“সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেইসব খুনিদের সে শনাক্ত করছে” কে শনাক্ত করছে? কাদের, কেন খুনি বলা হয়েছে?
Sign up to join our community!
Please sign in to your account!
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
শনাক্তকারী: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ‘হাত বাড়াও’ রচনাটিতে মন্বন্তরের শিকার মৃতপ্রায় যে ‘অদ্ভুত জন্তুর’ মত মানবপুত্রকে লেখক রাজবাড়ির বাজারে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সেই যেন তার খুনিদের শনাক্ত করছে।
যাদের এবং যে কারণে ‘খুনি’ বলা হয়েছে : পঞ্চাশের মন্বন্তর যে সামাজিক এবং মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছিল, তা অনেকটাই ছিল মনুষ্যসৃষ্ট। জোতদার, মজুতদার, মহাজন শ্রেণি কৃত্রিমভাবে যে খাদ্যসংকট তৈরি করেছিল তা দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফরিদপুরের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার সময় রাজবাড়ির বাজারে যে মানবসন্তানকে লেখক দেখেছিলেন সে-ও এই দুর্ভিক্ষের শিকার। রাস্তার ধুলাে থেকে সে খুঁটে খাচ্ছিল শস্যকণা। মাত্র বারাে-তেরাে বছর বয়সে তার মাজা পড়ে গেছে, হাঁটতে পারে না, “তাই জানােয়ারের মত চার পায়ে চলে।” তাকে দেখে লেখকের মনে হয়েছিল যে, সে যেন তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে যারা শহরে গ্রামে-গঞ্জে জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। সে তাদেরকেই চিহ্নিত করতে চাইছে যারা মাথা উঁচু করে মানুষদের বাঁচতে দিচ্ছে না। এজন্যই সমাজের শােষক শ্রেণিকে ‘খুনি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
লেখকের ভাবনায় ‘খুনি’-দের স্বরূপ: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ‘হাত বাড়াও’ রচনায় রাজবাড়ির বাজারে বারাে-তেরাে বছরের, মাজা-পড়ে যাওয়া, শীর্ণকায়, ছেলেটিকে দেখার পর থেকে তাকে আর ভুলতে পারেননি লেখক। লেখকের পরবর্তীকালে প্রায়ই মনে হত যে, তার সরু, লিকলিকে আঙুল দিয়ে সে সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে যারা শহরে, গ্রামে, বন্দরে জীবনকে হত্যা করছে, মানুষের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে। স্পষ্টতই এখানে গ্রামের জমিদার, জোতদার এবং মহাজন শ্রেণির প্রতি যেমন ইঙ্গিত করা হয়েছে, তেমনই শহরের মালিক ও পুঁজিপতি শ্রেণিও ছেলেটির তথা লেখকের আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছে। কৃত্রিমভাবে অভাব সৃষ্টি করে এরা দুর্ভিক্ষকে অনিবার্য করে তুলেছিল এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। তাই সংগতভাবেই লেখক এদের ‘খুনি’ বলে অভিহিত করেছেন।
শনাক্তকরণের কথা বলার কারণ : সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা বাংলাদেশে মন্বন্তরের শিকার অমৃতের পুত্র মানবশিশু চারপেয়ে জানােয়ারের মতাে রাস্তায় পড়ে থাকা চাল আর ছােলা খুঁজছে। এই প্রতিবন্ধী কিশােরের চোখ দিয়ে যেন দুর্ভিক্ষের ভয়ংকরতা লেখকের সামনে ধরা পড়েছে। সেই সুত্রেই দুর্ভিক্ষের কারণ অনুসন্ধানে ব্রতী হয়েছেন লেখক। তাই লেখক ‘সে শনাক্ত করছে’ কথাটি এখানে ব্যবহার করেছেন।