পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকগুলি সমস্যা লক্ষ করা যায়। এইসব সমস্যার সমাধান করতে না পারলে, আগামী দিনে এই শিক্ষার অগ্রগতি পদে পদে ব্যাহত হবে। এই শিক্ষার উল্লেখযােগ্য সমস্যাগুলি হল一

(১) বিদ্যালয়ের অভাব: মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গে নেই। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব একটি বড়াে সমস্যা।

(২) শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব: মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে‌ আজও শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব লক্ষ করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই বছরের সবসময়ই কয়েকটি শিক্ষকপদ শূণ্য থাকায় শিক্ষাদান ও গ্রহণ ব্যাহত হয়।

(৩) উপযুক্ত পাঠক্রমের অভাব: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠক্রম আজও বাস্তবকেন্দ্রিক নয়। তত্ত্বভারাক্রান্ত পাঠক্রমে শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

(৪) আর্থিক সমস্যা: পশ্চিমবঙ্গে বহু ছাত্রছাত্রী আর্থিক সমস্যার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টিউশন ফি কম হলেও অন্যান্য ফি এবং শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করা ব্যয়বহূল হয়ে পড়েছে।

(৫) বিভিন্ন শিক্ষাস্তরের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব: মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমের সঙ্গে শিক্ষার অন্যান্য স্তরগুলি। সঠিকভাবে যুক্ত করার ব্যবস্থা না থাকায়, মাধ্যমিক শিক্ষা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

(৬) অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা: আমাদের দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা সংকীর্ণ, তাত্ত্বিক পুথিনির্ভর। বাস্তবজীবনের সঙ্গে এর খুব একটা যােগ নেই। এই শিক্ষা গ্রহণ করেও বছু ছাত্রছাত্রী বেকার হয়ে জীবন কাটায়, ফলে এই শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় নয়।

(৭) পাঠ্যপুস্তকের সমস্যা: মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য- পুস্তকগুলির দাম বেশি হওয়ায় বহু ছাত্রছাত্রী তা কিনতে পারে না, ফলে শিক্ষার কাজ ব্যাহত হয়।

(৮) মূল্যায়নের সমস্যা: আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কি না, তা মূল্যায়নে গতানুগতিক লিখিত পরীক্ষা ব্যর্থ।

মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত, তা হল

  • এই শিক্ষার পাঠক্রম প্রণয়ন করার সময় শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং সমাজের প্রয়ােজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সময়ের সাপেক্ষে পাঠক্রম সংস্কার করতে হবে।

  • অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য শিক্ষা-সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

  • শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিক মনােবিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়ােগ করতে হবে। যথাসম্ভব প্রকল্পনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।

  • উপযুক্ত সংখ্যক বিদ্যালয় ভবন স্থাপন করতে হবে। জল, আলাে, বাতাস এবং শৌচাগারের সুব্যবস্থা করতে হবে।

  • বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যানুযায়ী গ্রন্থাগার, পরীক্ষাগার, শিক্ষাসহায়ক উপকরণ, শ্রেণিকক্ষ প্রভৃতির সুব্যবস্থা করতে হবে।

  • শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিকে নিশ্চিত করতে হবে।

উপরিউক্ত কর্মসূচি ছাড়াও ছাত্র ভরতির ব্যাপারে মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ছাত্র-বিশৃঙ্খলা রােধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ভাষাগত সমস্যার সমাধান করতে হবে। এইসব বিষয়ের প্রতি যত্ন নিলে, আগামী দিনে মাধ্যমিক শিক্ষা অনেকটা ত্রুটিমুক্ত হবে।

Rate this post