ছোটগল্প কাকে বলে?
Sign up to join our community!
Please sign in to your account!
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
উত্তর: ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “একটি ক্ষুদ্র আখ্যান খণ্ডে সমগ্র জীবন তাৎপর্য প্রতিবিম্বিত করাই ছোটোগল্পের উদ্দেশ্য ও শিল্পরূপের প্রেরণা।”
ছোট গল্পের সংজ্ঞা –
‘… a brief prose narrative requiring from half an hour to one or two hours in its perusal .’
‘A short story is a story that can be easily read at a single siting.’
“A Short story must contain one and only to its logical conclusion with absolute singleness of Method.”
“A Short story is a brief work of prose fiction, and most of the terms for analyzing the component, the types, and the narrative techniques of the novel are applicable to the short story as well.”
“A short story is, or should be, a simple thing, it aims at producing a single vivid effect; it has to seize the attention at the on set, and never relaring, gather it together more and more until the climax is reached.”
‘a short story deals with a single character , a single event , a single emotion or the series of emotion called forth by a single situation .’
“ছোটগল্পকে প্রথমত ছোট, দ্বিতীয়ত গল্প হতে হবে। ছোটগল্পের হীরক কাঠিন্যের মধ্যে থাকবে জীবনের কোন বিশিষ্ট দিক ও খণ্ডাংশ।”
“ গীতিকবিতা ও ছোটগল্প মেজাজের দিক থেকে যেন যমজ ভাই। “
তবে ছোট গল্প কাকে বলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সোনারতরী’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় ছোটগল্পে লক্ষ্মণসহ সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন –
ছোট প্রাণ ছোট কথা ছোট ছোট দুঃখব্যাথা
নিতান্তই সহজসরল।
সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারটি অশ্রুজল
নাহি বর্ণনার ছ’টা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ
অন্তরে আতৃপ্তি হবে। সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
অধ্যাপক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাংশের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এইভাবে— “খাঁটি ছোটোগল্পের এই হল সহজ সুন্দর কাব্যিক ব্যাখ্যা। ‘ছোটো প্ৰাণ, ছোটো ব্যথাই’ তার উপজীব্য। কিন্তু গোষ্পদে যেমন আকাশের ছায়া পড়ে তেমনি একটুখানি ক্ষুদ্র চিত্রপটের মধ্যেই বিশালব্যাপ্ত মহাজীবনের ছায়া পড়বে। তত্ত্ব থাকবে, কিন্তু তাত্ত্বিকতা বড়ো হয়ে উঠবে না।—ফুলের গায়ে গন্ধের মতই তা অবিচ্ছিন্ন হয়ে বিরাজ করবে। কাহিনির ধূপ নিভে যাবে, কিন্তু তার ভাবের সৌরভটি মোহ বিস্তার করতে থাকবে ধীরে ধীরে। অতএব লেখকের কলম যেখানে থেমে দাঁড়াবে, সেইখান থেকেই পাঠকের মনে গল্পটি সঞ্চারিত হয়ে চলবে।”
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছোটোগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন –
‘ছোটগল্প হচ্ছে প্রতীতি ( impression) জাত একটি সংক্ষিপ্ত গদ্যকাহিনী যার একতম বক্তব্য কোনো ঘটনা বা কোনো পরিবেশ বা কোনো মানসিকতাকে অবলম্বন করে ঐক্য সংকটের মধ্য দিয়ে সমগ্রতা লাভ করে। ‘
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উৎকৃষ্ট ছোটগল্পের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নির্দেশ করেছেন –
সংক্ষিপ্ত : ছোটগল্প সংক্ষিপ্ত, কারণ তা একটিমাত্র এপিসোড বা অভিজ্ঞতার শিল্পরূপ। এই সংক্ষিপ্ততার জন্যেই ছোটগল্পের ভাষা বিবরণধর্মী নয়, সংকেতধর্মী।
সুডোল : ছড়ানো এলায়িত শিথিল – গ্রথিত নয়। ‘ এলোমেলো ডালপালার পুনরাবৃত্তি ‘ নয়। থাকবে শিল্পরূপের নিখুঁত ঐক্য, থাকবে সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
নিটোল : সমস্ত অবান্তর অংশ বর্জন করে, অত্যাবশ্যকের সংরক্ষণ ও পরিস্ফুরণে ফুটে ওঠে ছোটগল্প, তার মধ্য দিয়েই সার্থক হয়ে ওঠে জগৎ জীবন সম্পর্কে লেখকের ‘ প্রতীতির সমগ্রতা’ বা ‘ Unity of impression ‘ ।
অনিবার্য : ছোটগল্পের ঐ প্রতীতিকে কেবল প্রধান নয়, একতম ও একৈকমুখী হতে হয়, পূর্বনির্ধারিত হতে হয়। গল্পের প্রথম বাক্য থেকেই গল্পের পরিণতির আভাস মিলবে। এর মূলে গল্পলেখকের প্রজ্ঞা দৃষ্টি – যার আলোয় গল্পের পরিসমাপ্তি প্রতিভাত।
উপসংহারের অপ্রত্যাশিত চমক : ‘যা মার লাগায় মর্মে, লঘু লম্ফে।’ ছোটগল্পের উপসংহারের অদ্ভূত ক্ষিপ্রতা, চমক, মোচড় – যাকে বলা হয় ‘ চাবুক মারা সমাপ্তি ‘।
দৈবলব্ধ : ছোটগল্প হবে অনন্য, নিজস্ব রূপ লক্ষণে বিশিষ্ট। তা ‘বৃত্তান্ত’ নয় ‘আখ্যায়িকা’ নয় ‘উপাদান’ নয় সংক্ষেপিত উপন্যাস নয়। তা স্বতন্ত্র, তা আপনাতে আপনি সম্পূর্ণ, তা যেন দৈবলব্ধ ধন।
ছোটোগল্প সম্পর্কে কুন্তল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন –
“তার সংক্ষিপ্ত পরিসরে ছোটোগল্প একটি বিদ্যুৎ চমকের মতো জগৎ ও জীবনের খানিকটা অংশ উদ্ঘাটিত কর দেয় । ছোটোগল্পের শুরু যেমন চকিত , তাঁর শেষও তেমন অজ্ঞাত , অনুমানের আকাশে প্রলম্বিত। আর এই স্বল্পায়তন খণ্ডচিত্রের উদ্ভাসের মধ্যেই খুঁজে নিতে হয সম্পূর্ণতা ; সে যেমন ঘটনার, তেমনই চরিত্রের এবং এ দুটোকে জড়িয়ে কোন একটি বক্তব্য বা প্রতিপাদ্য বিষয়ের। ছোটগল্পের জন্ম জীবনের ভগ্নাংশ থেকে ; ঘটনার আকস্মিকতায় তার শুরু, ছিন্ন-ভিন্ন জীবনসামগ্রীর স্বল্পতম ও স্বতঃস্ফূর্ত বয়নে এক আশ্চর্য গতিময় তার রূপায়ণ। ছোটগল্প জীবনের এক প্রতীকী প্রকাশ; ; খণ্ডজীবনের তুঙ্গ ঘনীভবন; বিন্দুতে সিন্ধুদর্শনের এক অসামান্য অভিজ্ঞতা। সমাজজীবনের বিশাল ও বিস্তৃত প্রেক্ষিতে মানুষের বহুমুখী ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র আমরা পাই উপন্যাসে। অন্যদিকে ছোটগল্প ‘ইম্প্রেশন-সঞ্জাত’; সময়ের ব্যাপ্তি, চরিত্রের ব্যাপ্তি, আবেগ-প্রবাহের ব্যাপ্তি, কিংবা বিচিত্রমুখী জৈবনিক চঞ্চলতা ও তার গহনতা ছোটগল্পের প্রকৃতি ও প্রকরণের বিরোধী। উপন্যাসের বৃহৎ ও পূর্ণদৈর্ঘ্যের ক্যানভাসে মানবজীবন পরিস্ফুট হয় বিস্তারের সাহায্যে ; অন্যদিকে ছোটগল্প জীবনকে আভাসিত করে রেখায় ও সংকেতে, প্রতীকী দ্যোতনায়, অপ্রত্যাশিত আশ্চর্য ঝলকে যা শেষ পর্যন্ত গল্পের ক্ষেত্রভূমি ছাড়িয়ে যায় আনন্দ- বিস্ময়-সৌন্দর্যের এক অনন্তভূবনে ।”
সবমিলিয়ে আমরা বলতে পারি – যা আয়তনের দিক থেকে ছোট, অনুভূতির দিক থেকে বিচিত্র্যমুখী, ভাবের দিকে থেকে সম্পূর্ণ / পূর্ণাঙ্গ গদ্যে লিখিত কাহিনীকে আমরা ছোটগল্প বলতে পারি।