উত্তরঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটির তথ্যমতে দাদাসাহেব বড়বাড়ির প্রধান মুরুব্বি। দীর্ঘ প্রশস্ত মানুষ, প্রৌঢ়-বয়সেও মুখভরা একরাশ কালাে দাড়ি। তবে চুল- গোঁফ সুন্নত অনুযায়ী ছােটো করে ছাঁটা।
বছরখানেক হলাে দাদাসাহেব চাকরি থেকে বাড়ি প্রত্যাবর্তন করেছেন। তার পূর্বে তিনি সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন বলে কেবল ছুটি-ছাটাতেই দেশে আসতেন। সারাজীবন চাকরি করেছেন কিন্তু চাকরিতে তার কোনােদিন মন ছিল না। সেখানে তিনি মাজহাব-শরিয়ত নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। চাকরিজীবন শেষ হলে তার মনে হয়েছিল হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। অবশেষে তিনি নিজের সময়ের মােল আনা মালিক হলেন, তাতে আর কারাে হিস্যা থাকলাে না। চাকরিজীবনে মনিবের বিধর্মীতায় দাদাসাহেবকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল। তিনি বাড়িতে এসে প্রথম সপ্তাহে নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে কেউ যেন এক লােকমা না তােলে এবং শীঘ্র হুকুম দিয়েছিলেন কারাে একটি নামাজ যেন কাজা না হয়। বাড়িতে ঈমানের অর্থ, কুরআন পাঠ, হাদিস সুন্নাহর প্রয়ােজনীয়তা, তসবি পড়ার উপকারিতা, নফল নামাজের কার্যকারিতা-বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতেন দাদাসাহেব। চাকরি জীবনে বিধর্মী মনিবের প্রতি বিতৃষ্ণার রেশ ধরে গ্রামের বাড়িতে অবসর জীবনযাপন করতে এসে তিনি কঠোর হাতে তার পরিবারে ধর্মীয় বিধিনিষেধ আরােপ করেন এবং গড়ে তােলেন একটি ধর্মীয় পরিমণ্ডল। ধর্মের ব্যাপারে দাদাসাহেব মাঝে মাঝে অসংযত হয়ে পড়েন। তাকে দেখে ধর্মের বিষয় মনে করে অনেক বয়ােবৃদ্ধব্যক্তিরা শ্রদ্ধা-সমীহ করে। কেননা, ধর্মের ব্যাপারে তিনিই শিশুর মতাে সরল বা প্রাণবন্ত বালকের মতাে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে পারেন।
দাদাসাহেব তারই আশ্রিত গৃহ-শিক্ষক আরেফ আলীর কাছে পিতৃপুরুষের মর্যাদায় সমাসীন ছিলেন। কিন্তু এই মানুষটিই তার সমস্ত ন্যায়নিষ্ঠা আভিজাত্যময় জীবনের বিপরীতে চলে গেলেন ছােটভাই কাদেরের অপকর্মের সংবাদ শােনার পর। দাদাসাহেব তখন পারিবারিক মান-মর্যাদা, ছােটোভাই এর সম্মান প্রতিপত্তির রক্ষক হয়েও ওঠেন।
Leave a comment