Hello,

Sign up to join our community!

Welcome Back,

Please sign in to your account!

Forgot Password,

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Please briefly explain why you feel this question should be reported.

Please briefly explain why you feel this answer should be reported.

Please briefly explain why you feel this user should be reported.

QNA BD Latest Questions

Mithu Khan
Enlightened

ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে কত দূরত্বে অবস্থিত

ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে কত দূরত্বে অবস্থিত?

  • ক. ১৪.৩ কি.মি.
  • খ. ১৬.৫ কি.মি.
  • গ. ১৯.৭ কি.মি.
  • ঘ. ২১.৩ কি.মি.

1 Answer

  1. ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১৬.৫ কি. মি. দূরত্বে অবস্থিত।

    ফারাক্কা বাঁধ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে। এই বাঁধটি ১৯৭৫ সালে চালু হয়েছিল, এবং এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নদীর পানিকে হুগলি নদীর দিকে স্থানান্তরিত করে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখা। বাঁধটির অবস্থান বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৬.৫ কিলোমিটার (১০.৩ মাইল) দূরে অবস্থিত।

    ফারাক্কা বাঁধের ইতিহাস ও নির্মাণ

    ফারাক্কা বাঁধের পরিকল্পনা মূলত ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) বিভাজনের পর থেকে শুরু হয়। হুগলি নদীতে পলি জমে যাওয়ার কারণে কলকাতা বন্দরের প্রবাহ কমে যাওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের পরিকল্পনাকারীরা গঙ্গা নদীর কিছু পানি হুগলি নদীতে স্থানান্তর করার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দেন।

    ১৯৬১ সালে ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, এবং এটি শেষ হয় ১৯৭১ সালে। বাঁধটি ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। বাঁধটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে অবস্থিত। এটি ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফুট) দীর্ঘ এবং এতে একটি ব্যারেজ ও একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। বাঁধটির পাশাপাশি একটি ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ফিডার ক্যানাল নির্মাণ করা হয়, যা গঙ্গা নদীর পানি হুগলি নদীতে নিয়ে যায়।

    ফারাক্কা বাঁধের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম

    ফারাক্কা বাঁধ মূলত কয়েকটি কারণে নির্মাণ করা হয়েছিল:

    1. নাব্যতা বজায় রাখা: হুগলি নদীতে পলি জমে যাওয়ায় কলকাতা বন্দরের নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছিল। বাঁধের সাহায্যে গঙ্গা নদীর কিছু পানি হুগলি নদীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যা কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
    2. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: ফারাক্কা বাঁধে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
    3. সেচ ব্যবস্থা: বাঁধটির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যে সেচের জন্য পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।

    ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব

    ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব দেখা গেছে:

    1. পরিবেশগত প্রভাব: বাঁধের কারণে গঙ্গা নদীর নিম্ন প্রবাহে পানির পরিমাণ কমে গেছে, যা বাংলাদেশের পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, পদ্মা নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে, যা কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
    2. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন: বাঁধের পানি বণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিকভাবে আলোচিত হয়েছে এবং ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে ফারাক্কা পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

    ফারাক্কা পানি চুক্তি

    ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ফারাক্কা পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি উভয় দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বণ্টন করা হয়। এই চুক্তি ৩০ বছরের জন্য কার্যকর, যা উভয় দেশের জন্যই কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

    এই চুক্তি অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে) পানির প্রবাহ নির্ধারণ করা হয়। চুক্তির শর্তানুসারে, উভয় দেশকে নিজেদের পানির চাহিদা মেটাতে সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।

    ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে গেলে এর ইতিহাস, কাঠামো, কার্যকারিতা, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব, এবং ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর এর প্রভাবকে আলাদা আলাদা করে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

    বাঁধের কার্যকারিতা

    ১. নাব্যতা বজায় রাখা:

    ফারাক্কা বাঁধের মূল লক্ষ্য ছিল হুগলি নদীর নাব্যতা বজায় রাখা। হুগলি নদীর পানি স্তর কমে যাওয়া এবং তাতে পলি জমে যাওয়ার কারণে কলকাতা বন্দরের কার্যকারিতা হুমকির মুখে পড়েছিল। বাঁধটি নির্মাণের ফলে গঙ্গা নদীর পানি ফিডার ক্যানালের মাধ্যমে হুগলি নদীতে প্রবাহিত হয়, যা নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে তোলে এবং বন্দরের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করে।

    ২. সেচ ও পানির সরবরাহ:

    ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের কৃষি জমিতে সেচের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। বাঁধটি শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহের উৎস হিসেবে কাজ করে।

    ৩. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন:

    ফারাক্কা বাঁধে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বাঁধটি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ স্থানীয় অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।

    পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব

    ১. পরিবেশগত প্রভাব:

    ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে গঙ্গা নদীর নিম্ন ধারে পানির প্রবাহ কমে গেছে, বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে। এর ফলে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে, যা মৎস্য সম্পদ ও কৃষি জমির জন্য ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, নদীর পাশে অবস্থিত জলাভূমি ও জলজ জীববৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    ২. সামাজিক প্রভাব:

    বাঁধের কারণে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে কৃষি ও মৎস্যজীবীরা বিপদে পড়েছেন। পানি সংকটের কারণে খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে, যা স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

    ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক

    ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক বিরোধ রয়েছে। বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যে, এর ফলে পদ্মা নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে দেশের খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

    ১৯৭৭ সালে, ভারত ও বাংলাদেশ একটি পাঁচ বছরের জন্য প্রাথমিক পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা উভয় দেশের পানির চাহিদা পূরণে সহায়ক ছিল। তবে এই চুক্তি শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিরোধ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে, দুই দেশ নতুন করে একটি ৩০ বছরের জন্য ফারাক্কা পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা এখনও কার্যকর রয়েছে।

    এই চুক্তি অনুসারে, শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা নদীর পানি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভাগ করা হয়, এবং দুই দেশই পানি বণ্টন সংক্রান্ত পরিস্থিতি মনিটর করার জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠন করে।

    চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

    ফারাক্কা বাঁধ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো এখনও বিদ্যমান, বিশেষ করে পানি বণ্টন নিয়ে। বাংলাদেশের পদ্মা নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া উন্নত করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

    ফারাক্কা বাঁধের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বাঁধের কার্যকারিতা বাড়ানো, এবং পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করার জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।

    ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিরোধের মূল কারণ

    ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিরোধের মূল কারণ হলো গঙ্গা নদীর পানির বণ্টন এবং এর ফলে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব। নিচে এই বিরোধের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

    ১. পানির প্রবাহ কমে যাওয়া:

    ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি হুগলি নদীতে স্থানান্তরিত করা হয়, যার ফলে পদ্মা নদীতে পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে), যখন নদীর পানি স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে, বাঁধের কারণে পদ্মা নদীর পানি আরো কমে যায়। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কৃষি, মৎস্য এবং জলজ সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

    ২. পরিবেশগত ক্ষতি:

    পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর নাব্যতা কমে যায়, যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে পলি জমা হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এতে নদীটি আরো সংকুচিত হয় এবং তা কৃষি জমি এবং বসতবাড়ির জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এছাড়া, পানির অভাবে বাংলাদেশের অনেক জলাভূমি শুকিয়ে যায়, যা পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।

    ৩. কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি:

    বাংলাদেশের অনেক কৃষি জমি সরাসরি পদ্মা নদীর ওপর নির্ভরশীল। পানি কমে যাওয়ার কারণে সেচের সংকট দেখা দেয়, যা খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। একইভাবে, মৎস্য সম্পদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ নদীর পানি কমে গেলে মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। এই কারণে বাংলাদেশের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

    ৪. সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব:

    পানি সংকটের কারণে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ায় খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে যায় এবং পানির অভাবে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হয়।

    ৫. কূটনৈতিক উত্তেজনা:

    ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বহুদিন ধরেই চলমান। বাঁধের কারণে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সমস্যাগুলো পুরোপুরি সমাধান হয়নি।

    ৬. ফারাক্কা পানি চুক্তি ও তার সীমাবদ্ধতা:

    ১৯৯৬ সালে ফারাক্কা পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও এর বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পানির প্রবাহ বজায় রাখা সম্ভব হলেও কখনও কখনও ভারতের অভ্যন্তরীণ কারণে পানি প্রবাহে পরিবর্তন আসে, যা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এছাড়াও, চুক্তির কিছু ধারা বাস্তবিক জীবনে কার্যকর করা কঠিন, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হতে পারে।

    ৭. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:

    জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানির স্তর পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তন বাঁধের কার্যকারিতা এবং পানির বণ্টনের ওপর নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। ভারতের বাঁধ পরিচালনার নীতি এবং বাংলাদেশের পানি চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

    এই সমস্ত কারণ মিলেই ফারাক্কা বাঁধকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দুই দেশ এই সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও চুক্তি করেছে, তবে পুরোপুরি একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো এখনও সম্ভব হয়নি।

    ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি

    ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষত বর্ষা মৌসুমে। বাঁধের অপারেশন এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। নিচে এই সমস্যার কারণগুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

    ১. পানির অবাধ প্রবাহের বাধা:

    ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত হওয়ায় এর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। বর্ষাকালে যখন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পায়, তখন বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত পানি পদ্মা নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করে, যা সেসব অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে, যদি একবারে বড় পরিমাণ পানি ছাড়া হয়, তাহলে তীরবর্তী অঞ্চলগুলো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

    ২. নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহের পরিবর্তন:

    ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গা-পদ্মা নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ পরিবর্তিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়, কিন্তু বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়। এই অস্বাভাবিক প্রবাহের পরিবর্তন বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা বন্যার কারণ হতে পারে।

    ৩. নদীর পলি জমা ও নাব্যতা হ্রাস:

    ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদীতে পলি জমা বাড়ছে। এতে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, যা বন্যার সময় পানি নিষ্কাশনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে নদীর পানি তীরে উঠে আসে এবং বন্যার তীব্রতা বাড়ায়।

    ৪. অব্যবস্থাপনা ও তথ্যের অভাব:

    বাঁধের পানির নিয়ন্ত্রণ এবং বণ্টন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে সেটি বন্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ভারত থেকে যখন অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, তখন যদি বাংলাদেশের কাছে আগাম সতর্কতা বা তথ্য না থাকে, তাহলে তারা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারে না, যার ফলে বন্যার ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।

    ৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:

    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে, যা নদীগুলোর পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই অতিরিক্ত পানি যখন ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, তখন নিম্নাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

    ৬. কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি:

    বন্যার কারণে বাংলাদেশের অনেক কৃষি জমি তলিয়ে যায়, যা ফসলের ক্ষতি করে এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। এছাড়া, অবকাঠামোগত ক্ষতি যেমন রাস্তা, ব্রিজ, এবং বাঁধের ক্ষতি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

    ফারাক্কা বাঁধের কারণে সৃষ্ট বন্যার ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়। এতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করাও অত্যন্ত জরুরি।

Leave an answer

Leave an answer

Related Questions