সামন্তপ্রভুরা নিজ নিজ অঞ্চল শাসন করার উদ্দেশ্যে সেখানে দুর্গের মতাে করে নিজের সুরক্ষিত প্রাসাদটি নির্মাণ করতেন। এই দুর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল一

[1] অবস্থান: বহিরাগত শত্রুর ওপর নজর রাখার সুবিধার্থে সামন্তপ্রভুদের অধিকাংশ দুর্গ কোনাে ক্ষুদ্র পাহাড় বা উচ্চভূমির ওপর নির্মিত হত। সমতলভূমিতে নির্মিত দুর্গুলি প্রাচীর-বেষ্টিত হত এবং প্রাচীরকে বেষ্টন করে থাকত জলের গভীর পরিখা।

[2] নির্মাণকৌশল: পাথর দিয়ে তৈরি এই দুর্গগুলির দেয়ালে ছােটো ছােটো ফুটো থাকত যেগুলির মধ্য দিয়ে বহিরাগত শত্রুর গতিবিধির দিকে নজর রাখা এবং শত্রুকে লক্ষ করে তির, বর্শা, বল্লম ইত্যাদি নিক্ষেপ করা যেত। দুর্গের শিখরে গম্বুজের মতাে অংশ থেকে দূরের শত্রুকে লক্ষ করে তীব্র আঘাত হানাও যেত।

[3] তােরণ: দুর্গের প্রধান তােরণের পরিখার ওপর একটিমাত্র টানা সেতু থাকত যার দ্বারা দুর্গের ভারী লােহার দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যেত। শত্রুর আক্রমণের সময় টানা সেতু তুলে নিয়ে দুর্গের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া যেত।

[4] দুর্গের স্বাচ্ছন্দ্যহীন জীবন: দুর্গের ভিতরকার জীবনযাত্রা খুব একটা আরামদায়ক ছিল না। ছােটো জায়গায় একসঙ্গে অনেকে বাস করতে হত। কোনাে কোনাে দুর্গের মধ্যে আমােদ প্রমােদের ব্যবস্থা থাকলেও তা ছিল যৎসামান্য ও একঘেয়ে।

[1] মধ্যযুগের দুর্গগুলি বহিরাগত দুর্ধর্ষ আক্রমণকারীদের (যেমনভাইকিং, স্যারাসেন, ম্যাগিয়ার) হাত থেকে ইউরােপকে রক্ষা করেছিল। [2] মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে দুর্গগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। [3] এগুলি সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে কাজ করেছিল।

প্রতিটি ম্যানরে জমিদার বা সামন্তপ্রভুর বাসস্থান বা প্রাসাদটি ছিল এক দুর্গবিশেষ। এই প্রাসাদে ম্যানর প্রভুর বাসকক্ষ, তার কর্মচারীদের থাকার ঘর, খাবার ঘর, প্রার্থনা কক্ষ, আন্তাবল প্রভৃতি ছিল। এই প্রাসাদ-দুর্গের বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল—

[1] ঘরের অভ্যন্তর: প্রাসাদে আসবাবপত্র খুবই কম থাকত। ট্যাপেস্ট্রি নামে কারুকার্য করা ভারী কাপড়ের পর্দা দেয়ালে ঝােলানাে থাকত এবং দেয়ালে ঢাল, তরােয়াল, বর্শা, অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র, শিকার করে আনা সামগ্রী প্রভৃতি সাজানাে থাকত। ঘর উত্তপ্ত করার জন্য ছিল চুল্লির ব্যবস্থা।

[2] খাবার ঘর: প্রাসাদের কেন্দ্রস্থলে থাকত বৃহদাকার। খাবার ঘর, যেখানে মশাল ও মােমবাতি জ্বেলে ভােজসভার আয়ােজন করা হত। ভােজের আয়ােজনে বিপুল পরিমাণ ষাঁড় ও শূকরের মাংস, মদ প্রভৃতি ছাড়াও আপেল, পেয়ারা, শালগম, বিট প্রভৃতির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকত।

[3] সুরক্ষা: সুরক্ষার কথা ভেবে প্রাসাদ-দুর্গগুলি বিশেষভাবে তৈরি করা হত। কক্ষগুলি ছিল অন্ধকার ও স্যাতসেঁতে, কারণ প্রাসাদে কোনাে জানালা না রেখে দেয়ালে কতকগুলি ছিদ্র রাখা হত যেগুলির মাধ্যমে আক্রমণকারীদের দিকে তীর, বর্শা ইত্যাদি নিক্ষেপ করা যেত।

[4] চিত্তবিনােদন: প্রভু ও অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষ অবসর বিনােদন, আমােদ-প্রমােদের জন্য প্রাসাদ-দুর্গের অভ্যন্তরে ও বাইরে পাশা খেলা, দাবা খেলা, নাচ-গান, শিকার, কৃত্রিম যুদ্ধ প্রভৃতিতে অংশ নিয়ে সীমাহীন সুখে ও বিলাসিতায় জীবন কাটাত।

উপসংহার: ম্যানর- প্রভু ও তার লােকজন ম্যানর হাউস ও গির্জাকে কেন্দ্র করে সারা বছর শিকার, যুদ্ধ ও বিভিন্ন আনন্দফুর্তি করে অত্যন্ত বিলাসিতায় দিন কাটাত। অন্যদিকে ম্যানর অঞ্চলে বসবাসকারী শােষিত ও নির্যাতিত সাধারণ কৃষক ও ভূমিদাসরা অত্যন্ত অনাদরে ভগ্ন কুটিরে, ছিন্ন বস্ত্রে জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হত।

Rate this post