আমেরিকান ভূবিজ্ঞানী উইলিয়াম মরিস ডেভিস 1899 খ্রিস্টাব্দে ক্ষয়চক্রের মতবাদটি প্রবর্তন করেন।

মরু অঞলে যে ক্ষয়চক্র কার্যকারী হয়, তাকে শুষ্ক ক্ষয়চক্র বলে।

নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে পুরাতন উপত্যকার মধ্যে নতুন উপত্যকা গঠিত হলে, তাকে উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বলে।

পৃথিবীর প্রায় 70% জায়গায় নদীর ক্ষয়চক্র পরিলক্ষিত হওয়ায় একে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলে।

নদীর সর্বনিম্ন ক্ষয়কাজের সীমা অর্থাৎ যে সীমার নীচে নদীর ক্ষয়ক্ষমতা কমে, তাকে নদী ক্ষয়ের নিম্নসীমা বলে।

যে তত্ত্বের সাহায্যে প্রকৃতিতে নির্দিষ্ট নিয়মে সংঘটিত প্রক্রিয়া বা ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা যায়, সেই তত্বকে নিয়মতত্ব বলে।

শুষ্ক মরু অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশ এবং বাজাদার উচ্চঢালে নদী দ্বারা অপসারিত মৃদু ঢালযুক্ত শিলাময় ভূমিভাগকে গিলবার্ট পেডিমেন্ট নামে অভিহিত করেন।

উত্থানের পর ক্ষয়কার্য শুরু হওয়া থেকে কোনাে রকম অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে অপ্রতিহতভাবে সর্বশেষ পরিণতির দিকে গেলে তাকে ক্ষয়চক্রের আবদ্ধ নিয়মতত্ত্ব বলে।

পূর্ণতাপ্রাপ্তির আগেই কোনাে ক্ষয়চক্র অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হলে সেই ধরনের নিময়তত্তবকে ক্ষয়চক্রের উন্মুক্ত নিয়ম তত্ত্ব বলে।

ভৌমজলের উপরিতলকে মরু অঞ্চলে ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা ধরা হয়।

ক্ষয়চক্রকে সাধারণত 5টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা (i) নদীর ক্ষয়চক্র বা স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র, (ii) শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র, (iii) কাস্ট অঞ্চলের ক্ষয়চক্র, (iv) সামুদ্রিক ক্ষয়চক্র ও (v) হৈমবাহিক ক্ষয়চক্র।

ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় নতুন একটি ক্ষয়চক্র প্রক্রিয়ার শুরু হওয়াকে ক্ষয়চক্রের পুনরুজ্জীবন বলে।

স্ট্যান্ডার্ড এপিজেন সাইকেল (Standard Epigene Cycle) মডেলটির প্রবর্তক এল. সি. কিং।

ইনসেলবার্জের নামকরণ করেন এস. প্যাসার্জ।

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর কার্যের ফলে যে বৈচিত্র্যহীন সমপ্রায় ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পেনিপ্লেন বলে।

নদী স্বাভাবিক গতির চেয়ে সামান্য তীব্র গতিতে সিঁড়ির মতাে ছােটো ছােটো ধাপে নীচে নেমে এলে তাকে র্র্যাপিড বা খরস্রােত বলে।

শুষ্ক ক্ষয়চক্র অঞ্চলে অবশিষ্ট টিলা ইনসেলবার্জ নামে পরিচিত।

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে সমপ্রায় ভূমির ওপর অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলায় গঠিত বা কম ক্ষয়প্রাপ্ত স্বল্প উচ্চ ঢিবির মতাে অবশিষ্ট পাহাড়গুলিকে মােনাড়নক বলে।

ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে ভূমিভাগটি একটি নাতিউচ্চ সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়, যাকে এনড্রাম্ফ বলে।

ভূমিরূপের বিবর্তনের শুরুতে কম উচ্চতা ও বন্ধুরতাযুক্ত নীচু সমতলভূমিকে পেঙ্ক প্রাইমারাম্ফ নামে অভিহিত করেছেন।

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য অবস্থায় সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।

ইনসেলবার্জ সাধারণত গ্রানাইটজাতীয় শিলায় গড়ে ওঠে।

নদী অদৃশ্য হলেও জল চুইয়ে চুইয়ে উপত্যকার মধ্যভাগে সঞ্চিত হয়ে অগভীর প্লায়া হ্রদ সৃষ্টি হয়।

কোনাে সবল নদী শীর্ষমুখী ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে দুর্বল নদীটিকে নিজের খাতে প্রবাহিত হতে বাধ্য করলে তাকে নদী গ্রাস বলে।

পুনর্যৌবনলাভের ফলে নদী যখন মস্তক ক্ষয় করতে থাকে তখন নদী গ্রাস ঘটে।

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের যৌবন পর্যায়ে নদী গ্রাস ঘটে।

মরু ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে গঠিত সমপ্রায় ভূমিকে পেডিপ্লেন বলে।

ডেভিসের মতে নদীর কাজ স্বাভাবিক ক্ষয়চক্ৰকের নিয়ন্ত্রক।

যুগল ও অযুগল নদীমঞ্চ নদীর পুনর্যৌবন লাভের সাক্ষ্য বহন করে।

এল, সি, কিং-এর ক্ষয়চক্র মতবাদটি প্রধানত শুষ্ক এবং প্রায় শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

পললের পরিবর্তে নদীমঞ্চ যদি শিলা গঠিত দ্বারা গঠিত হয়, তাকে প্রস্তরশয্যা নদীম বলে।

ক্ষয়চক্রের পরিণত পর্যায়ে নদী উপত্যকার ঢাল পর্যায়িত হলে প্লাবনভূমি সৃষ্টি হয়।

ডেভিসের ক্ষয়চক্র সময়নির্ভর প্রক্রিয়া।

ডেভিসের মতে, সমুদ্রব থেকে ভূমিভাগের উত্থান উল্লম্ব ও দ্রুতভাবে ঘটবে।

ডেভিসের পূর্বশর্ত অনুযায়ী ক্ষয়কাজ শুরু হওয়ার পূর্বে ভূমিভাগটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান করবে।

ডেভিসের মতে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের যৌবন পর্যায়ে ভূমির উত্থান স্তব্ধ হয়ে যায়।

কোনাে ভূমিরূপের সম্ভাব্য স্থিতিশক্তি ভূমিরূপটির ভর, প্রযুক্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং তার উচ্চতার ওপর নির্ভর করে।

ডেভিসের ক্ষয়চক্র তত্ত্বটি আবদ্ধ প্রণালীর ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।

ডেভিসের ক্ষয়চক্র ধারণা অনুসারে উত্থান পর্ব শেষ হলে ক্ষয়পর্ব শুরু হয়।

সমুদ্রজলতলের দীর্ঘমেয়াদি উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলে নিমজ্জনের ঘটনা হল ক্ষয়ের শেষ সীমার ধনাত্মক পরিবর্তন।

নদীর স্রোতের মধ্যে বাহিত প্রস্তরখণ্ডের আঘাতে নদীগর্ভে গােলাকার গর্ত সৃষ্টি হলে, সেই গর্তগুলিকে মন্থকূপ বলে।

মরু অঞ্চলে গােলাকার ইনসেলবার্জকে বাের্নহার্ট বলে।

শুষ্ক অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদী অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ গিরিখাত সৃষ্টি করলে তাকে ক্যানিয়ন বলে। 

নদীর গতিপথে জলপ্রবাহের আকস্মিক উল্লম্ব বা প্রায় উল্লম্ব পতনকে জলপ্রপাত বলে।

পর্বতের পাদদেশে ঢালের উধ্বাংশে অবস্থিত বালি ও পলির হালকা আস্তরণ অংশটিকে পেডিমেন্ট বলে।

নদীর প্রবাহপথের যে ঢাল বরাবর ক্ষয়, পরিবহণ ও সঞ্চয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি হয়, তাকে পর্যায়িত ঢাল বলে।

নিক বিন্দু গঠন ক্ষয়চক্রের নদীর পুনর্যৌবন লাভের ঘটনাকে নির্দেশ করে।

ভূ-আলােড়নের ফলে ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে অথবা সমুদ্রপৃষ্ঠের পতন ঘটলে নদীর ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা বেড়ে গিয়ে নদীর পুনর্যৌবন লাভ ঘটে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান অবনমন ছাড়াই নদী গ্রাস, নদীর বােঝা হাস, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে নদীর নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা বেড়ে গেলে স্থিতিশীল পুনর্যৌবন লাভ ঘটে।

ভূ-আলােড়নের ফলে ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে নদী পুনর্যৌবন লাভ করলে তাকে গতিময় পুনর্যৌবন লাভ বলে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের অবনমনের মাধ্যমে নদীর যে পুনর্যৌবন লাভ ঘটে, তাকে ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবন লাভ বলে।

পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত নদী উপত্যকা যে বিন্দুতে প্রবীণ উপত্যকায় মিলিত হয় তাকে নিক বিন্দু বলে।

নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে কর্তিত বা খােদিত নদীবাঁকের উৎপত্তি হয়।

কোনাে ভূমিভাগের উত্থান ও ক্ষয়সাধনের প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে আবর্তিত হলে সেই প্রক্রিয়াকে ক্ষয়চক্র বলে।

স্থলভাগের বেশিরভাগ স্থানের ভূমিরূপ নদীর মাধ্যমে গঠিত ও পরিবর্তিত হয় বলে, নদীর দ্বারা সম্পন্ন ক্ষয়চক্রকে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলে।

আবহবিকার, ক্ষয়ীভবন, নদী, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তিগুলির ভূমিরূপ গঠনের কাজকে ক্ষয়চক্রে প্রক্রিয়া বলে।

কোনাে অঞ্চলের শিলার কাঠিন্য, নতি, ভাজ, চ্যুতি, প্রবেশ্যতা ইত্যাদিকে ক্ষয়চক্রে গঠন বলে।

সময়ের ব্যবধানে ভূমিরূপের যে পরিবর্তন ঘটে তার এক-একটিকে ডেভিস পর্যায় নামে অভিহিত করেছেন।

যে ভূমিভাগের ওপর একাধিক ক্ষয়চক্রের সুস্পষ্ট নিদর্শন থাকে, তাকে পলিসাইক্লিক ল্যান্ডস্কেপ বলে।

Rate this post