীলোককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা অযৌক্তিক। কিন্তু নারীত্বের অজুহাতে ভোটাধিকার থেকে স্ত্রীলোককে বঞ্চিত করলে জনগণের অর্ধেক অংশই এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। 

(খ) নারী দৈহিক শক্তিতে পুরুষের সমকক্ষ না হলেও তারা মানসিক বা চিন্তাশক্তিতে পুরুষের সঙ্গে সমতা দাবি করতে পারে। 

(গ) নারীর কর্মক্ষেত্র আজ কেবল গৃহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে সকল ক্ষেত্রেই স্ত্রীলোক পুরুষের সঙ্গে সমানতালে পা ফেলে চলছে। বহু দেশে আজ মহিলা রাজনীতিবিদগণ শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। বিশ্বে ‘নারী বর্ষ’ উদযাপনের মাধ্যমে মহিলাদের উপর আরোপিত যাবতীয় অক্ষমতা দূর হয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই নারী পুরুষের সঙ্গে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা করছে। শ্রমসাধ্য কাজেও তারা আর পিছিয়ে নেই। সুতরাং রাজনীতিক ক্ষেত্র থেকে তাদের বিতাড়িত করা অন্যায় ও অযৌক্তিক। 

(ঘ) সর্বোপরি ভোটাধিকারের ভিত্তি হল নৈতিক, দৈহিক নয়। তাই নারীর ভোটাধিকার স্বীকার করলে পারিবারিক শান্তি এবং নারীর সুকুমার গুণগুলি বিনষ্ট হবে, এ যুক্তি অচল।

(৫) বর্ণবিদ্বেষ নীতি ও তার বিরোধিতা:

অনেকক্ষেত্রে আবার জাতি, বর্ণ, ধর্ম প্রভৃতি কারণেও ভোটাধিকারকে সীমিত করা হয়। তবে এই ব্যবস্থা সাম্যনীতি ও গণতন্ত্রের আদর্শের বিরোধী। এই বিভেদনীতি ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। সেইজন্য গণতন্ত্রের স্বার্থে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকার করে নেওয়া উচিত।

উপসংহার: বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার একটি অপরিহার্য নীতি হিসাবে স্বীকৃত ও বিধিবদ্ধ হয়েছে। এই অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে ভোটাদাতাদের যথেষ্ট সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। ভোটদাতাদের ব্যক্তিগত সংকীর্ণ স্বার্থ উপেক্ষা করে, কোনভাবে প্রভাবিত না হয়ে, বিবেকের নির্দেশ ও স্বাধীন ইচ্ছা অনুসারে উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দেওয়া উচিত। ভোটদাতাদের সুষ্ঠু ও সঠিক কর্তব্য সম্পাদনের উপর গণতন্ত্রের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভরশীল। অভিজ্ঞতাভিত্তিক বিচারবুদ্ধি এবং পরিবেশগত শিক্ষাভিত্তিক সচেতনতা ও বিবেকবোধের উপর নির্ভর করেই ব্যক্তি তার ভোটাধিকারের গুরুদায়িত্ব পালন করবে। এটাই হল প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের গণতান্ত্রিক নীতির সফল প্রয়োগের শর্ত।

Rate this post