গীতি কবিতা ও মহাকাব্য উভয়েই কবিতা নামক শিল্পকর্মের দুটি বিভিন্ন প্রকরণ হলেও উভয়ের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বর্তমান। যেমনㅡ

প্রথমত কবি হৃদয়ের একান্ত ব্যক্তিগত ভাবাবগের প্রকাশ হল গীতি কবিতা, কিন্তু মহাকাব্যে কবির একান্ত ব্যক্তিগত ভাবাবেগ বা অনুভুতি প্রকাশিত হয় না, মহাকাব্যের বিষয় সাধারণত পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক জয়। 

দ্বিতীয়ত মহাকাব্যের পটভূমি হয় বিশাল ব্যাপক বিস্তৃত, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল প্রসারী। কিন্তু গীতিকাব্যের পটভূমির পরিধি তত ব্যাপক হয় না। 

তৃতীয়ত গীতিকাব্যের ভাষা মূলত সহজ সরল ও প্রাঞ্জল হয়ে থাকে। কিন্তু মহাকাব্যের ভাষা হয় ওজস্বী ও গাম্ভীর্যপূর্ণ। 

চতুর্থত মহাকাব্যের যে-কোনো সাহিত্যেরই প্রায় আদি সৃষ্টি। অর্থাৎ প্রাচীনত্বই এর অন্যতম লক্ষণ কিন্তু সে তুলনায় গীতি কবিতা অনেক পরবর্তী কালের সৃষ্টি। 

পঞ্চমত ও শেষ পার্থক্য হিসাবে বলা চলে, গীতি কবিতার আদিম তথা প্রাচীন উদ্দেশ্য ছিল গীত হওয়া, যদিও পরবর্তীকালে এই উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়েছে তবুও একটা সুরের অন্তর্লীন স্পর্শ গীতি কবিতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিচরণ করে, কিন্তু মহাকাব্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য কোনোদিনই গীত হওয়া ছিল না, এবং মহাকাব্যের মধ্যে কোনো সুরের স্পর্শ ও পাঠকের শ্রুতিলোচর হয় না।

Rate this post