দুর্গা (Durga) ঠাকুর তৈরিতে পতিতালয়ের মৃত্তিকা লাগে কেন?
Sign up to join our community!
Please sign in to your account!
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
দেবী দুর্গা ৯টি রূপে পূজিত হন৷ এই নবম রূপটিই আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি৷ মনে করা হয়, সে কারণেই দুর্গা ঠাকুর তৈরিতে পতিতালয়ের মৃত্তিকা লাগে।
উমা আসছেন ঘরে। তাই সেজে উঠছে বাড়ি। দেওয়ালে নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে, ঠাকুরদালান জুড়ে আঁকা হচ্ছে আলপনা। নানা রং দিয়ে নকশা কাটছেন বাড়ির বউ-মেয়েরা। ব্যস্ত বাড়ির জ্যাঠা-কাকারাও। আর ঠাকুরদালানের এক কোণে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে উমার মৃন্ময়ী মূর্তি। বৃদ্ধ শিল্পীর হাতে প্রাণ পাচ্ছেন মহিষাসুরমর্দিনী। তবে দেবীর এই মূন্ময়ী মূর্তির সব মাটিই যে বিশুদ্ধ, এমন নয়। সেখানে মেশানো আছে ‘অশুদ্ধ’ পতিতালয়ের মৃত্তিকা। শাস্ত্র মেনেই এই কাজ করছেন শিল্পী।
‘অশুদ্ধ’? সমাজের ‘বিদ্বজন’-দের মতে পতিতাপল্লি মানেই অশুদ্ধ জায়গা। সেখানে প্রতি রাতে চলে ‘বেলেল্লাপনা’। বাবুরা যায় তাদের এক রাতের রক্ষিতা খুঁজতে। তারপর কোনও একটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ। আর তারপর যা হয়, তা তো কহতব্য নয়। বাবুরা না হয় পুরুষমানুষ। তাদের সম্পূর্ণ ‘অধিকার’ আছে। কিন্তু সেখানকার মেয়েগুলো? লজ্জা নেই! কাপড় খুলে এক এক রাত এক এক জনের সঙ্গে কাটাতে তাদের মানে বাধে না! এমন মেয়েরা তো ‘অশুচি’।
সমাজ যাদের এভাবে দূরে ঠেলে রেখেছে, আদিশক্তি কিন্তু তাদেরই কাছে টেনে নিয়েছে। তাঁর ত্রিনয়নে সবাই সমান। বলা ভাল, এই ‘অশুচি’ পতিতাপল্লির বেশ্যারা বরং তাঁর নজরে উঁচু স্থানে আছেন। তাই তো দেবীমূর্তি গড়তে অবশ্যম্ভাবী এখানকার মাটি। শাস্ত্রে তেমন বিধানই দেওয়া আছে। বলে আছে, অকালবোধনের সময় মহিষাসুরমর্দিনীকে গড়তে হবে পতিতাপল্লীর মৃত্তিকাতেই। সম্পূর্ণ না হলেও আংশিকভাবে এই মাটি লেপতেই হবে চিন্ময়ীর কাঠামোয়। কিন্তু কেন?
পুরুষ পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনখেলায় মাতে। আর ঠিক সেই কারণেই সে তার জীবনের সমস্ত সঞ্চিত পুণ্য সেখানে ফেলে আসে। বদলে পুরুষ সেখান থেকে মুঠো ভরতি করে নিয়ে আসে পাপ। বহু পুরুষের পুণ্যে সেখানকার মাটি পরিপূর্ণ। এক কথায় সমাজকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য রকরে এই ‘অশুদ্ধ’ বণিতারাই। তাই পুজোর মূর্তি তৈরিতে অনস্বীকার্য পতিতালয়ের মাটি।
তবে এর পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনিও আছে। পুরাণে বলা আছে, ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভাঙাতে উঠেপড়ে লাগেন দেবরাজ ইন্দ্র। স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে তিনি ঋষির ধ্যানভঙ্গের জন্য পাঠান। অপ্সরার নাচে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভেঙে যায়। রাজর্ষির মতো একজনের ধ্যান ভাঙানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। দেবরাজ নিজে তা পারেননি। অথচ এক অপ্সরা অবলীলায় সেই কঠিন কাজ সম্পন্ন করেন। হোক না স্বর্গের, তবু মেনকা তো আর সতী রমণীর পর্যায়ে পড়েন না।
অকালে মহামায়া মোট ন’টি রূপে পূজিত হন। এই নবম কন্যাই হলেন পতিতালয়ের প্রতিনিধি। অষ্টকন্যার পর শেষ পুজোটি তাই পায় তারাই। সমাজ যাদের কোণঠাসা করে রাখে সারাবছর, দেবীবন্দনায় তারাই পূজিত হন মানুষের মনে।
তবে কারণ যাই হোক, ‘অশুদ্ধ’ নারীদের মাটি দিয়ে যে মূর্তি গড়া, তার সামনেই নতজানু হয় হাজার হাজার হাজার ‘বিশুদ্ধ’ পুরুষ। এ কি কম পাওয়া? প্রতিবছর এভাবেই প্রতিটি বাড়ির ঠাকুরদালানে বা পাড়ার মণ্ডপে হয়ে যায় এক নিঃশব্দ বিপ্লব। সকলকে হারিয়ে, মহিষাসুরমর্দিনীর আশীর্বাদ নিয়ে যুদ্ধজয়ের হাসি হাসেন শুভকাজে ব্রাত্য পতিতারাই। প্রতিবছর।
সূত্রঃ sangbad pratidin