মৌর্য ও ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্য ছিল প্রাচীন বিশ্বের দুটি সুবৃহৎ ও শক্তিশালী সাম্রাজ্য। এই দুটি সাম্রাজ্য বেশ কিছুকাল একই সঙ্গে অস্তিত্ববান ছিল। রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে উভয় সাম্রাজ্যের মধ্যে কোনাে কোনাে বিষয়ে সাদৃশ্য এবং কোনাে কোনাে বিষয়ে বৈশাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। নীচে মৌর্য ও ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতির তুলনামূলক আলােচনা করা হল一

মৌর্য সাম্রাজ্য

  • প্রাচীন ভারতে ষােড়শ মহাজনপদের মধ্যে অন্যতম মহাজনপদ মগধকে কেন্দ্র করে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে।

  • মৌর্য সাম্রাজ্যের উল্লেখযােগ্য কীর্তিমান শাসক ছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (৩২৪-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ও সম্রাট অশােক (২৭৩-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)।

  • চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধের সিংহাসনে বসার পর সিন্ধু ও পাঞ্জাব অঞ্চল থেকে গ্রিকদের বিতাড়িত করেন। তিনি উত্তর-পশ্চিমে কাবুল থেকে দক্ষিণে কর্ণাটকের তিনেভেলি পর্যন্ত এবং পশ্চিমে আরব সাগর থেকে পূর্বে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান। পরবর্তীকালে অশােক কলিঙ্গ রাজ্যটি দখল করেন।

  • মৌর্য সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন সম্রাট অশােক। সাম্রাজ্য প্রসারের তুলনায় সাম্রাজ্য রক্ষা, মানবিক উদ্দেশ্যে ধর্মপ্রচার, জনকল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি অনেক বেশি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

  • মৌর্য সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি প্রধানত ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল। ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের আয়তনের তুলনায় মৌর্য সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল অনেক কম।

  • মৌর্য প্রশাসনের সর্বময় কর্তা ছিলেন সম্রাট। সমগ্র সাম্রাজ্য বিভিন্ন প্রদেশে, প্রদেশগুলি বিভিন্ন বিষয় বা আহর বা জেলায়, জেলাগুলি বিভিন্ন গ্রামে বিভক্ত ছিল।

  • মৌর্য সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ১৮৭ (মতান্তরে ১৮৫) খ্রিস্টপূর্বাব্দে সর্বশেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে মগধের সিংহাসনে বসলে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্য

  • দক্ষিণ বলকান অঞ্চলকে কেন্দ্র করে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকের মধ্যে ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।

  • ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের উল্লেখযােগ্য কীর্তিমান শাসক ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ (৩৫৯-৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ও সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডার (৩৩৬ -৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)।

  • ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের প্রকৃত সম্প্রসারণ শুরু হয় সম্রাট | দ্বিতীয় ফিলিপের রাজত্বকাল থেকে। তিনি ইলিরিয়া, সে ও অন্যান্য গ্রিকরাজ্য দখল করেন। পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র তৃতীয় আলেকজান্ডার পারস্য জয় করেন এবং ইউরােপ, আফ্রিকা ও ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ পর্যন্ত সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান।

  • ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডার। তিনি প্রধানত সামরিক দক্ষতা এবং সাম্রাজ্যবিজেতা হিসেবে কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।

  • ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্য গ্রিক ভূখণ্ডের সীমানা অতিক্রম করে বহুদূর বিস্তৃত হয়েছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের তুলনায়। ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল অনেক বেশি।

  • ম্যাসিডনীয়ার প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন সম্রাট। সমগ্র সাম্রাজ্য বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত ছিল। প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তরে ছিল বিভিন্ন শহর ও গ্রাম।

  • ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ছিল অন্তত ৬৬২ বছর (৮০৮-১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। অর্থাৎ মৌর্য সাম্রাজ্যের তুলনায় ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব অনেক বেশি ছিল।

Rate this post