Hello,

Sign up to join our community!

Welcome Back,

Please sign in to your account!

Forgot Password,

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Please briefly explain why you feel this question should be reported.

Please briefly explain why you feel this answer should be reported.

Please briefly explain why you feel this user should be reported.

QNA BD Latest Questions

Mithu Khan
Enlightened

বাঘ নাকি সিংহ আসলে বনের রাজা কে এবং কেন?

বাঘ নাকি সিংহআসলে পশুর রাজা কে আর কেন?

2 Answers

  1. বিড়াল শ্রেণীর প্রাণিদের মধ্যে বাঘই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং আকারের দিক থেকেও সবচেয়ে বড় । সিংহ বাঘের চেয়ে আকারে ছোট এবং এর শারীরিক শক্তিও বাঘের চেয়ে কম। তবুও সিংহকেই বনের রাজা বলা হয়, বাঘকে নয়। বাঘকে কেন বনের রাজা বলা হয় না এ প্রশ্ন জাগতে পারে অনেকের মনেই। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে
    হলে প্রথমেই আলোকপাত করতে হয় একজন রাজার স্বভাব এবং বৈশিষ্ট্যের দিকটিতে। একজন রাজা যেমন সবসময় দাপট নিয়ে চলাফেরা করেন, সিংহও তেমনি সবসময় বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে জঙ্গলের ভেতর চলাফেরা করে। সিংহের কেশর, হুংকার ও গর্জন যেন একজন রাজার দাপুটে স্বভাবেরই পরিচায়ক। অপরদিকে,
    বাঘের গর্জন সিংহের চেয়েও ভয়ংকর এবং জোরালো হলেও সিংহের মতো বহুদুর পর্যন্ত বিস্তৃতি তার নেই। একটি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘের গর্জন ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। আপাতদৃষ্টিতে এটি অনেক বলে মনে হলেও সিংহের গর্জনের তুলনায় তা অতি নগন্য। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সিংহের গর্জন প্রায় ৮ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে শোনা যায়। রাজার হুংকার প্রজা যেন অনেক দূর থেকে শুনতে পায় , এ দিক বিবেচনা করেও সিংহকেই বনের রাজার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, বাঘকে নয়। একটি সিংহ একটী বাঘের চেয়ে বেশিক্ষণ ধরে লড়তে পারে। বাঘ যদিও সিংহের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং আকারেও বড়, তবুও সে সিংহের মতো বেশিক্ষণ ধরে লড়তে পারেনা, হাঁপিয়ে যায়। এছাড়াও বাঘ নিজের চেয়ে বড় প্রাণি, যেমনঃ হাতি, ভাল্লুকদের ভয় পায়। কিন্তু সিংহ কোনো প্রাণিকেই ভয় পায়না, হোক সে তার চেয়ে বড় অথবা শক্তিশালী।
    কোনো জন্তুর সাথে যখন বাঘ লড়াই করে এবং নিজের জয় লাভের কোনো সম্ভাবনা না দেখে, তখন বাঘ লড়াইক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু সিংহ যখন কোনো জন্তুর সাথে লড়াই করে, তখন সে কখনো লড়াই ছেড়ে পালায় না। যদি এমনও হয় যে, এই লড়াইয়ে সিংহের মৃত্যু নিশ্চিত, তবুও সিংহ লড়তেই থাকে। একজন রাজা
    যেমন কাউকে ভয় পায়না, অকুতোভয় মনোবল নিয়ে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করে, সিংহও তেমনি কাউকে ভয় না পেয়ে জঙ্গলে রাজত্ব করে। একারণেই সিংহ বনে নিজের কর্তৃ্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, যা বাঘ পারেনি। আর এজন্যই সিংহই বনের রাজা, বাঘ নয়।

  2. বাঘ সিংহের মধ্যে যুদ্ধে কে জিতবে এবং তাদের মধ্যে কে আসল পশুরাজ তা নিয়ে তর্ক খুব সম্ভবত মানব সভ্যতার শুরু থেকেই চলছে। সেই সুপ্রাচীন মেসোপটেমিয়ান, মিশরীয় সভ্যতার রাজারা নিজেকে যেরকম সিংহের সাথে তুলনা করত এবং সিংহকে শক্তি ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেখত ঠিক তেমনি রোমান সাম্রাজ্যের কলাসিয়ামে বাঘ সিংহের লড়াইয়ে বাংলার বাঘেরা সিংহের ঘাড় মটকাতো। সুতরাং এই প্রশ্নের কোন সহজ উত্তর নেই তবুও ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও দেখে, কোরা উত্তর, উইকিপিডিয়া, নিউজ আর্টিকেল পড়ে আমার একটি ধারণা জন্মেছে এই প্রশ্নের জবাব কিভাবে দেওয়া যায়। কে আসল পশুরাজ তা নির্ণয়ে আমার চোখে দুইটি বিষয় বিবেচ্য, প্রথমত বাঘ সিংহের চেহারা গত বৈশিষ্ট্য এবং সামাজিক আচরণ, দ্বিতীয়ত কোন পশুটির শক্তি বেশি এবং মুখোমুখি লড়াইয়ে কে জিতবে। আপনি বাঘ ভক্তই হোন বা সিংহ ভক্তই হোন উত্তরটি মন দিয়ে পড়লে আশা করি ভালোই লাগবে।

    বাঘ এবং সিংহের প্রায়ই একে অপরের সাথে তুলনা হলেও এই পশু দুইটি সামাজিক আচরণে বেশ পার্থক্য রয়েছে। সিংহরা যেখানে দলগতভাবে থাকতে পছন্দ করে বাঘ সেখানে সচরাচর বনের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একা থাকে। একটি বাঘ বনের যেই অংশকে নিজের বলে দাবি করে তাকে টেরিটরি (territory) বলে। কোন বাঘই তার নিজের টেরিটরিতে অন্য বাঘের অনুপ্রবেশ মেনে নেয় না। পুরুষ বাঘের টেরিটরি ৬০ থেকে ১০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বড়ও হতে পারে। প্রত্যেক বাঘই তার নিজস্ব টেরিটোরিতে শিকার, খাদ্য-পানীয় সহ সকল প্রয়োজন মেটায়।

    অন্যদিকে সিংহরা আসলে বনে নয় থাকে মুক্ত সাভানায়। বাঘের তুলনায় সিংহেরা অনেক বেশি সামাজিক এবং তাঁদের দলবদ্ধ আচরণও বেশি জটিল। সিংহের দলকে ইংরেজিতে প্রাইড (pride) বলে। একেকটি প্রাইডে সচরাচর তিন থেকে চারটি পুরুষসিংহ থাকে এবং বাকিরা স্ত্রী সিংহ। ছেলে শাবকদের তিন বছর ধরে বড় হওয়ার পর দল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। পরের দুই বছর সেই পুরুষ সিংহরা একা থাকে। এরপর হয় তারা নিজেদের নতুন দল গঠন করে বা অন্যদলের বুড়ো সিংহদেরকে হটিয়ে দিয়ে নিজেই সেই দলের অধিকর্তা হয়ে ওঠে। এই সময় নিজ আধিপত্য চিরকাল বজায় রাখতে দলের পুরুষ শাবকদের হত্যা করতেও সদ্য আগত সিংহদের বাধেনা।

    সামাজিক আচরণের মত শিকার করা এবং এর ভাগ বন্টনেও বাঘ এবং সিংহের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। বাঘ যেখানে সচরাচর নিজের শিকার নিজেই করে, সিংহ সেখানে শিকার করে দল হিসেবে। শিকারের মূল কাজটা সিংহীরাই সাধারণত করে সিংহ এসে স্রেফ ভাগ বসায়। শিকারের ভাগ বন্টনেও পুরুষ আধিপত্যবাদ সুস্পষ্ট, সিংহদের খাওয়ার পরে যা বাকি থাকে তাই সিংহীদের কপালে জোটে যদিও তারা সংখ্যায় বেশি এবং শিকারের জন্য দৌড়ঝাঁপ প্রায় সবকিছু তারাই করেছে। পুরুষ সিংহদের মূল কাজ হল অন্য সিংহ হতে নিজ দলকে সুরক্ষা দেওয়া।

    অন্যদিকে বাঘেরা সচরাচর এতটা স্বার্থপর নয়, পুরুষ বাঘেরা শাবক এবং স্ত্রী বাঘদের আগে খাবারের ভাগ দিতে পারে। অবশ্য টেরিটরি দখলে বাঘের লড়াইয়ের সাথে সিংহের প্রাইড দখলের মোটামুটি মিল আছে। পুরুষ বাঘেরা ১৯ মাসের মাথায় মায়ের কাছ হতে চলে আসে। এসময় বাঘেরা সচরাচর অন্য বাঘের এলাকায় লুকিয়ে লুকিয়ে বড় হয় যতদিন না পর্যন্ত সেই বাঘকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মত যথেষ্ট বড় হয়ে ওঠে। পুরুষ বাঘদের মধ্যে শাবকদের হত্যা করার প্রবণতাও সিংহের তুলনায় কম।

    এখন এই দুই প্রাণীর চেহারা নিয়ে তুলনা করা যাক, কে দেখতে বেশি রাজকীয়

    সন্দেহ নেই উভয় প্রাণীই দেখতে খুব সুন্দর এবং একেক জন একেক প্রাণীকে বেছে নিবে তবে বাঘ আমার সবচেয়ে পছন্দের প্রাণী হওয়া সত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে সিংহই দেখতে মনে হয় একটু বেশি রাজকীয় তার পিঠ পর্যন্ত বিস্তৃত কেশরের কারণে। মাথা হতে পা পর্যন্ত বিস্তৃত সিংহের কেশর অনেকটা রাজমুকুট এবং রাজার কাঁধে জরানো শালের কথা মনে করিয়ে দেয়।

    বেশিরভাগ রাজা-বাদশাই সম্ভবত যুগে যুগে তাই ভেবে এসেছে না হয় এত সাম্রাজের কোট অফ আর্মস এবং পতাকায় সিংহ কেন?

    (ডান দিক থেকে ঘড়ির কাটা অনুযায়ী ফিনিস কোট অফ আর্মস, সাফাভিদ পতাকা এবং ব্রিটিশ কোট অফ আর্মস)

    এমনকি যে ভারত বর্ষ সিংহের চেয়ে বাঘের জন্যই বেশি পরিচিত সেখানেও এত সাম্রাজ্য, দেশ কেন পতাকা এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে সিংহ ব্যবহার করে?

    তবে গর্জনে অবশ্যই বাঘ এগিয়ে রয়েছে, বাঘের গর্জন ভারী এবং কানফাটানো। এমনকি সিনেমায় যাকে আপনি সিংহের গর্জন ভাবেন তা আসলে বাঘের গর্জন। বিশ্ব বিখ্যাত এনিমেটেড মুভি লায়ন কিং এর কথা নিশ্চয়ই জানেন, সেখানে মুফাসার গর্জন হিসেবে বাস্তবে বাঘের গর্জন ব্যবহার করা হয়।

    এখন আসি শেষ প্রসঙ্গে, দুই প্রাণীর তুলনামূলক শারীরিক সক্ষমতা, শিকার ও লড়াই করার কৌশল এবং মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল। শুরুতেই বলে রাখি সিংহ যতই হাজারো লোককথার কিংবদন্তি ও রাজকীয় চেহারার অধিকারী হয়ে থাকুক না কেন গায়ের জোরে কখনোই বাঘের সাথে পেরে উঠবে না। দুই প্রাণীর শারীরিক শক্তি এবং সক্ষমতার পার্থক্য এদের শিকার অভ্যাসেও ধরা পড়ে। সিংহ সচরাচর দল হিসেবে এবং বাঘ একা একা শিকার করে বলে এই দুই প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে শিকারের তুলনা করাটা একটু জটিল, তবুও চাইলে করা যায় কারণ নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রতিটি পুরুষ সিংহকে যেহেতু কয়েক বছর একা একা শিকার করতে হয়। বাঘ শিকার করার চেষ্টা করে অ্যাম্বুসের মাধ্যমে, খুব ধীরে ধীরে লুকিয়ে শিকারের একদম কাছে চলে আসে এবং হঠাৎ করে ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিকারের প্রয়োজনে বাঘ চাইলে ৩০ ফিটেরও বেশি দূরে লাফ দিতে পারে যেখানে সিংহ পারে ২৫ ফিটের মত। লাফের প্রসঙ্গ যখন এসেই গেল নিচের ভিডিওটি কিছুতেই মিস করবেন না যদি আগে দেখে না থাকেন, আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে

    বাঘ তার ওজনের ৫ গুণ বেশি বড় প্রাণীও শিকার করতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহিষ প্রজাতি যাকে গোর (gaur) বলে তা ভারতে পাওয়া যায়, এদের ওজন একটনও ছাড়াতে পারে। আর এসব প্রাণী হল বেঙ্গল টাইগারের পছন্দের শিকার। একেকটি গোর আকারে কতটা বিশাল হতে পারে তা সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে হলে নিচের ভিডিওটি দেখুন

    একটি সিংহ কখনোই একা একা এত বড় কোন জন্তু শিকার করতে পারবে না, তারা সাধারণত নিজ ওজনের দ্বিগুণ আকারের পশু শিকার করেই সন্তুষ্ট থাকে।

    বাঘ-সিংহের মুখোমুখি লড়াইয়ের বর্ণনায় যাওয়ার আগে দুইজনের শক্তির তুলনামূলক পার্থক্য সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলা উচিত। আগেই বলেছি বাঘের গায়ে সিংহের চেয়ে শক্তি বেশি, বাঘের ওজনও সিংহের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। একটি আফ্রিকান পুরুষ সিংহ যেখানে গড়ে ১৯০ কেজি ওজনের হয় সেখানে সুন্দরবনের বাঘ ওজনে আরও ৩০ কেজি বেশি হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাঘ প্রজাতি সচরাচর সাইবেরিয়ান টাইগারদের বলা হয়, একেকটি পুরুষ সাইবেরিয়ান টাইগার ৩০০ কেজিরও বেশি ওজনের হতে পারে যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিংহ প্রজাতি আফ্রিকান সিংহের চেয়েও পাক্কা ১১০ কেজি বেশি! বাঘের কামড়ও সিংহের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। সিংহ যেখানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৬৫০ পাউন্ডের কামড় বসাতে পারে বাঘ সেখানে পারে ১০৫০ পাউন্ডের। ইন্টারনেটে অনেকক্ষণ ঘাটাঘাটি করে মনে হল এই দুই প্রাণীর মধ্যে কার থাবার জোর বেশি তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না তবে বাঘের থাবা সিংহের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি চওড়া। এছাড়া হাড়ের গঠনও বলছে বাঘের থাবার শক্তি সিংহের চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। অনুমান করা হয় বাঘ সর্বোচ্চ চার হাজার কেজি ওজনের থাবা মারতে পারে যা একটি মহিষের মাথার খুলি ফাটিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট! বাঘের পিছনের দুই পা সিংহের তুলনায় খাটো এবং বেশি শক্তিশালী যার ফলে বাঘ পিছনের দুই পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়াতে পারে এবং একই সাথে সামনের দুই পা দিয়ে সমানে থাবা মেরে যেতে পারে যা সিংহের পক্ষে অতটা ভালো ভাবে করা সম্ভব নয়।

    বুদ্ধিমত্তাতেও বাঘ সিংহকে টেক্কা দেয়। নতুন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়া বাঘের জন্য সিংহের চেয়ে সহজ। সার্কাসে সিংহকে যে ট্রিকস শেখাতে মাসের-পর-মাস লেগে যায় বাঘ তা পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই রপ্ত করে নিতে পারে।

    বাঘের আরো একটি বৈশিষ্ট্যের কথা না বললেই নয়। বাঘের ওজন সিংহের থেকে বেশি হওয়া সত্বেও বাঘকে অনেক ক্ষেত্রে সিংহের তুলনায় দেখতে বেশ ছোট লাগে। এর কারণ হলো বাঘের মাংসপেশি ও হাড়ের ঘনত্ব সিংহের চেয়ে বেশি যা লড়াইয়ে অধিক সুবিধা দিতে বাধ্য

    তবে এতকিছুর পরেও সিংহের অন্তত একটি সুবিধা আছে তা হলো এর কেশর যা সিংহের ঘাড় এবং গলাকে সুরক্ষা প্রদান করে। অন্যসব বড় বিড়াল প্রজাতির প্রাণীর মত বাঘও গলায় কামড় দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চায়। ঘাড়, গলায় কেশর থাকার কারণে বাঘের কাছে একটি পথই খোলা থাকে তা হল সিংহের পেটের নরম অংশে কামড় বসানো তবে এই কাজটা বাঘের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য কারণ এক্ষেত্রে বাঘকে সিংহের অনেক কাছে আসতে হয় এবং তখন চার পা দিয়েই সিংহ বাঘকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া আফ্রিকান সিংহের পেটেও সচরাচর কেশর দিয়ে আবৃত থাকে এভাবেও সিংহকে ঘায়েল করা একটি কঠিন কাজ। এক বাঘ সিংহের লড়াই নিয়েই হাজার বছর ধরে অনেক গবেষণা ও জল্পনা-কল্পনা হয়েছে, ইন্টারনেটে অনেকক্ষণ ধরে ঘাটাঘাটি করেও মনে হল এক্ষেত্রে কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা যায় না লড়াইয়ে কে জয়ী হবে। কোন কোন যুদ্ধে বাঘ এক থাবায় সিংহের ভবলীলা সাঙ্গ করে আবার কোন কোনটায় সিংহ করেছে বাঘের, নির্ভর করে সেই বাঘ ও সিংহের ব্যক্তিগত বয়স, লিঙ্গ, প্রজাতি এবং শারীরিক সক্ষমতার উপর। যদিও আমার মতে সম্ভাবনার পাল্লাটা বাঘের দিকেই বেশি ভারী কারণ বাঘই খুব সম্ভবত বাঘ-সিংহের যতগুলো যুদ্ধ মানুষের চোখের সামনে হয়েছে, খানিকটা হলেও তার বেশিরভাগ যুদ্ধে জিতেছে। কোথা থেকে বাঘ সিংহের লড়াই নিয়ে গবেষণা করলাম তা জানতে চাইলেতবে এটা বলতে দ্বিধা নেই কেশর না থাকলে সিংহ বাঘের সামনে দাঁড়াতেও পারতো না, বাঘ সিংহের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং ক্ষিপ্র এক প্রাণী। তবে সিংহের বাঘের তুলনায় শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করার মনোভাব অনেক বেশি যেখানে সুযোগ থাকলে বাঘ কিছুক্ষণ লড়াই করেই সরে আসে। বাঘ তার হিংস্র রূপ এবং শক্তিমত্তার সর্বোচ্চ প্রমান দেখায় একমাত্র কোণঠাসা হয়ে পড়লে, আহত বাঘ বা cornered tiger শব্দটি এমনি এমনি আসেনি।

    তো সবশেষে মূল উত্তর দেওয়া যাক, বাঘ এবং সিংহের মধ্যে কে আসল পশুরাজ। আমার উত্তর এতক্ষন ধরে পড়লে আপনার কাছে পরিষ্কার এ ব্যাপারে আমার চিন্তা ভাবনা কি। চেহারা এবং সামাজিক আচরণে বাঘের চেয়ে সিংহই বেশি রাজার মত। আগেই বললাম সিংহের কেশর রাজমুকুটের কথা মনে করিয়ে দেয়। একজন রাজার ব্যাপারে কাম্য হলো তিনি তার সভাসদ দ্বারা ঘেরা থাকবেন এবং তার আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা অন্যরা করবে, সিংহের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়। শিকার করে সিংহিরা আর সিংহ তা সবার আগে ভোগ করে। এছাড়া সিংহের দল গঠন আর জোর করে অন্য সিংহের দলের দখল রাজাদের পররাজ্য দখল এবং সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কথা মনে করিয়ে দেয়। মনুষ্য রাজবংশে যেমন সিংহাসন রক্ষার্থে নিজ সন্তান, ভাইকে হত্যা করার রেওয়াজ যুগে যুগে চলে এসেছে সিংহের মধ্যেও এই একই চরিত্র দেখা যায়।

    অপরদিকে বাঘের ক্ষেত্রেও এসব আচরণের বেশ কিছু দেখা যায়। বাঘ মাঝেমধ্যে শাবক হত্যা করে, বড় হলে গায়ের জোরে অন্য বাঘের এলাকা কেড়ে নেয় তবে বাঘ নিজের শিকার নিজেই করে এবং সিংহের মত বড় কোন দলের সাথে থাকে না যা ঠিক রাজা সুলভ নয়। তবে এক্ষেত্রে অনেকে প্রশ্ন তুলবে বাঘ তো ঠিকই গায়ের জোর, ক্ষিপ্রতা, বুদ্ধিমত্তায় সিংহের থেকে এগিয়ে রয়েছে তাহলে বাঘই কেন আসল পশুরাজ হবে না? তার উত্তরে আমি বলব একই কথা তো হাতি বা চিতার ক্ষেত্রেও বলা যায় এদের গায়েও তো জোর বা ক্ষিপ্রতা সিংহের চেয়ে বেশি তবে এসব পশুকে কেন পশুরাজ বলা হয় না? পশুরাজ নির্বাচনে কোন পশুর আচরণ মনুষ্য রাজের সাথে বেশি মিলে সেটাই প্রথম বিবেচ্য হওয়া উচিত। সিংহের চেহারা এবং আচরণ বাঘের তুলনায় মনুষ্য রাজের সাথে বেশি যায়। আরো একটি ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং ক্ষিপ্র হওয়া কোন রাজার অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য নয়, তার চেয়ে একজন রাজা সাধারণত গুরুগম্ভীর, ভোগবিলাসী এবং নিজ সাম্রাজ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। নিজে একজন পরম বাঘ ভক্ত হওয়া সত্ত্বেও বলতে হচ্ছে পশুরাজ হিসেবে সিংহই শ্রেয় আর বাকি প্রায় সব কিছুতে বাঘ সিংহকে টেক্কা দেয়। ধন্যবাদ।

Leave an answer

Leave an answer

Related Questions