ভারতে ঋগবৈদিক যুগে আর্য সমাজে বর্ণপ্রথা প্রচলিত ছিল।

[1] উদ্ভব: অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, ভারতে আগমনের পূর্বে আর্যসমাজে বর্ণপ্রথা প্রচলিত ছিল না। আর্যরা ভারতে আসার পর ঋগবৈদিক যুগে আর্যসমাজে বর্ণপ্রথার প্রচলন ঘটে।

[2] সামাজিক ক্ষেত্র: প্রাচীন ভারতে বর্ণপ্রথা মূলত আর্যদের সমাজেই প্রচলিত হয়েছিল। আর্যসমাজের বাইরে অবস্থানকারী জনসমাজে এই প্রথার প্রচলন ছিল না।

[3] ভিত্তি: বৈদিক বর্ণপ্রথা মূলত বৃত্তি বা কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। যাগযজ্ঞ পূজার্চনার পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ ব্রাহ্মণ, দেশশাসক ও যােদ্ধারা ক্ষত্রিয়, ব্যাবসায়ীরা বৈশ্য এবং উপরিউক্ত তিন বর্ণকে সেবাদানকারীরা শূদ্র বলে পরিচিত হত। ধীরে ধীরে বর্ণব্যবস্থা একটি শ্রেণিবাচক ধারণায় পরিণত হয়।

[4] জাতিব্যবস্থার ভিত্তি: প্রাচীনকালে ঋগবৈদিক যুগের‌ বর্ণপ্রথা থেকে পরবর্তীকালে ভারতীয় সমাজে জাতিব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে।

অনেক সময়ই ‘বর্ণ’ ও ‘জাতি’ শব্দ দুটিকে অভিন্ন অর্থে প্রয়ােগ করা হলেও ‘বর্ণ ও জাতি দুটি পৃথক সত্তা। তাই স্বাভাবিকভাবেই রীতিনী বর্ণ ও জাতির মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি হল一

বর্ণ

  • বৈদিক যুগের প্রথমদিকে চারটি বর্ণকে কেন্দ্র করে মাত্র চারটি জনগােষ্ঠীর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় তখনও পর্যন্ত জাতির উদ্ভব হয়নি।

  • বর্ণপ্রথায় ক্রমানুসারে চারটি বর্ণ হল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্র। এক্ষেত্রে সর্বত্র এই ক্রমপর্যায়টি একই রকম- এ নিয়ে কোনাে বিভ্রান্তি নেই।

  • বর্ণপ্রথায় অস্পৃশ্যতার অস্তিত্ব ছিল না। বর্ণগুলি ছিল মুক্ত ও উদার যােগ্যতা অনুসারে কেউ এক বর্ণ থেকে অন্য বর্ণে উন্নীত হতে পারত।

জাতি

  • পরবর্তীকালে বৈদিক সমাজে নতুন নতুন পেশার সৃষ্টি হলে পুরােনাে বর্ণভিত্তিক জনগােষ্ঠীগুলি থেকেই নতুন নতুন জনগােষ্ঠীর সৃষ্টি হয়।

  • জাতিপ্রথায় প্রথম বর্ণ ব্রাহ্মণ এবং চতুর্থ বর্ণ শূদ্রকে নিয়ে সমস্যা না থাকলেও অন্য দুটি জাতি এক অঞ্চলে বৈশ্য কিন্তু অন্য অঞ্চলে ক্ষত্রিয় বলে বিবেচিত হতে হত।

  • কিন্তু জাতিব্যবস্থায় অস্পৃশ্যতার অস্তিত্ব অবশ্যই ছিল। জাতিগুলি মুক্ত বা উদার ছিল না এবং জাতিভেদভিত্তিক সমাজ ছিল স্থবির।

  • ভারতের সামাজিক স্তরবিন্যাস করার ক্ষেত্রে বা গবেষণামূলক কাজের ক্ষেত্রে জাতিব্যবস্থার গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি।

Rate this post