প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস ব্যবস্থা সেখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিল। রােমের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর রাষ্ট্রেরও বিভিন্ন কাজ করত।

[1] গৃহকার্য: ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর পরিবারের যাবতীয় কাজ করে দিত। পরিবারের রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি গৃহের যাবতীয় কাজ ক্রীতদাসদের করতে হত। ফলে প্রভুর পরিবারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসিতা বৃদ্ধি পেত।

[2] কৃষি ও খামারের কাজ: ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর কৃষিকাজে নিযুক্ত থেকে খাদ্যশস্য ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করত। রােমান সাম্রাজ্যের শহরগুলি ক্রীতদাসদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

[3] ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজ: ক্রীতদাসরা প্রভুর অনুপস্থিতিতে প্রভুর দোকান পরিচালনা করত, ক্ষৌরকর্ম করত, সুদে টাকা ধার দিত ইত্যাদি।

[4] নির্মাণকার্য: ক্রীতদাসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সাধারণ গৃহ, অট্টালিকা, পাকা পয়ঃপ্রণালী, রাস্তাঘাট, মল্লভূমি বা ক্রীড়াক্ষেত্র, সেতু প্রভৃতি নির্মাণ করা। এইসব পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি ক্রীতদাসরা সম্পন্ন করার ফলে রােম যেমন। সুন্দরভাবে সেজে উঠেছিল।

[5] কর্মকারের কাজ: ক্রীতদাসরা কাঠ মিস্ত্রি এবং কামার হিসেবেও কাজ করত। তারা বিভিন্ন ভাঙা সামগ্রী, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি সারাই করত, ভেড়ার লােম পাকিয়ে বিভিন্ন বস্ত্র উৎপাদন করত।

[6] সৈন্যবাহিনীতে কাজ: শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য বন্দি হয়ে রােমে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল। এরূপ ক্রীতদাসদের অনেককেই যােদ্ধা হিসেবে রােমান সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হত।

অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ করা, প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ফলে তাদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল।

[1] বিক্রি ও হত্যা: ক্রীতদাসরা ছিল তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। প্রভু ইচ্ছা করলে তাদের বাজারের পণ্যের মতাে বিক্রি করতে বা পশুর মতাে হত্যাও করতে পারত।

[2] শারীরিক নির্যাতন: ক্রীতদাসের মালিক তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে দিয়ে বেশি কাজ করানাের উদ্দেশ্যে তার ওপর সর্বদা শারীরিক নির্যাতন চালাত। এর ফলে ক্রীতদাসের দেহে সারা বছরই ঘা ও কালচে দাগ হয়ে থাকত।

[3] শৃঙ্খলিত পশুর জীবন: ক্রীতদাসরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য বাড়ির গৃহপালিত পশুর মতাে ক্রীতদাসের হাতে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত।

[4] পতিতাবৃত্তিতে নিয়ােগ: কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রভুরা তাদের অধীনস্থ ক্রীতদাসীদের পতিতালয়ে বিক্রি করে যুবতী ক্রীতদাসীদের পতিতাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করত।

[5] পালানোর চেষ্টার শাস্তি: কোনাে ক্রীতদাস পালানাের চেষ্টা করলে তাকে চাবুক দিয়ে পেটানাে বা উত্তপ্ত লােহার ছ্যাকা দেওয়া হত।

[6] গ্ল্যাডিয়েটরের জীবন: রােমের নাগরিকদের আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে গ্ল্যাডিয়েটর নামের ক্রীতদাস-যােদ্ধাদের ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর সঙ্গে লড়তে হত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্ল্যাডিয়েটরদের মৃত্যু হত।

[7] ক্রীতদাস পরিবারের দুর্ভোগ: ক্রীতদাসের পরিবারের সদস্যরাও প্রভুর দাসে পরিণত হত এবং তারাও একই ধরনের শাস্তি ও নির্যাতন ভােগ করত।

উপসংহার: সর্বদা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার এসব ক্রীতদাসদের জীবন ছিল অন্ধকারে ঢাকা। তবে বিরল ক্ষেত্রে প্রভু ও ক্রীতদাসের ভালাে সম্পর্কও দেখা যেত।

Rate this post