‘ছিন্নপত্র’তে প্রকৃতিপ্রীতি এবং মানবপ্রীতির গভীর অনুভবের সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছে এক অনাবিল কৌতুকরস ‘ছিন্নপত্র’ অবলম্বনে এই কৌতুকরসের দৃষ্টান্ত ও স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

সমগ্র বিশ্বে কবি-দার্শনিক হিসাবে সম্মানিত রবীন্দ্রনাথ আজীবন কৌতুকপ্রিয়। কবির অন্তরঙ্গ জীবনের সঙ্গে যাঁরা ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত, তাঁরাই তাঁর কৌতুকপ্রবণতার সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন নানা রচনায়। মৈত্রেয়ী দেবী, রাণী চন্দ, রাণী মহলানবিশ, প্রমথনাথ বিশী, নন্দিতা কৃপালনি, অমিতা ঠাকুর প্রমুখের রবীন্দ্র স্মৃতিচারণগুলিতে রবীন্দ্র-কৌতুকের অজস্র দৃষ্টান্ত আছে।

নিটশে বলেছিলেন— ‘Man is the animal most capable of suffering and he had to invent laughter to preserve his sanity.’ ‘পঞ্চভূত’-এর প্রবন্ধে কৌতুকমুখরতার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথও মানুষের এই অসামান্য গুণটির উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে ‘কৌতুকহাস্য’ ও ‘কৌতুক হাস্যের মাত্রা’ রচনা দুটিতে এই কৌতুকের কারণ অনুসন্ধান করেছেন ভূতপঞ্চক। ভারতীয় অলংকার শাস্ত্রে হাস্যরসকে বলা হয়েছে শুভ্রবর্ণ। এই শুভ্রতা তো নির্মল চিদাকাশেরই প্রতীক। রবীন্দ্রনাথও কৌতুক বা হাস্যকে শুভ্র-সুন্দর চিত্তের মুক্তি বলেই মনে করেছেন। চতুর্মুখ বিধাতার মতো রবীন্দ্রনাথ নিজেরও চতুর্মুখী প্রকাশ ধারার উল্লেখ করেছেন ‘খাপছাড়া’-র উৎসর্গপত্রে। সেখানে একমুখে দর্শন, একটিতে জ্ঞান, একটিতে রসসিক্ত কবিতা এবং চতুর্থটিতে প্রকাশিত হয় নির্মল হাসি। বৃদ্ধ বয়সেও ‘ছেলেমিতে সিদ্ধ’ এই কবি জানিয়ে গেছেন হাস্যরসের প্রতি তাঁর আত্মার উচ্চকণ্ঠ অধিকার— “এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্লামি।”

পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্বে হাসির কারণ সম্পর্কে নানাবিধ মতবাদ প্রচলিত আছে। শ্রেষ্ঠতা মতবাদে (Supe riority Theories) মানুষ কোনো কারণে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে অন্যের প্রতি করুণামিশ্রিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হাসে। মনঃসমীক্ষণ মতবাদে (Psychoanalytic Theories) হাসি হল শারীরিক একটি সংবর্তক্রিয়া। সর্বাধিক অধিক প্রচলিত মতবাদ হল অসংগতি মতবাদ (Incongruity Theories)। ‘পঞ্চভূত’ গ্রন্থের ‘কৌতুক হাস্যের মাত্রা’ প্রবন্ধেও রবীন্দ্রনাথ কৌতুকের মধ্যে লক্ষ করেছেন—ইচ্ছার সহিত অবস্থার অসঙ্গতি, উদ্দেশ্যের সহিত উপায়ের অসঙ্গতি, কথার সহিত কার্যের অসঙ্গতি।

‘ছিন্নপত্র’ রচনাকালে প্রকৃতির অবাধ-উন্মুক্ত আলিঙ্গনে বিমুগ্ধ এবং হাসিকান্না-তাড়িত সাধারণ পল্লি মানুষের সংসর্গে-সহানুভূতিময় রবীন্দ্রনাথ কখনও কাব্যময় ভাষায় তাঁর সৌন্দর্য সম্ভোগ কখনও অনুভবের গভীর স্তর থেকে তাঁর দার্শনিক চিন্তা, কখনও বা আবেগময় উচ্চারণে তাঁর পৃথিবী ও মানবপ্রেম ব্যক্ত করেছেন বারংবার। কিন্তু সেই সব গভীর ও আবেগময় উচ্চারণের পাশাপাশি ক্ষণে ক্ষণে ঝলসিত হয়েছে তাঁর লঘু অন্তরঙ্গ হৃদয়টির কৌতুকময় দীপ্তি।

প্রমথ চৌধুরীর ‘রায়তের কথা’ গ্রন্থের ভূমিকায় নিজের সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন— “আমার জন্মগত পেশা জমিদারি, কিন্তু আমার স্বভাবগত পেশা আশমানদারি।”

অর্থাৎ কর্মজীবনের সেই বিশেষ পর্বে রবীন্দ্রনাথের স্বভাব বা মনোগত ইচ্ছার সঙ্গে কর্মের এক বিপুল অসংগতি দেখা দিয়েছিল। জমিদারির গুরুদায়িত্ব পালনের পক্ষে তাঁর রোমান্টিক কবিমন আদৌ অনুকূল ছিল। না। অথচ প্রতি মুহূর্তে পরিচারক-আমলা-খানসামা পরিবৃত হয়ে, জমির আয়ব্যয় ও প্রজার খাজনা আদায়ের জমা-খরচের হিসাবের পেষণে তাঁর সৌন্দর্য-সম্ভোগ ও কাব্যচর্চার ব্যাঘাত ঘটছিল। এই অপরিমেয় মানসিক যন্ত্রণাকে রবীন্দ্রনাথ প্রতি মুহূর্তে লঘু হাস্যপরিহাসের ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে অন্তরাত্মার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অবিচল আনন্দের উৎসটিকেই সুপ্রমাণ করেছেন।

কালীগ্রামের কাছারি গৃহে গ্রামের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জমিদারবাবুর নিকট সাধু ভাষায় অনুদান প্রার্থনার মধ্যে হাস্যরসের উপকরণ ছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই হাস্যকর পরিস্থিতির মধ্যেও জমিদারের গাম্ভীর্য রক্ষার আপ্রাণ প্রচেষ্টার মধ্যে অসংগতিজনিত যে অনাবিল হাস্যরস উদ্ভূত হয়েছে তা তুলনারহিত [ছিন্নপত্র—১৭]। সাজাদপুরের বিদ্যালয়-শিক্ষকগণ জমিদার মশায়ের দর্শনাভিলাষী হয়ে এলেও অনুরূপ কৌতুককর অবস্থার সৃষ্টি হয়— “তারা কিছুতেই উঠতে চান না, অথচ আমার আবার তেমন কথা জোগায় না—পাঁচ মিনিট অন্তর দুই-এক কথা জিজ্ঞাসা করি, তার এক-আধটা উত্তর পাই, তার পরে বোকার মতো বসে থাকি, কলম নাড়ি, মাথা চুলকোই—”

৩৭ সংখ্যক পত্রে শিলাইদহে প্রকৃতি-রসসম্ভোগ মুহূর্তে ভজিয়ার আবির্ভাবও কৌতুকাবহ, যাকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—“মাথার উপরে একেবারে হঠাৎ বিনা নোটিশে ভজিয়াঘাত।”

এরকম দৃষ্টান্ত অন্যত্রও আছে— “–হেনকালে পূর্বসঞ্চিত বিন্দু বিন্দু বারি-শীকর-বর্ষী তরুতলে গ্রামপথে উক্ত গিরিবালার আসা উচিত ছিল, তা না হয়ে আমার বোটে আমলাবর্গের সমাগম হল; তাতে করে সম্প্রতি গিরিবালাকে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে হল।”

এই উদাহরণগুলিতে সর্বত্রই ইচ্ছার সঙ্গে অবস্থার অসংগতি যে অবাঞ্ছিত বিরক্তি বা মানসিক চাপ তৈরি করেছে, তা বস্তুত কবিমানসের উপর পীড়ন। এই মানসিক পীড়ন বা চাপ থেকে মুক্তির এক পন্থাই তো কৌতুক। ‘পঞ্চভূতেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—“আমার মতে কৌতুক—চেতনাকে পীড়ন”। উদাহরণগুলিতে রবীন্দ্রনাথের কবি ও সৌন্দর্যপিপাসু আত্মার প্রতি যে মৃদু পীড়নের উল্লেখ আছে, তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে কৌতুক হাস্যের উৎস।

আত্মপীড়নের কিছু উচ্চমাত্রার দৃষ্টান্তও ‘ছিন্নপত্র’তে অনেকগুলি পাওয়া যাবে। ক্লান্তিকর-কষ্টকর প্রাণান্তকর পরিস্থিতিও ক্ষণিক সময়ের ব্যবধানে পত্ররচনার সময় কৌতুকের নির্মল বিভায় উজ্জ্বল হয়েছে। সাহিত্যতত্ত্বে সময়ের ব্যবধান যে কতখানি মূল্যবান, ‘ছিন্নপত্র’-র এই দৃষ্টান্তগুলি তার প্রমাণ। ওড়িশায় স্টিমার ঘাট থেকে দুর্বিষহ পালকিযাত্রার বর্ণনাও একরাত্রির ব্যবধানে অপরিসীম কৌতুকরসে প্রগল্ভ হয়ে উঠেছে— “কোমর টন্‌টন্‌ করছে, পা ঝিঝিন্ করছে, মাথা ঠঠক্ করছে—যদি নিজেকে চার ভাঁজ করে, মুড়ে রাখবার কোনো উপায় থাকত তা হলেই এই পাল্কিতে কিছু সুবিধে হতে পারত।”

৯ সংখ্যক পত্রে দার্জিলিং যাত্রার বর্ণনাও অসাধারণ কৌতুকময়— “কিন্তু এই দুদিনে আমি এত বাক্স খুলেছি এবং বন্ধ করেছি এবং বেঞ্চির নীচে ঠেলে গুঁজেছি এবং উক্ত স্থান থেকে টেনে বের করেছি, এত বাক্স এবং পুঁটুলির পিছনে আমি ফিরেছি এবং এত বাক্স এবং পুঁটুলি আমার পিছনে অভিশাপের মতো ফিরেছে, এত হারিয়েছে এবং এত ফের পাওয়া গেছে এবং এত পাওয়া যায় নি এবং পাবার জন্য এত চেষ্টা করা গেছে এবং যাচ্ছে যে, কোনো ছাব্বিশ বৎসর বয়সের ভদ্র সন্তানের অদৃষ্টে এমনটা ঘটে নি। আমার ঠিক বাক্স-phobia হয়েছে, বাক্স দেখলে আমার দাঁতে দাঁত লাগে।”

লক্ষণীয় ভাষা-কুশল রবীন্দ্রনাথ এখানে ‘এবং’-এর বাহুল্যে অসাধারণ কৌশলে ব্যস্ততা-বিরক্তি ও প্রাণান্তকর পরিশ্রমকে হাস্যরসে অনায়াসে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন। এছাড়াও ১০ সংখ্যক পত্রে শিলাইদহের নদীর চরে পরিজনদের হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্যে, ১১ সংখ্যক পত্রে কলকাতায় স্বগৃহে অভ্যর্থনা-দৃশ্যে, ১২ সংখ্যক পত্রে সাজাদপুর কুঠিবাড়িতে সাহেবকে আমন্ত্রণ করে আবর্জনা পরিষ্কারের বর্ণনায়, ৪০ সংখ্যক পত্রে সাহেব-মেমকে আপ্যায়নের বর্ণনায় অসামান্য হাস্যরসপ্রবাহ লক্ষণীয়। সর্বাপেক্ষা কৌতুককর বর্ণনা এবং কবির ব্যক্তিগত নাকাল দৃশ্যের বিবরণ পাওয়া যাবে ‘ছিন্নপত্র’র ৪৮ সংখ্যক পত্রে। বীরভূমের প্রচণ্ড ঝড়ের দাপটে ধুলো-কাদায় বিভূষিত রবীন্দ্রনাথ অপরিমেয় কৌতুকে বৈষ্ণব কবিদের রোমান্টিক অভিসার-বর্ণনাকে কটাক্ষ করেছেন এই পত্রে— “বৈষ্ণব কবিরা গভীর রাত্রে ঝড়ের সময় রাধিকার অকাতর অভিসার সম্বন্ধে অনেক ভালো ভালো মিষ্টি কবিতা লিখেছেন, কিন্তু একটা কথা ভাবেন নি, এরকম ঝড়ে কৃষ্ণের কাছে তিনি কী মূর্তি নিয়ে উপস্থিত হতেন।”

শ্রীশচন্দ্রকে লেখা ‘ছিন্নপত্র’র ৭ সংখ্যক চিঠিতে কোমরে বাতের যন্ত্রণা প্রসঙ্গে অসাধারণ হাস্যরসের অবতারণা করা হয়েছে। এই সমস্ত বর্ণনাগুলিই আসলে কবির নিজের মর্মান্তিক যন্ত্রণা, হাস্যকর অবস্থা এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আর্তনাদের কৌতুকমূর্তি। এবং সেজন্যই নিঃসংশয়ে বলা যায়, আত্মার ক্রন্দন যেহেতু এই হাস্যরসের কেন্দ্রীয় উৎস, সেহেতু ‘ছিন্নপত্র’র হাস্যরসের প্রধান প্রকৃতি Humour বা নির্মল কৌতুক। রবীন্দ্র সমালোচক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে— “জীবন রসিকের ক্ষোভ প্রকাশের সহজ উপায় হইল humour-এর মধ্যবর্তিতায়—এই humour-এর মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথ তাঁহার প্রতিবাদতিক্ততাকে নিঃশেষে মুক্তি দিয়াছেন।”

নিজের অবস্থা নিয়ে কৌতুক ছাড়াও বহু বাহ্য ঘটনা, অপর ব্যক্তি, গ্রাম্য সংস্কার, বিচিত্র সংলাপ ইত্যাদির মধ্যেও অনেক কৌতুকহাস্যের উপকরণ আবিষ্কার করেছেন রবীন্দ্রনাথ ভাঙা মাস্তুল নিয়ে ছোটো ছেলেদের ক্রীড়া-আমোদ (২৮), কটকাভিমুখী স্টিমারে অঘোরবাবুর সব কিছুতে ‘মামাশ্বশুরের ভাগনে’ বলে উল্লেখ (৩১), নিজের সন্তানকে মেমের ধমক— ‘What a little শুয়োর you are।’ (৪০), টেলিগ্রামের এই হাস্যকর ভাষা—’Missing gown lying post office’-এর দুটো অর্থ হতে পারে। এক অর্থ হচ্ছে, হারা গাত্রবস্ত্র ডাকঘরে শুয়ে আছেন; আর-এক অর্থ হচ্ছে, গাউনটা মিসিং এবং পোস্ট-অফিসটা লাইং (৮৩)।

রবীন্দ্রসাহিত্যে হাস্যরসের বিচিত্র প্রকৃতিরই বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু ‘ছিন্নপত্র’তে কেবলমাত্র Humour বা অনাবিল কৌতুকেরই কলোচ্ছ্বাস। বড়ো জোর সেখানে কিছু Furn বা নিছক মজা আছে। কিন্তু ব্যঙ্গ বা Satire Pun বা শব্দ নিয়ে খেলা, কিংবা Wit বা বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকের পরিমাণ অতি নগণ্য। যেমন Pun-এর দৃষ্টাত্ত–‘যুদ্ধ জমানো সহজ, গল্প জমানো সহজ নয়’ (১৪৭)। এরকম Wit-এর দৃষ্টান্ত—“পৃথিবীতে আমরা যাদের জানি সবাইকে ফুটকি লাইনে জানি—অর্থাৎ মাঝে মাঝে অনেকখানি ফাঁক……..। অপরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসাবে বোধ হয় সকলেই অন্তর্যামী ছাড়া আর সকলের কাছেই দুষ্প্রাপ্য” (১২৮), Irony-র তেমন দৃষ্টান্ত উদ্ধারের অবকাশ পত্রাবলিতে থাকা সম্ভব নয়, তবে Irony বিষয়ক একটি আলোচনা ‘ছিন্নপত্র তৈ আছে— ‘‘জীবনটা একটা গম্ভীর বিদ্রূপ, এর মজাটা বোঝা একটু শক্ত—কারণ, যাকে নিয়ে মজা করা হয়, মজার রসটা সে তেমন গ্রহণ করতে পারে না। সদ্যোনিদ্রোখিত হতবুদ্ধি নিরীহ লোকের মাথার উপরে বাড়ির আস্ত ছাদটা ভেঙে আনা কি কম ঠাট্টা! হতভাগ্য লোকটা যেদিন ব্যাঙ্কে চেক লিখে রাজমিস্ত্রির বিল শোধ করছিল, রহস্যপ্রিয়া প্রকৃতি সেই দিন বসে বসে কত হেসেছিল।”

রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সাহিত্যধারা অনুসরণ করলেই কৌতুকহাস্যের এক অনাবিল স্রোত চোখে পড়বে। ‘খাপছাড়া’, ‘প্রহাসিনী’, ‘ব্যঙ্গকৌতুক’, ‘হাস্যকৌতুক’ ইত্যাদি ছাড়াও গল্পে-উপন্যাসে-নাটকে সেই কৌতুকবিভা মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎচমকের মতো দেখা দিয়েছে। কাব্যিকতা দার্শনিকতা-কর্তব্যকর্মের ব্যস্ততার মধ্য থেকে ‘ছিন্নপত্র’তেও সেই কৌতুকের কারুকার্য লক্ষণীয়। ‘প্রহাসিনী’-র ভূমিকায় নিজের এই হাস্যমুখর কৌতুক প্রবণতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ যথার্থই লিখেছেন— “আমার জীবনকক্ষে জানি না কী হেতু, মাঝে মাঝে এসে পড়ে খ্যাপা ধূমকেতু। তুচ্ছ প্রলাপের পুচ্ছ শূন্যে দেয় মেলি, ক্ষণতরে কৌতুকের ছেলেবেলা খেলি নেড়ে দেয় গম্ভীরের ঝুঁটি।”