Hello,

Sign up to join our community!

Welcome Back,

Please sign in to your account!

Forgot Password,

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Please briefly explain why you feel this question should be reported.

Please briefly explain why you feel this answer should be reported.

Please briefly explain why you feel this user should be reported.

QNA BD Latest Questions

Mithu Khan
Enlightened

বাংলাদেশের নৌকাগুলোর নাম কি কি?

আমাদের দেশে কত ধরণের নৌকা দেখা যায়? সেই নৌকাগুলোর নাম কি কি?

3 Answers

  1. গঠনশৈলী ও পরিবহনের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। এসব নৌকার রয়েছে মজার মজার নাম।আমাদের দেশে অনেক ধরণের নৌকা রয়েছে যেগুলো এলাকা ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন  নামে পরিচিত তাই সংখ্যা বলা একটু কঠিন। চলুন পরিচিত হই  নানারকমের নৌকার সাথে!

    ডিঙ্গি

    ডিঙ্গি নৌকা আকারে ছোট। এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত নৌকা। নদী তীর বা হাওর-বাওরে যারা বাস করেন তারা সবাই এই নৌকাটি ব্যবহার করেন। এটি নদী পারাপার বা অল্প পরিমাণ পণ্য পরিবহনে কাজে লাগে। আকারে ছোট বলে এ নৌকা চালাতে একজন মাঝিই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে এতে পালও লাগানো হয়।

    ডোঙা

    তালগাছের কাণ্ড কুঁদে এ নৌকা বানানো হয়। ডোঙ্গা বেশ টেকসই,তবে এতে খুব বেশি মানুষ বা মালামাল নেওয়া যায় না। পার্শ্বদেশ বা বিস্তার এতই কম যে,এতে পাশাপাশি দু’জন বসা যায় না। একটু বেসামাল হলে,ডোঙ্গা উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ডোঙার উপর দাঁড়লে যাতে তলা ফেঁসে না যায়,সে জন্য এর তলদেশ বেশ মোটা রাখা হয়। তাল গাছের কাণ্ড সহজে পচে না বলে ডোঙা বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়।

    কোষা

    বর্ষাকালে চরাঞ্চলে বা বিলে ডোঙা দেখা যায়। অন্যান্য নৌকার মতো এর গলুইয়ের কাঠ বড় থাকে না। অঞ্চল বিশেষে এর আকার কমবেশি দেখা যায়। কোষা মূলত পারিবারিক নৌকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাটবাজার,স্বল্প দূরত্বে চলাচলের কাজে লাগে। একটি আদর্শ কোষা নৌকাতে আটজনের মতো যাত্রী বহন করা যায়। সাধারণত কোষাগুলোতে ছই থাকে না। কোষা বৈঠা দিয়ে চালানো হয়। তবে অগভীর জলে লগি ব্যবহার করে চালানো যায়। একটি ভারি এবং বেশি ওজন বহন করার উপযোগী কোষাকে বলা হয় ‘ঘাসী নৌকা’।

    সাম্পান

    বাংলাদেশের লোকগীতি ও সাহিত্যে সাম্পানের উল্লেখ পাওয়া যায়। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে বেড়ায় সাম্পান। চট্টগ্রাম,কুতুবদিয়া এলাকায় সাম্পান নৌকা বেশি দেখা যায়। এ নৌকাগুলির সামনের দিকটা উঁচু আর বাঁকানো,পেছনটা থাকে সোজা। প্রয়োজনে এর সঙ্গে পাল থাকে আবার কখনও থাকে না।

    একজন মাঝিচালিত এই নৌকাটি মাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এক সময় বড় আকারের সাম্পানও দেখা যেত কুতুবদিয়া অঞ্চলে,তবে এখন তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সাতজন মাঝি থাকতো আর থাকতো তিনকোণা আকারের তিনটি করে পাল।

    গয়না

    এ নৌকা আকৃতিতে মাঝারি। এটি কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে বেশি দেখা যেত। মূলত যাত্রী পারাপারের কাজেই এদের ব্যবহার করা হতো। একসঙ্গে প্রায় ২৫-৩০ জন পর্যন্ত যাত্রী বহন করার ক্ষমতা ছিল এই নৌকার। আবার রাজশাহী অঞ্চলে এর থেকেও বড় আকারের গয়না নৌকা পাওয়া যেত। এরা আকারে যেমন বড় তেমনি এই নৌকায় বেশি সংখ্যক যাত্রীও উঠতে পারতো। বর্তমানে এই নৌকাও বিলুপ্তির পথে।

    বজরা

    আগের দিনে ধনী লোকেরা শখ করে নৌকা ভ্রমণে যেতেন। তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল ‘বজরা’ নৌকা। বজরাতে তারা এক রকম ঘরবাড়ি বানিয়ে নিতেন। ফলে এতে খাবার-দাবারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই থাকতো। কোনটিতে আবার পালও থাকতো। এতে থাকতো চারজন করে মাঝি। বজরা মূলত সিরাজগঞ্জ ও পাবনা অঞ্চলে দেখা যেত।

     বাইচের নৌকা 

    নৌকা বাংলাদেশে এতটাই জীবনঘনিষ্ঠ যে এ নৌকাকে ঘিরে হতো অনেক মজার মজার খেলা।  ‘নৌকা বাইচ’ এখনও একটি জনপ্রিয় খেলা। বাইচের নৌকা লম্বায় দেড়শ থেকে দুইশ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতিযোগিতার সময় এতে পঁচিশ থেকে একশ জন পর্যন্ত মাঝি থাকতে পারে। আগে নবাব-বাদশাহরা বাইচের আয়োজন করতেন। এইসব বাইচের নৌকার আবার সুন্দর সুন্দর নাম দেওয়া হতো, যেমন- পঙ্খীরাজ,ঝড়ের পাখি,দ্বীপরাজ,সোনার তরী ইত্যাদি। কিশোরগঞ্জ,পাবনা,ময়মনসিংহ,ফরিদপুর,নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে এসব নৌকা ছিল।

    বাতনাই

    এর অপর নাম ‘পদি’। এটি মালবাহী বজরার একটি সংস্করণ। খুলনা অঞ্চলে মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই বজরাগুলো অনেক বড় হয়। বর্তমানে এই বজরা আর দেখা যায় না। যান্ত্রিক নৌকার ব্যবহারের কম খরচ ও কম সময় লাগে বলে এ নৌকার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এ নৌকার বড় খরচ ছিল এর লোকবল। এটা এতটাই ভারি হতো যে এটি চালাতে ১৭-১৮ জন মাঝি লাগতো।

    ময়ূরপঙ্খী

    রাজা বাদশাহদের শৌখিন নৌকার নাম হলো ‘ময়ূরপঙ্খী’। এর সামনের দিকটা দেখতে ময়ূরের মতো বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ময়ূরপঙ্খী’। এই নৌকা চালাতে প্রয়োজন হয় চারজন মাঝির। নৌকায় থাকতো দুটো করে পাল।

    বালার

    কুষ্টিয়া অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকে এখনও নৌকা ব্যবহার হয়ে আসছে। সেখানে বিখ্যাত নৌকার নাম হলো ‘বালার’। এ নৌকাগুলি আকারে অনেক বড় হয় এবং প্রায় ১২-৫৬ টন পর্যন্ত মালামাল বহন করতে পারে। আর বৈঠা বায় ১০-১২ জন মাঝি। এ ধরনের নৌকায় পাল থাকে দুটো করে।

    পানসী

    নৌকায় চড়ে দূরে কোথাও যাওয়ার একমাত্র ও অন্যতম মাধ্যম ছিল পালতোলা পানসি। এই পানসীতে চড়ে মাঝি মাল্লার ভাটিয়ালি, মুর্শিদী আর মারফতি গান গেয়ে মন কেড়ে নিতো যাত্রীদের। বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে এটি প্রচুর দেখা যেতো। কালের বিবর্তনে পানসি নৌকা হারিয়ে গেলেও

    ছুঁইওয়ালা বা একমালাই

    পালতোলা পানসির মতো ছুঁইওয়ালা একমালাই ছিলো দূরপাল্লার নৌকা। আজও এর দেখা মেলে। বরিশালের দুশুমি গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকাসহ উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের সদস্যরা ছুঁইওয়ালা নৌকার মাঝি হিসেবে বাপ-দাদার এ পেশাকে এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

    পাতাম

    একধরনের যুগল নৌকা। দুটি নৌকাকে পাশাপাশি রেখে ‘পাতাম’ নামক লোহার কাঠাটা দিয়ে যুক্ত করে এ যুগল নৌকা তৈরি করা হয়। একে অনেক সময় ‘জোড়া নাও’ বলা হয়। এ নৌকা মূলত মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এতে মাঝি ছাড়া চারজন দাঁড় টানা লোক থাকে। এতে  একটি পাল খাটানোর ব্যবস্থা থাকে। এক সময় এই নৌকা  সিলেট ও কিশোরগঞ্জে অঞ্চলে দেখা যেতো। এখন বিলুপ্তপ্রায়।

    শ্যালো নৌকা

    বিশ শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে নৌকায় মোটর লাগানো শুরু হয়। এর ফলে নৌকা একটি যান্ত্রিক নৌযানে পরিণত হয়। এ যান্ত্রিক নৌকাগুলো ‘শ্যালো নৌকা’ বা ‘ইঞ্জিনের নৌকা’  নামে পরিচিতি লাভ করে। পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত শ্যালো পাম্পের মোটর দিয়ে ও স্থানীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব নৌকা চালানোর ব্যবস্থা করা হয়।

    তথ্যসূত্র:

    ১. উইকিপিডিয়া

    ২. বাংলাপিডিয়া

    ৩. বাংলাদেশের নৌকা, এম এ তাহের

    ৪. বার্জ ফর বাংলাদেশ, ইভ মার

  2. বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে নৌকা এখনও স্থানীয় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। এছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বর্ষাকালে নৌকা প্রচুর ব্যবহার হয়।
    গঠনশৈলী ও পরিবহনের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। এসব নৌকার রয়েছে মজার মজার নাম।

    1. ডিঙ্গি
    2. ডোঙা
    3. কোষা
    4. সাম্পান
    5. গয়না
    6. বজরা
    7. বাইচের নৌকা
    8. বাতনাই
    9. ময়ূরপঙ্খী
    10. বালার
    11. পানসী
    12. ছুঁইওয়ালা বা একমালাই
    13. পাতাম
    14. শ্যালো নৌকা

    তথ্যসূত্র:
    ১. উইকিপিডিয়া
    ২. বাংলাপিডিয়া

  3. নৌকা

    বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর বুকে ঢেউ এর সঙ্গে দোল খেতে খেতে চলে অসংখ্য নৌকা। বাংলাদেশের একেক অঞ্চলে একেক ধরনের নৌকার দেখা মেলে। তাদের যেমন আলাদা গঠন তেমনি আলাদা তাদের ধারণ করার ক্ষমতাও। তথ্য ইপাত্ত থেকে ৫৭ ধরনের নৌকার সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন_চাঁদপুরের ঘাসি ও পালকি, চট্টগ্রামের সাম্পান, টেম্পো ও শুলুক, ময়মনসিংহের ময়ূরপঙ্খি ও তাবোড়ি, সিরাজগঞ্জের বেদি, রাজশাহীর বাসারি ও জোড়া নৌকা, কিশোরগঞ্জের পাতাম, খুলনার পদি, পাবনার পানসি, মালার, ডিঙি ও কোষা, বরিশালের বাজিপুরী, সিলেটের গসতি, গোপালগঞ্জের করপাই, সাভারের পালোয়াড়ি, পালটাই ও বেদে নৌকা, ফরিদপুরের বিক এবং গাইবান্ধার ফেটি ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই নৌকাগুলোর অধিকাংশই আজ বিলুপ্তির পথে।
    তৈরী পদ্ধতিঃ
    আদিকালে নৌকা তৈরি হতো বড় কাঠের গুঁড়ির মাঝখানটা খোদাই করে। পরে বাঁশ, বেত, চামড়া এবং কাঠের আঁটি বেঁধে নৌকা তৈরি করা হতো। তবে শেষ পর্যন্ত কাঠই ছিল নৌকা তৈরির প্রধান উপকরণ। কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরির বিষয়গুলোকে খুব ভালোভাবেই স্থান দেওয়া হয়েছে প্রদর্শনীতে। কাঠ চেরাইয়ের আঙ্গিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে একটি আস্ত কাঠের গুঁড়ি ও করাত। দেখে মনে হবে, কাঠ চেরাই করা হচ্ছে। চেরাই করা কাঠকে বলা হয় তক্তা। এই তক্তা দিয়েই বানানো হয় নৌকা। নৌকা তৈরিতে লাগে পেরেক, গজাল, তারকাঁটা ইত্যাদি। তা ছাড়া ছই বানাতে লাগে মুলিবাঁশ। গজাল মেরে নৌকার বডি যখন বানানো হয়, তখন নৌকাকে বিশেষ কায়দায় কাত করে রাখা হয়। তবে ছোট কোষা নৌকা বানানোর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার না করলেও চলে। কারণ, ছোট্ট কোষা নৌকাকে কাঠ দিয়ে ঠেস দিয়ে কাত করে তৈরির কাজ করা যায়। কিন্তু বড় নৌকা বানানোর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির বিকল্প নেই।
    ১.ডিঙি
    বাংলার নৌকার সবচেয়ে প্রচলিত ধরনটি হচ্ছে ডিঙি। নদীর পাড়ে কিংবা জলাশয়ে খুব কাছাকাছি থাকা লোকজন সারাক্ষণ তাদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে এটি ব্যবহার করে থাকে। একজনই এটিকে চালানোর জন্য যথেষ্ট। সাধারণত এটির দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫০ থেকে ৭ দশমিক ৬০ মিটার হয়ে থাকে। বৈঠা দিয়ে ডিঙি বাওয়া হলেও কখনো কখনো পাল ব্যবহার করা হয়।
    ২.বজরা
    উনিশ শতকে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় এবং স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় নৌযান। আরাম-আয়েশের সব সুবিধা ছিল এর ভেতর। খাবারদাবার, কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে চাকরবাকর সবকিছুর আয়োজন থাকত বজরায়। এ নৌকার দুই-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে ছিল থাকার কক্ষ। ঘরবাড়ির মতো এসব কক্ষে থাকত জানালা। কোনো কোনো বজরায় পালও থাকত। এসব বজরা দীর্ঘযাত্রার জন্য ব্যবহৃত হতো। বজরা মূলত সিরাজগঞ্জ ও পাবনা অঞ্চলে দেখা যেতো।  এতে যাত্রীর ধারণক্ষমতা সাত থেকে ১০ জন। আর এটির মাঝি থাকত চারজন। এর দৈর্ঘ্য ১৩ দশমিক ৭২ মিটার থেকে ১৪ দশমিক ৬৫ মিটার, প্রস্থ ২ দশমিক ২৫ থেকে ৩ দশমিক ২০ মিটার।
    ৩.সাম্পান

     

    সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে বেড়ায় সাম্পান। চিটাগাং, কুতুবদিয়া এসব এলাকায় বেশ সাম্পান নৌকার দেখা মেলে। সাম্পান শব্দটি এসেছে ক্যান্টনিজ স্যাম পান থেকে, যার অর্থ তিনটি তক্তা। দক্ষিণ চীনের গুয়াংঝাউয়ের প্রাচীন নাম ক্যান্টন। সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাম্পানের চারদিক বেশ উঁচু হয়ে থাকে। এই নৌকাগুলোর সামনের দিকটা উঁচু আর বাঁকানো হয়, পিছনটা থাকে সোজা। প্রয়োজনে এর সঙ্গে পাল থাকে আবার কখনও থাকে না। দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর ‘বৃহৎবঙ্গ’তে সাম্পান সম্পর্কে লিখেছেন, ‘দেখতে এটি হাঁসের মতো। এটি তৈরি হয়েছে চীন দেশের নৌকার আদলে।’ সাম্পানের সামনের অংশটি জোয়ারের সময় সমুদ্রের ঢেউ কেটে কেটে সামনে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। দুই ধরনের সাম্পান আছে। সমুদ্র উপকূলের আশপাশে চলার জন্য ছোট সাম্পান আর সমুদ্রে চলাচলের জন্য বড় সাম্পান। এর মাঝির সংখ্যাও কম। এক মাঝিচালিত এই নৌকাটি যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি লম্বায় হয় ৫.৪০-৬.১০ মিটার এবং চওড়া হয় ১.৪০-১.৫৫ মিটার পর্যন্ত। একসময় বড় আকারেরও সাম্পান দেখা যেতো কুতুবদিয়া অঞ্চলে যা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সাম্পান গুলোর দৈর্ঘ্য ১২.৮০ থেকে ১৪.৬৫ মিটার পর্যন্ত হতো এবং প্রস্থ ছিলো ৪.৬০ থেকে ৫.২০ মিটার। সাত জন করে মাঝি থাকতো আর থাকতো তিনকোণা আকারের তিনটি করে পাল। এই সাম্পানগুলো ব্যবহৃত হতো মাল পরিবহনের জন্য।
    ৪.গয়না

     

    এই নৌকাটির নাম কিন্তু মজার, গয়না। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই নৌকাটিও নাম লিখিয়েছে বিলুপ্তির খাতায়। গয়নার নৌকাটি আকৃতিতে মাঝারি ধরণের, দৈর্ঘ্যে ৭.৬০ থেকে ১২.৮০ মিটার পর্যন্ত হতো আর প্রস্থে হতো ১.৮০ থেকে ৩.০ পর্যন্ত। এদের দেখা মিলতো কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে। মূলত যাত্রী পারাপারের কাজেই এদের ব্যবহার করা হতো। একবারে প্রায় ২৫-৩৫ জন পর্যন্ত যাত্রী বহন করার ক্ষমতা ছিলো এই নৌকাটির। আবার রাজশাহী অঞ্চলে এর থেকেও বড় আকারের গয়না নৌকার দেখা মিলতো। এদের দৈর্ঘ্য ছিলো প্রায় ১৪.৬০-১৮.২০ মিটার। এরা আকারে যেমন বড়ো তেমনি এ নৌকায় বেশী সংখ্যক যাত্রীও উঠতে পারতো। এতে যাত্রী উঠতে পারতো প্রায় ৪০-৫০জন।
    ৫.বাইচ

     

    দেশের অনেক অঞ্চলে বাইচের নৌকা ছিল এবং এখনো তার কিছু টিকে আছে। বাইচের জন্য ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের নৌকা।
    ঢাকা, ময়মনসিংহে কোষা নৌকা; টাঙ্গাইল ও পাবনায় লম্বা ছিপছিপে নৌকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটে সারেঙ্গি নৌকা; চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও সন্দ্বীপে সাম্পান-জাতীয় নৌকা, ফরিদপুরে গয়না-জাতীয় নৌকা ব্যবহার হয়। বাইচ নৌকা সাধারণত সরু এবং লম্বায় ১৫০ থেকে ২০০ ফুট।
    প্রতিযোগিতার সময় ৭, ২৫, ৫০ বা ১০০ জন মাঝি থাকতে পারে। মুসলিম শাসনামলে নবাব-বাদশাহরা নৌকাবাইচের আয়োজন করতেন।
    নৌকার গতি অনুসারে রাখা হয় সুন্দর সুন্দর নাম_পঙ্খীরাজ, ঝড়ের পাখি, সাইমুন, তুফান মেল, অগ্রদূত, দ্বীপরাজ, সোনারতরী ইত্যাদি।
    ৬.পাতাম
    এটি দেখা যেত সিলেট ও কিশোরগঞ্জে। মালবাহী নৌকাটির নামকরণ হয়েছে ‘পাতাম’ শব্দ থেকে। এই পাতাম একধরনের লোহার কাঁটা। এটি দিয়ে দুটি কাঠকে জোড়া লাগানো হয়ে থাকে। এজন্য একে জোড়া নৌকাও বলে। নৌকার বডির কাঠগুলো জোড়া লাগানো হতো পাতাম দিয়ে। এমন করে লাগানো হতো যেন নৌকার ভেতরে কোনো ধরনের পানি ঢুকতে না পারে। প্রয়োজনে পাতাম লাগানোর জায়গায় দুই কাঠের মাঝখানে দেওয়া হতো পাটের আঁশ। পাতাম নৌকা ছয় থেকে ৪৪ টন পর্যন্ত বহন করতে পারে। এতে মাঝি থাকে পাঁচজন। নৌকাটি লম্বায় ১০ থেকে ১৮ মিটার, প্রস্থে ২.৫ থেকে ৪ দশমিক ৩০ মিটার এবং এর গভীরতা দশমিক ৬৪ থেকে ১ দশমিক ০৫ মিটার। এর একটি পাল ও দুটি বৈঠা। নৌকাটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
    ৭.ময়ূরপঙ্খি
    বজরার মতো এটিও ভারতবর্ষের নবাব ও জমিদারদের নৌযান। এটির সামনের অংশটি ময়ূরের মতো দেখতে হয় বলে এর নাম ময়ূরপঙ্খি। এ নৌকার কথা বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে বেশ পাওয়া যায়। অঞ্চলভেদে ময়ূরপঙ্খির নকশা খানিকটা পরিবর্তন দেখা যায়। ছবির এ নৌকাটি ময়মনসিংহ এলাকার। সাত থেকে দশজন যাত্রী ধারণক্ষম এ নৌকা চালাতে লাগে চারজন মাঝি। এটি দৈর্ঘ্যে ১১ দশমিক ৪০ থেকে ১৩ দশমিক ৭৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
    ৮.মাছ ধরার নৌকা
    জেলেরা এ নৌকাগুলোতে ভেসে ভেসে দূর নদীর বুকে মাছ ধরে। কিন্তু এই অতি সাধারণ মাছ ধরার নৌকারও আবার রকমফের আছে। কোনোগুলো আকারে হয় ছোট আবার কোনোগুলো হয় বড়ো। যেমন বরিশাল অঞ্চলের নদীতে মাঝারি আকারের এক ধরনের মাঝ ধরার নৌকার দেখা পাওয়া যায়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭.৩৯ থেকে ৯.১০ মিটার হয়। এতে ৩ জন মাঝি বা জেলে থাকে। আবার চাঁদপুরে আরেক ধরনের মাছ ধরার নৌকা দেখা যেতো। এগুলির দৈর্ঘ্য ছিলো ৯.১৫ থেকে ১১.৪৫ মিটার পর্যন্ত। যদিও এখন আর এই নৌকাগুলো দেখা যায় না। এতে মাঝি থাকতো ৮-১০জন করে। উপক‚লীয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় আকারের মাছ ধরার নৌকার দেখা মিলবে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে এগুলো মাছ ধরে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫.২৫ থেকে ১৮.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
    ৯.বালার
    নদীমাতৃক আমাদের এই দেশে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মালামাল পাঠানো বা যাতায়াতের জন্য নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য সেই আগেকার সময় থেকে এখনো পর্যন্ত নৌকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কুষ্টিয়া অঞ্চলে তেমনি এক প্রকার নৌকার দেখা মেলে। এদের নাম বালার। এগুলো আকারে অনেক বড় হয় আর প্রায় ১২-৫৬ টন পর্যন্ত মালামাল বহন করতে পারে। এরা দৈর্ঘ্যে ১২-১৮ মিটার হয়ে থাকে আর বৈঠা বায় ১০-১২ জন মাঝি এবং পাল থাকে দুটো করে। 
    ১০.পদি বা বাতনাই
    বালারের মতো খুলনা অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যে নৌকা ব্যবহৃত হতো এদের নাম হলো বাতনাই বা পদি। বালারের বর্ণনা শুনে যদি অবাক হয়ে থাকো তবে আরও অবাক হবার মতো কথা এখন বলবো। কারণ, এই নৌকাগুলি চালাতে ১৭-১৮ জন মাঝি লাগতো আর এগুলো দৈর্ঘ্যে হতো প্রায় ১৫.২৫-২১.৩৫ মিটার পর্যন্ত। এতে করে ১৪০-১৬০ টন মাল বহন করা যেতো আর ছিলো বিশাল আকারের চারকোণা একটি পাল। কিন্তু এখন এই দৈত্যাকৃতির নৌকাটি আর দেখা যায় না।
    আমাদের এই ছোট সুন্দর বাংলাদেশের নদীতে এক সময় বিভিন্ন ধরনের নৌকা ভেসে বেড়াতো। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো দিন দিন এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক নৌকার নামই চলে গেছে বিলুপ্তির খাতায়। এই নামগুলো এখন শুধু গল্পে বা বইতেই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে নৌকার এই বিচিত্র ভিন্নতার কিন্তু গভীর একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবার পথেই এই ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যর কথা স্মরণ করে রাখতেই যেন সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বিলুপ্তপ্রায় ৫০ টি নৌকা নিয়ে একটি চমৎকার প্রদর্শনী হচ্ছে। এই প্রদর্শনীটি চলবে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত। কাজেই বাঙালী হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই নৌকাগুলো দেখে আসা উচিত। তবে চলো পড়ার পর্ব তো শেষ এবারে সবাই মিলে গিয়ে একবার দেখে আসি আমাদের সেই ঐতিহ্য।
    ১১.কোষা
    দেশের সব অঞ্চলেই কোষা দেখা যায়। অঞ্চলবিশেষে এর আকৃতি সামান্য পরিবর্তন হয়ে থাকে। আকারে ছোট, অনেকটা পারিবারিক নৌকা বলা যায়। বর্ষাকালে আমাদের চরাঞ্চলগুলোয় এ নৌকার আধিক্য দেখা যায়। একটি কোষা নৌকাতে তিন থেকে আটজনের মতো যাত্রী বসতে পারে। এগুলো খেয়ানৌকা হিসেবেও এখন ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু কোষায় পাল, কোনো কোনোটিতে আবার ছইও থাকে। সাধারণত ভাড়ায়চালিত কোষার ক্ষেত্রে পাল ও ছইয়ের ব্যবহার হয়ে থাকে। কোষা লম্বায় ৬ দশমিক ৪০ থেকে ৯ দশমিক ১০ মিটার, প্রস্থে ১ দশমিক ৭৫ থেকে ৩ দশমিক ৩৫ মিটার হয়ে থাকে। এর মাঝি থাকে একজন। কখনো কখনো দুজনও হয়ে থাকে।
    ১২.বিক
    ফরিদপুর অঞ্চলের মালবাহী নৌকা। প্রায় দুই যুগের বেশি সময় আগে নৌকাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বহনক্ষমতা ২৫ থেকে ২৮ টন। এতে মাঝি থাকে সাত থেকে ৯ জন। নৌকাটি লম্বায় ১২ থেকে ১৫ দশমিক ২৫ মিটার, প্রস্থে ৩ দশমিক ০৫ থেকে ৩ দশমিক ৮০ মিটার এবং এর গভীরতা দশমিক ৯০ থেকে ১ মিটার। এর পাল দুটি, বৈঠা থাকে ছয়টি। দুই পালের মাঝখানটা একটি বাঁশের সঙ্গে লাগোয়া। নৌকার ছইটি থাকে পেছনের দিকে এবং আকারে অনেক ছোট।
    ১৩.কলার ভেলা
    চার-পাচটি বা তারও বেশি কলা গাছ একসাথে বেধে তৈরী করা এক ধরনের অস্থায়ী জলযান । কম খরচে তৈরী করা যায় বলে গ্রামবাংলায় এর ব্যপক ব্যবহার রয়েছে । মৃতদেহ সৎকারের কাজেও ব্যবহার করা হত একসময়ে।

     

    ১৪.ছিপ
    ১৫.বালাম
    ১৬.টেডি বালাম
    ১৭.পাতাম 
    ১৮.সরেঙ্গা

    ১৯.বাছারি 
    ২০.পানসি নাও

    বর্ষায় ভাটি অঞ্চলে নাইওরি বহনে সুনামগঞ্জের গস্তি নাও এখনো ধরে রেখেছে তার জনপ্রিয়তা। কুটুমবাড়ি বা মামাবাড়িতে বেড়ানোর জন্যও এর কদর আছে। হাওর এলাকায় একে ‘ছইয়া’ বা ‘পানসি নাও’ বলে।
    প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি মূলত ভাটি এলাকার নৌকা। মালিকরা নিজেদের ডিজাইনে স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে এ নৌকা তৈরি করেন। খরচ পড়ে ইঞ্জিনসহ ৪০-৬০ হাজার টাকা। এতে ১০-১২ জন লোক ধরে। নৌকার ভেতরে আয়েশ করে বসার জন্য বিছানা-বালিশও রাখা হয়। নৌকার গায়ে মিস্ত্রিরাই ফুটিয়ে তোলেন জলজীবনের নানা ছবি। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকায় বর্ষা মৌসুমে অনেক গস্তি নাও চোখে পড়ে। সারাদিনের জন্য একটি গস্তি নাওয়ের ভাড়া পড়তে পারে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

    ২১. খেয়া

     

    সাধারণত ছোট নদীতে মানুষ বা মাল-সামাল. ও অন্যান্য প্রাণী পার করতে ব্যাবহৃত হয়। 
    ২২.শ্যালো নৌকা
    ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে নৌকায় মোটর লাগানো শুরু হয়। এর ফলে নৌকা একটি যান্ত্রিক নৌযানে পরিণত হয়। এ যান্ত্রিক নৌকাগুলো ‌‌‌শ্যালো নৌকা নামে পরিচিতি লাভ করে ; কেননা পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত শ্যালো পাম্পের (Shallow Pump) মোটর (Motor) দিয়ে স্থানীয় প্রযুক্তি দিয়ে এসব নৌকা চালানোর ব্যবস্থা করা হয়।
Leave an answer

Leave an answer

Related Questions