প্রাণীরাও কি স্বপ্ন দেখে?
Sign up to join our community!
Please sign in to your account!
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
ঘুমের একটি পর্যায়ের সঙ্গে স্বপ্নের সম্পর্ক রয়েছে। ইংরেজিতে র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ বা সংক্ষেপে রেম (REM) ঘুম বলা হয় এটিকে। এ ধরনের ঘুমের সময় চোখ খুব দ্রুত নড়াচড়া করে। ঘুমের এ দশাতেই সাধারণত মানুষ সবচেয়ে স্পষ্ট স্বপ্নগুলো দেখে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অনেক প্রাণীই মানুষের মতো এ ধরনের রেম ঘুমের দশা প্রদর্শন করে। তার মানে কি প্রাণীরাও স্বপ্ন দেখে?
ছবি: টেরেসা ইগলেসিয়াস ভিয়া নোয়েবল ম্যাগাজিন
মানুষের ঘুমের একটি বিশেষ দশাকে ইংরেজিতে র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ বা সংক্ষেপে রেম (REM) ঘুম বলা হয়। এ ধরনের ঘুমের সময় চোখ খুব দ্রুত নড়াচড়া করে। ঘুমের এ দশাতেই সাধারণত মানুষ স্বপ্ন দেখে।
কিন্তু প্রাণীরও কি রেম ঘুম আছে বা প্রাণীরা স্বপ্ন দেখে? বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের উত্তর জানতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাম্পিং স্পাইডার নামক এক জাতের মাকড়সা রেম ঘুমের মতো আচরণ প্রদর্শন করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এটির পা কুঁচকে যায়, চোখের রেটিনা সামনে-পেছনে নড়াচড়া করে। মাকড়সার এ আচরণকে রেম ঘুমের খুবই অনুরূপ বলে মন্তব্য করেন জার্মানির ইউনিভার্সিটি অভ কন্সটানজের বাস্তুতন্ত্রবিদ ড্যানিয়েলা রসলার।
মানুষের ক্ষেত্রে রেম ঘুমের পর্যায়ে সবচেয়ে স্পষ্ট স্বপ্নগুলো তৈরি হয়। তাই বিজ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন, যদি মাকড়সাও এ ধরনের ঘুমের নিদর্শন প্রদর্শন করে, তাহলে কি তারাও স্বপ্ন দেখে?
রসলার ও তার সহকর্মীরা ২০২২ সালে ৩৪টি সালে জাম্পিং স্পাইডারের ওপর গবেষণা করে দেখেন, প্রতি ১৭ মিনিট পরপর এ মাকড়সাগুলোর ভেতর রেম ঘুমের অনুরূপ পর্যায় তৈরি হয়। কিন্তু তারা অবশ্য এটা প্রমাণ করতে পারেননি, মাকড়সাগুলো আদতেই তখন ঘুমাচ্ছে কি না।
এখন পর্যন্ত জানা গেছে, প্রাণিকুলে কেবল মানুষেরই ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যদি প্রমাণ করতে পারেন, জাম্পিং স্পাইডারও ঘুমায় এবং রেম ঘুমের সদৃশ যে দশা প্রদর্শন করে সেগুলো আদতেই রেম ঘুম, তাহলে মাকড়সারও স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যেই রেম ঘুমের অনুরূপ দশা পর্যবেক্ষণ করছেন। এ তালিকায় আছে স্থলের মাকড়সা, গিরগিটি থেকে শুরু করে সামুদ্রিক কাটলফিশ, জেব্রা ফিশ ইত্যাদি।
দ্রুত চোখ নড়াচড়ার পাশপাশি রেম ঘুমের আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন, শরীরের ঐচ্ছিক পেশির কিছু সময়ের জন্য অচল হয়ে যাওয়া; মাঝেমধ্যে শরীর ঝাঁকি দেওয়া এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম, শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃৎকম্পের হার বেড়ে যাওয়া।
১৯৫৩ সালে ঘুমন্ত শিশুদের মাঝে প্রথম এ ধরনের ঘুমদশা প্রত্যক্ষ করা হয়। অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্য বিড়াল, ইঁদুর, ঘোড়া, ভেড়া, আর্মাডিলো ইত্যাদির মাঝেও এ ধরনের ঘুমের অবস্থা দেখা গেছে।
স্বাভাবিক ঘুমের সময় মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্রম ছন্দবদ্ধ থাকে। কিন্তু ঘুমের রেম দশায় মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের তারতম্য দেখা যায়। আবার স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রেম ঘুমের দশা সবার ক্ষেত্রে একই দেখায় না।
২০১২ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো কাটলফিশে রেম ঘুমের নমুনা লক্ষ করেন। প্রায় ৩০ মিনিট অন্তর মাছগুলো রেমদশা প্রদর্শন করে। এ ধরনের মাছ সজাগ অবস্থায় শত্রুর চোখ এড়াতে শরীরের রং বদল করে। কিন্তু গবেষকেরা দেখেন, রেম ঘুমের দশায়ও মাছের দেহের রং পরিবর্তন হচ্ছে। তারা সিদ্ধান্তে আসেন, ঘুমন্ত অবস্থায় মাছের মস্তিষ্কের সিগন্যালে কোনো কারণে মারাত্মক তারতম্য হচ্ছে বলেই মাছ ঘুমের মধ্যেও দেহের রং পরিবর্তন করছে।
এরপর অক্টোপাসেও একই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। বেয়ার্ডেড ড্রাগনের মস্তিষ্কের ইলেকট্রোড থেকে আসা সিগন্যাল পরীক্ষা করেও রেম ঘুমের দশা পাওয়া গিয়েছে।
এ ধরনের দশায় প্রাণীগুলো ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো আচরণ করে। এ কারণেই এসব প্রাণীর স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিচ্ছেন গবেষকেরা।
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে রেম ঘুমের সংযোগ পাওয়া গিয়েছে। কয়েকটি ইঁদুর গোলকধাঁধার ভেতর দৌড়ানোর পর ঘুমানোর সময় বিজ্ঞানীরা এগুলোর মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন, ইঁদুরগুলো ঘুমিয়ে থাকলেও এগুলোর মস্থিষ্কে দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী নিউরন সিগন্যাল দিচ্ছিল। এ থেকে ধারণা করা হয়, ওই ইঁদুরগুলো হয়তো ঘুমের মধ্যে কোনো স্বপ্ন দেখছিল এবং ওই স্বপ্নের পরিবেশ তাদের মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট নিউরনকে সচল করে তুলেছিল।
বিভিন্ন গবেষণায় এসব ইঙ্গিত পেয়ে বিজ্ঞানীরা তাই দৃঢ়ভাবেই মনে করেন, মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীর স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে রেম ঘুম ও স্বপ্নের মধ্যকার স্পষ্ট কোনো সংযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। মানুষ রেম ঘুম ছাড়াও স্বাভাবিক ঘুমেও স্বপ্ন দেখতে পারে।
মানুষ স্বপ্ন দেখলে তা পরে বলতে পারে। কিন্তু প্রাণীদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। আর প্রাণীরা স্বপ্ন দেখে কি না তা প্রমাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ এটাই।
এদিকে রেম আদতে কেন হয় তা নিয়েও কোনো অবিসংবাদিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্বের মতে, রেম মস্তিষ্ক গঠনে ও মস্তিষ্ককে পুনরায় সংগঠিত করতে সহায়তা করে।
অন্য তত্ত্বগুলোর মতে রেম মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে, দেহের নড়নচড়ন ব্যবস্থার বিকাশে সাহায্য করে, জাগ্রত অবস্থায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় দরকারি মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরনকে সচল রাখে বা মস্তিষ্কের তাপমাত্রা বাড়ায়।
কিন্তু মানুষের সঙ্গে দূরবর্তী সম্পর্কের অন্য প্রাণীও যদি রেম ঘুম যায়, তাহলে তার অর্থ হচ্ছে এ ধরনের শারীরিক দশার প্রয়োজনীয়তা উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সব বিজ্ঞানী আবার অন্য প্রাণীর রেম ঘুমের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া – লস অ্যাঞ্জেলেস-এর স্নায়ুবিদ জেরোম সিজেল মনে করেন, মাকড়সার মতো অনেক প্রাণী হয়তো ঘুমায়ই না। তিনি বলেন, ‘প্রাণীরা হয়তো এমন সব কাজ করে যেগুলো দেখতে মানুষের কাজের মতো মনে হয়, কিন্তু প্রাণীর ওসব কাজের শারীরবৃত্ত মানুষের মতো নয়।’
প্রাণীরা যদি আদতেই স্বপ্ন দেখতে পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয় — কী ধরনের স্বপ্ন দেখে তারা? স্বপ্ন তৈরি হয় স্বপ্নদ্রষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, তাই প্রাণী স্বপ্ন দেখলে এটি পৃথিবীকে তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সক্ষমতা পাবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন দার্শনিক ডেভিড এম পেনা-গুজম্যান।
প্রাণী স্বপ্ন দেখতে পারলে তাদের কল্পনাশক্তিও থাকবে, বলেন তিনি। সেক্ষেত্রে এ ধরনের প্রাণী নিয়ে মানুষকে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।
ক্যারোলিন উইলক, নোয়েবল ম্যাগাজিন [Daily Star]