গোঁড়া মুসলমানগণ নারীশিক্ষাকে সমাজের পক্ষে হানিকর বলে মনে করলেও মধ্যযুগের মুসলমান শাসকরা এবং মনীষীগণ নারীশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহম্মদও নারীশিক্ষাকে আবশ্যিক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে পর্দাপ্রথার প্রচলন হওয়ায় নারীশিক্ষা অনেকখানি সংকুচিত হয়। নীচে মধ্যযুগের নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আলােচনা করা হল一

(১) অন্দরমহলে শিক্ষা: মধ্যযুগে নারীশিক্ষার বিকাশের জন্য বিশেষ কোনাে বিদ্যালয় ছিল না। এমনকি সাধারণ বিদ্যালয়েও নারীদের শিক্ষার জন্য কোনাে ব্যবস্থা ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্দরমহলের মধ্যে মেয়েদের পঠনপাঠন করতে হত। তারা ঘরে বসেই ‘কোরানের সুরা’ আবৃত্তি করত। সে যুগের হিন্দু জমিদার ও অভিজাত সম্প্রদায়ের লােকেরা নিজের গৃহেই কন্যাসন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করতেন।

(২) শিক্ষক: মধ্যযুগে উচ্চবংশের মেয়েদের অন্দরমহলে শিক্ষার জন্য ‘উলেমা’ এবং চারুকলা শিক্ষার জন্য ‘ওস্তাদ নিয়ােগ করা হত। রাজপরিবারে মহিলাদের জন্য শিক্ষিকা নিয়ােগ করা হত। ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান গিয়াসুদ্দিন হারেমের মহিলাদের শিক্ষার জন্য ‘শিক্ষিকা’ নিয়ােগ করেছিলেন।

(৩) পৃথক নারী শিক্ষালয় স্থাপন: মধ্যযুগে কোনাে কোনাে সম্রাট স্ত্রীশিক্ষার প্রসারের জন্য ‘জেনানা বিদ্যালয়’ অর্থাৎ পৃথক নারী-শিক্ষালয় স্থাপন করেন। ফতেপুরসিক্রিতে সম্রাট আকবর স্ত্রীশিক্ষার জন্য অন্তঃপুরে মাদ্রাসা স্থাপন করেন। শিক্ষিতা মহিলাগণ সেখানে কাব্য, সাহিত্য ও কলা শিল্পের চর্চা করতেন।

(৪) বিদুষী নারী: মধ্যযুগে বেশ কয়েকজন বিদুষী নারীর কথা জানা যায়, যারা সাহিত্যচর্চা করতেন, এঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেনফতেমা, হামিদা, সােফিয়া, সুলতানা রাজিয়া, বাবরকন্যা গুলবদন বেগম, শাহজাহানকন্যা জাহানারা বেগম। এছাড়া মধ্যযুগে কয়েকজন বিদুষী হিন্দু নারীরও সন্ধান পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে রানি দুর্গাবতী ও মীরাবাঈ খুবই প্রসিদ্ধ ছিলেন।

(৫) নারীশিক্ষার অধোগতি: মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে নারীশিক্ষার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ইসলামিক অনুশাসনে হিন্দুধর্ম ও সমাজ রক্ষণশীলতার আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। ফলে হিন্দু নারীদের শিক্ষাও সংকুচিত হয়। কেবল কিছু সংখ্যক বিত্তবান ও অভিজাত পরিবারে নারীশিক্ষার ক্ষীণ ধারা অব্যাহত থাকে।

Rate this post