আধুনিক অর্থনীতিতে পরিবহণের গুরুত্ব সর্বাধিক। গুরুত্বের প্রকৃতি অনুযায়ী পরিবহণের প্রভাবকে তিনভাগে ভাগ করা যায়- [1] অর্থনৈতিক গুরুত্ব, [2] রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং [3] সামাজিক গুরুত্ব।
[1] অর্থনৈতিক গুরুত্ব
-
কৃষির উন্নতি : কৃষিব্যবস্থার সম্প্রসারণ, কৃষির আধুনিকীকরণ, এবং কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়ােজন হয় উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার
-
শিল্পের উন্নতি : শিল্পের অবস্থান নির্ণয়ে, কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্যকে বাজারে পাঠানাের জন্যও প্রয়ােজন উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার।
-
প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে সুবিধা : প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে তার উৎস অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করতে পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়ােজন হয়।
-
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার : কোনাে দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে সেই দেশ তত অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উন্নত হবে।
-
কর্মসংস্থান সৃষ্টি : পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং সেইসমস্ত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া পরিবহণ মাধ্যমের সাথে যুক্ত হয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান ঘটে।
-
প্রতিযােগিতামূলক বাজার সৃষ্টি : পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন বাজারের সৃষ্টি হয় এবং প্রতিযােগিতামূলক বাজারের উদ্ভব ঘটে।
-
জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি : পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলে অর্থনীতির সমস্ত ক্ষেত্রই বিকাশলাভ করে। এর ফলে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
[2] রাজনৈতিক গুরুত্ব
-
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে : দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সৈন প্রেরণ, খাদ্য ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ প্রভৃতিতে পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব সর্বাধিক।
-
ত্রাণ কাজে : প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দুর্যোগপীড়িত অঞ্চলে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে এবং উদ্ধারকাজ চালাতে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
[3] সামাজিক গুরুত্ব
-
শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নতি : কোনাে একটি দেশ বা অঞ্চলের শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতিতে পরিবহণ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলির প্রসারও দ্রুত হয়।
-
আঞ্চলিক অনগ্রসরতা দূরীকরণ : অনগ্রসর অঞ্চলগুলিকে পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অগ্রসর অঞ্চলগুলির সাথে যুক্ত করে অনগ্রসরতা দূর করার চেষ্টা করা হয়।
-
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে : পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নত অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী অনুন্নত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অভিযােজিত হয় এবং জীবনযাত্রা প্রণালীর পরিবর্তন ঘটে।
ভারতের জাতীয় সড়কপথ সংস্থা (National Highway Authority of India) চার চ্যানেলবিশিষ্ট রাজপথ নির্মাণ ও ভারতের বিভিন্ন বন্দরগুলিকে রাজপথ দ্বারা সংযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটিই বন্দর সংযােজক পরিকল্পনা নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী হলদিয়া, পারাদীপ, বিশাখাপত্তনম, চেন্নাই, এন্নোর, তুতিকোরিন প্রভৃতি বন্দরগুলিকে রাজপথ দ্বারা যুক্ত করার কাজ চলেছে।