১. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. দুষ্প্রাপ্যতা কাকে বলে?

খ. মিশ্র অর্থব্যস্থায় মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হয়?

গ. উদ্দীপকে যে মেীলিক অর্থনৈতিক সমস্যার কথা উপস্থাপিত হয়েছে তা

ব্যাখ্যা করো?

ঘ. E ও F বিন্দুতে উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সম্ভবনা ও যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো?

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অভাবের তুলনায় সম্পদের স্বল্পতা বা অপর্যাপ্ততাকেই অর্থনীতিতে দুষ্প্রাপ্যতা বলে।

খ. মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সাধারণত স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থায় বাজার মূল্য নির্ধারিত হয়। তবে মূল্য নির্ধারণে মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রাসংকোচনের সময় সরকারি হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়।

মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতা পারস্পারিক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার দ্বারা বাজারে দাম নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে বাজারে চাহিদা ও যোগান ভহমিকা রাখে। দ্রব্যের দাম তার চাহিদা ও যোগান দ্বারা নির্ধারিত হলেও দামস্তরের অতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতি সরকারি হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে করা হয়। এয়াড়া অত্যবশ্যকিয় দ্রবের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। অর্থাৎ মিশ্র অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারিত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত উপাদন সম্ভবনা রেখা (PPC) -এর মাধ্যমে অর্থনীতির মেীলিক সমস্যা ‘নির্বাচন’ এর কথা উপস্থাপিত হয়েছে।

উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা হলো এমন একটি রেখা, যার প্রতিটি বিন্দুতে নিদিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ও চলতি প্রযুক্তির সাপেক্ষে দুটি উৎপন্ন দ্রবের সম্বাব্য বিভিন্ন সংমিশ্রণ নির্দেশিত হয়। তাই এই রেখার মাধ্যমে কোন দ্রব্য কতটুকু উৎপাদন করা হবে, তা ব্যাখ্যা করা যায়।

উদ্দীপকের চিত্রে লক্ষ করা যায়, উৎপাদন সম্বাবনা রেখা (PPC)-এর B বিন্দুতে ‘Y ’ দ্রব্য OY1 ও ‘X ’ দ্রব্য OX1 পরিমাণ এবং C বিন্দুতে Y দ্রব্য OY2 ও X দ্রব্য OX2 পরিমাণ উৎপাদন করা যায়। এখন, প্রয়োজনতার ভিত্তিতে উৎপাদনকে নির্বাচন করতে হবে তিনি কোন বিন্দুতে উৎপাদন করবেন। যেমন- ‘X ’ দ্রব্যের প্রয়োজন বেশি হলে C বিন্দুতে এবং ‘Y ’ দ্রব্যের প্রয়োজন বেশি হলে B বিন্দুতে উৎপাদন করতে হবে। এভাবে PPC-মাধ্যমে মেীলিক অর্থনৈতিক সমস্যা ‘নির্বাচন’ এর বিষয়টি উপস্থাপিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকের চিত্রে উল্লেখিত E বিন্দু অদক্ষ অঞ্চল এবং F বিন্দু অ-অর্জনযোগ্য অঞ্চলে বিদ্যমান E ও F উৎপন্ন করা যথাক্রমে অযেীক্তিক ও অসম্ভব।

সাধারণত উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার নিচে বা বাম দিকে যেকোন বিন্দুতে সম্পদের অদক্ষ ব্যবহার নির্দেশ করে। এজন্য এই অঞ্চলকে অদক্ষ অঞ্চল বলে। আর উৎপাদন সম্বাবনা রেখার উপরে বা ডান দিকে যেকোন বিন্দুতে বর্তমান প্রযুক্তিতে উৎপাদন সম্ভব নয়। এজন্য এই অঞ্চলকে অ-অর্জনযোগ্য অঞ্চল বলে।

চিত্রে লক্ষ করা যায়, E বিন্দুতে উৎপাদন করা হলে ‘X’ দ্রব্য OX1 এবং ‘Y’ দ্রব্য OY1 পরিমাণ উৎপাদন করা যায়। এখন, প্রাপ্ত সম্পদের ভিত্তিতে ‘X’ দ্রব্রের উৎপাদন স্থির রেখে ‘Y’ দ্রব্যের উৎপাদন Y1 Y2 বাড়ানো সম্বভ। অথবা ‘Y’ দ্রব্যের উৎপাদন স্থির রেখে ‘X’ দ্রব্যের X1 X2 পরিমান বাড়ানো যায়। কাজেই E বিন্দুতে উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সম্পদের অদক্ষ ব্যবহার নির্দেশ করে। তাই E বিন্দুতে উৎপাদন করা যেীক্তিক হবে না।

আবার F বিন্দুর ক্ষেত্রে X দ্রব্য OX2 এবং Y দ্রব্য OY2 পরিমাণ উৎপাদিত হবে। অর্থাৎ F বিন্দুটি B ও C বিন্দুর চেয়ে বেশি উৎপাদন নির্দেশ করে। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিতে F বিন্দুতে উৎপাদন সম্ভব নয়। অর্থাৎ, F বিন্দুতে উৎপাদন কাম্য হলেও নিদিষ্ট প্রযুক্তিতে উৎপাদন করা অসম্ভব।

২. নিচের X ও Y নামক দুটি দ্রব্য উৎপাদনের একটি উৎপাদন সম্ভাবনা সূচি দেওয়া হলো-

 X-দ্রব্য  Y-দ্রব্য  সংমিশ্রণ
 ৮  ০  A
 ৫  ৫  B
 ০  ৮  C

ক. ব্যষ্টিক অর্থনীতি কী?

খ. ‘‘নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে কোন ক্ষেত্রে উন্নত?’’ ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দিপক হতে একটি উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অংকন করো?

ঘ. প্রাপ্ত উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অনুযায়ী উভয় দ্রব্য একই সঙ্গে ৮ একক করে উৎপাদন করা সম্ভব নয় কেন? বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অর্থনীতির যে শাখায় অর্থনৈতিক এককের আচারন ও কার্যকলাপ পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।

খ. সামাজিক কল্যাণ অর্জনে নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে উন্নত।

নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীভাবে সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ অর্জনে মাধ্যমে শোষনমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষক্ষ অর্থনীতির সকল কার্যক্রম পরিচালিত করা হয়। অপরদিকে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মূলত ব্যাক্তিকেন্দ্রিক মুনাফা সর্বাধিক করার লক্ষক্ষ অর্থনীতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অর্থাৎ এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বন্টন, ভোগ সর্বক্ষেত্রেই বেসরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন এ ও মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এতে রাষ্টীয় স্বার্থ তথা সামাজিক কল্যাণ ব্যাহত হতে পারে। তাই নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থাকে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে উন্নত মনে করা হয়।

গ. উদ্দিপকের তথ্যেও আলোকে নিচে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন করা হলো:

উপকরণের দক্ষ বন্টন এর মাধ্যমে দুটি পণ্যেও উৎপাদনযোগ্য সংমিশ্রণ বিন্দুগুলো নিয়েই উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা (PPC) সৃষিট হয়।

প্রদত্ত সূচির আলোকে বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার কওে শুধু X দ্রব্য উৎপাদন করা যায় ৮ একক, যা A বিন্দু দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে। আবার ৫ একক X দ্রব্য এবং ৫ একক Y দ্রব্য উৎপাদন করা যায় B বিন্দুতে। এরপর C বিন্দুতে X দ্রব্য উৎপাদন না করে শুধু Y দ্রব্য উৎপাদন করা যায় ৮ একক। এখন প্রাপ্ত A, B, C বিন্দুগুরো যোগ করে AC উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা পাওয়া যায়। এটিই উদ্দিপকের আলোকে অঙ্কিত উৎপাদন সম্বাবনা রেখা।

ঘ. প্রাপ্ত উৎপাদন সম্বাবনা রেখার ক্ষেত্রে D বিন্দু (X =৮ একক ও Y= ৮ একক) অ-অর্জনযোগ্য অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় উৎপাদন সম্ভব নয়।

উৎপাদন সম্ভাবনা রখো দ্বারা সীমিত সম্পদ নির্দেশিত হয়। এ রেখার অ-অর্জনযোগ্য বিন্দুতে উৎপন্ন সংমিশ্রণ পাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্পদের সীমাবদ্ধতার জন্য তা পাওয়া যাবে না।

চিত্রে লক্ষ করা যায়, উভয় দ্রব্য ৮ একক করে উৎপাদন তথা প্রাপ্ত উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা D(৮, ৮) বিন্দুটি কাঙিক্ষত হলেও অর্জনযোগ্য নয়। কারণ প্রদত্ত উপকরণ বা প্রযুক্তিতে D বিন্দুতে উৎপাদন করা সম্ভব নয়। যেটিকে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার অ-অর্জনযোগ্য অঞ্চল হিসেবে অবিহিত করা যায়।

উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, D বিন্দুতে উৎপাদন কাঙিক্ষত হরেও বিদ্যমান উপকরণের স্বল্পতার জন্য উৎপাদন সম্ভব নয়।

৩. নিচের ছকটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

 X দ্রব্য (একক)  Y দ্রব্য (একক)
 ০  ৩০
 ২০  ২০
 ৩০  ০

ক. নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা কি?

ক. অভাব পূরণে নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয় কেন?

খ. উদ্দিপকের আলোকে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন করো?

গ. (X=১০ একক, Y=১০ একক)এবং (X=৪০ একক, Y=৪০ একক) সংমিশ্রণে উৎপাদনের যেীক্তিকতা বিশ্লেষণ করো?

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা হলো এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থা যেখানে দেশের যাবতীয় সম্পদ রাষ্টীয় মালিকানায় এবং কেন্দীয় পরিকল্পনার অধীনঅের্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হয়।

খ. সমাজে অভাবের তুলনায় সম্পদ সীমিত হওয়ায় নির্বাচন সমস্যা দেখা দয়ে।

মানুষের অভাব অসীম। কিন্তু এই অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত। তাই কোনো নিদিষ্ট সময়ে সকল অভাব এক সাথে পূরণ করা সম্ভব হয় না। আবার সকল অভাব সমান গুরুত্বপূণ নয়। তাই ব্যক্তিকে তার অভাবের গুরুত্ব অনুসারে কোনো অভাব আগে এবং কোনো অভাব পূরণ করতে হয়। এভাবেই মূলত অভাব পূরণে নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয়।

গ. উদ্দিপকের তথ্যের আলোকে নিচে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন করা হল:

উপকরণের দক্ষ বন্টনের মাধ্যমে দুটি পূণ্যের উৎপাদনযোগ্য সংমিশ্রণ বিন্দুগুলো নিয়েই উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা (PPC) সৃষ্টি হয়।

দ্রব্য Y দ্রব্য বিন্দু
 ০  ৩০  A
 ২০  ২০  B
 ৩০  ০  C

প্রদত্ত সূচির আলোকে বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু Y দ্রব্য উৎপাদন করা যায় ৩০ একক, যা A বিন্দু নির্দেশিত হয়েছে। আবার ২০ একক X দ্রব্য ও ২০ একক Y দ্রব্য উৎপাদন করা যায় B বিন্দুতে। এরপর, C বিন্দুতে Y দ্রব্য উৎপাদন না করে শুধু X দ্রব্য উৎপাদন করা যায় ৩০ একক। এখন প্রাপ্ত A, B, C বিন্দুগুলো যোগ করে AC উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা পাওয়া যায়। এটিই উদ্দিপকের আলোকে অঙ্কিত উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা।

ঘ. উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার F (X= ১০ একক এবং X = ১০ একক) বিন্দু অদক্ষ অঞ্চল এবং G (X= ৪০ একক এবং Y = ২০ একক) অ-অর্জনযোগ্য অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় উৎপাদন সম্ভব নয়।

উপরের চিত্রটির F বিন্দুতে X ও Y দ্রব্যের ১০ একক উৎপাদন নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে এটি একটি অদক্ষ সংমিশ্রণ। অর্থাৎ যখন X = ১০ একক এবং Y =১০ একক তখন F বিন্দুতে পাওয়া যায়; এটি গ্রহণযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে পড়েও এখানে সম্পদ অব্যবহৃত থাকবে এবং সম্পদের অদক্ষ ব্যবহার নির্দেশ করবে।

আবার G বিন্দুটি (X দ্রব্য ৪০ একক ও দ্রব্য Y ২০ একক) অঙ্কিত হলেও এটি অর্জনযোগ্য নয়। কারণ প্রদত্ত উপকরণ বা প্রযুক্তিতে G বিন্দুতে উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার F বিন্দুতে উৎপাদন সম্ভব হলেও উপকরণ বন্টন অদক্ষ হওয়ায় উৎপাদন যুক্তিযুক্ত নয় এবং G বিন্দুতে উৎপাদন কাঙ্খিত হলেও বিদ্যমান উপকরণের স্বল্পতার জন্য উৎপাদন সম্ভব নয়।

৪. নিচে ও দ্রব্যের উৎপাদনের বিভিন্ন সংমিশ্রণ দেখান হলো-

 X দ্রব্য (একক)  Y দ্রব্য (একক)  গংমিশ্রণ
 ০  ৩  A
 ২  ২  B
 ৩  ০  C

ক. ব্যষ্টিক অর্থনীতি কী?

ক. গম্পদেও দুষ্পাপ্যতাই অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ-ব্যাখ্যা করো?

খ. উদ্দিপকের সূচিটি ব্যবহার কওে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন করো।

গ. চিত্রের সাহায্যে (X =১, Y =২) এবং (X =৩, Y =৩) বিন্দু দুটির তুলনা করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অর্থশাস্ত্রের যে শাখায় অর্থনীতির অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।

খ. দুষ্প্রাপ্য সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করে মানুষের অভাব পূরণ করা যায় তা থেকেই বেশিরভাগ অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

মানুষের প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ হলো: কী উৎপাদন করতে হবে, কীভাবে তা করতে হবে এবং কার জন্য তা করতে হবে। এ সমস্যাসমূহ উদ্ভাবের কারণ হলো মানুষের অফুরন্ত অভাবের তুলনায় সম্পদের স্বপ্লতা বা দুষ্প্রাপ্যতা। সম্পদ যদি অসীম হতো তবে মানুষের জন্য সব কিছুই উৎপাদন করা যেত এবং কোনো সমস্যা থাকত না। তাই বলা যায় সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ।

গ. উদ্দিপকের প্রদত্ত উৎপাদন সম্ভাবনা সূচিটি ব্যবহার করে নিচে একটি উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন করা হলো:

চিত্রে ভূমি অক্ষে X দ্রব্য এবং লম্ব অক্ষে Y দ্রব্য উৎপাদন পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছে। সূচিতে দেখা যায় প্রদত্ত সম্পদের দ্বারা প্রচলিত প্রযুক্তির অধীনে X দ্রব্যের ০ একক ও দ্রব্যের Y ৩ একক উৎপাদন করা যায়। চিত্রে যা A বিন্দু দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে। আবার X দ্রব্যের ২ ও ৩ একক উৎপাদন করলে Y দ্রব্যের উৎপাদন হয় যথাক্রমে ২ ও ০ একক যা চিত্রে যথাক্রমে B ও C দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে। এখন X ও Y দ্রব্য উৎপাদনের পরিমাণের বিভিন্ন সংমিশ্রণ নির্দেশক A, B ও C বিন্দুগুলো যুক্ত করে AC রেখাটি টানি। এটিই হলো প্রদত্ত সূচির ভিত্তিতে অঙ্কিত উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা।

ঘ. সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দানের প্রয়োজনে প্রদত্ত উৎপাদন সম্ভাবনা সূচির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিমাপ গ্রহন করে প্রথমে AC উৎপাদন সম্ভাবনা রেখাটি পুনর্বার অঙ্কন করা হলো। এখন চিত্রে দুটি বিন্দু D ও E নেওয়া হলো যার স্থানাঙ্ক যথাক্রমে হলো: ( X = ১, Y =২) এবং (X = ৩, Y = ৩)। এখন D ও E বিন্দু দুটির তুলনা করা যায়।

১. D বিন্দুতে X দ্রবের ১ ও Y দ্রবের ২ একক উৎপাদন নির্দেশিত হয়, যেখানে E বিন্দুতে X দ্রব্যের ৩ একক ও Y দ্রব্যের ৩ একক উৎপাদন নির্দেশিত হয়। E বিন্দুতে উৎপাদনের পরিমাণ D বিন্দু নির্দেশিত উৎপাদনের চেয়ে বেশি।

২. D বিন্দুটি উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা AC এর অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত; E বিন্দু AC রেখার বাহিরে অবস্থিত।

৩. D বিন্দুটির AC রেখার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত হওয়ায় তা উৎপাদনের অদক্ষ দেখায়, সেখানে প্রদত্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হয়নি কিংবা অপচয় ঘটে। অন্যদিকে E বিন্দু AC রেখার বাইওে অবস্থিত হওয়ায় তা উৎপাদনের অ-অর্জনযোগ্য অঞ্চলে অবস্থিত। এ বিন্দুটি প্রদত্ত সম্পদের চেয়ে অধিক সম্পদ ব্যবহার নির্দেশ করে যা বাস্তবে অর্জনযোগ্য নয়।

৪. সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সম্ভাবনা রয়েছে এমন অবস্থা E বিন্দু দ্বারা প্রকাশ পায়। এ বিন্দু উৎপাদককে আরও তৎপর ও উদ্যোগী হতে বলে। অন্যদিকে D বিন্দু উৎপাদককে সম্পদ ব্যবহারের বেলায় সতর্ক ও যন্তবান হতে বলে এবং তাকে দক্ষতা বাড়াতে উদ্ধুদ্ধ করে।

৫. মানুষের মেীলিক অর্তনৈতিক সমস্যা ৩টি। প্রতিটি সমাজের মানুষকে এ সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এ সব সমস্যার বিভিন্ন সমাধান রয়েছে। তবে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দামব্যবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান করা হয়।

ক. দুষ্প্রাপ্যতা কী?

খ. সুযোগ ব্যয়ের উদ্ভব ঘটে কেন?

গ. উদ্দিপকের বর্ণিত অর্থনৈতিক সমস্যা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দিপকে উল্লেখিত অর্থব্যবস্থায় যে পদ্ধতির সাহায্যে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা হয় তা কি যথেষ্ট? তোমার মতামত দাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অভাবের তুলনায় সম্পদের স্বল্পতা বা অপর্যাপ্ততাকেই অর্থনীতিতে দুষ্প্রাপ্যতা বলে।

খ. মানুষের অভাব অসীম কিনত্মু সম্পদ সীমিত হওয়ায় দরুন নির্বাচন সমস্যায় পড়তে হয়। মূলত এখান থেকেই সুযোগ ব্যয় ধারণার সৃষ্টি। কোনো একটি দ্রব্য পাওয়ার জন্য অন্য দ্রব্যটির উৎপাদন/ভোগ যে পরিমাণ ত্যাগ করতে হয়, এ ত্যাগকৃত পরিমাণই হলো প্রথম দ্রব্যটির সুযোগ ব্যয়। উদাহারণস্বরুপ বলা যায় এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করলে বিশ কুইন্টাল ধান উৎপাদন করা যায়। আবার পাট চাষ করলে দশ কুইন্টাল পাট উৎপাদন করা যেত। এক্ষেত্রে বিশ কুইন্টাল ধানের সুযোগ ব্যয় হলো দশ কুইন্টাল।

গ. উদ্দিপকে মানুষের প্রধান ৩টি মেীলিক অর্থনৈতিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। অভাবের অসীমতা ও সম্পদের স্বল্পতার জন্য মানবজীবনে এসব অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এগুলো হলো-

১. কী উৎপাদন করা হবে: সম্পদের স্বল্পতার জন্য ব্যক্তি বা সমাজ তার প্রয়োজনীয় সব দ্রব্য এক সাথে উৎপাদন করতে পারে না। সেজন্য অভাবের গুরুত্ব অনুসারে স্থির করতে হয়-কোন কোন দ্রব্য, কী পরমিাণ উৎপাদন করা দরকার। সম্পদ নিকান্তই কম বলে একটি দ্রব্য উৎপাদন করতে গেলে অন্যটি হাত ছাড়া করতে হয়। কাজেই কোন কোন দ্রব্য কী পরমিাণ উৎপাদন করতে হবে তা নির্ধারণ করাই হলো যেকোন সমাজের অন্যতম মেীলিক অর্থনৈতিক সমস্যা।

২. কীভাবে উৎপাদন করা যায়: এটি হলো সমাজের দ্বীতিয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সমস্যা। কোন দ্রব্য কী পরমিাণ উৎপাদন করতে হবে এর পরেই এ সমস্যা টা দেখা যায়। এক্ষেত্রে নির্বাচিত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য কী কী উপকরণ, কী কী অনুপাতে এবং কোন প্রযুক্তি বা পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারন করতে হয়। এটি একটি বিরাট সমস্যা যা সুষ্টভাবে সমাধান করতে না পারলে সর্বাধিক উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।

৩. কার জন্য উৎপাদন করা হবে: সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ থাকে। সকল মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এক রকম নয়। কোন দ্রব্য কোন শ্রেণির মানুষের জন্য উৎপাদন করা হবে তা নির্ধারন করাও একটি জটিল সমস্যা।

ঘ. উদ্দিপকের ধরতান্ত্রিক অর্থনীতিতে দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে মেীলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এরূপ সমাধান যথেষ্ট নয়।

দাম প্রক্রিয়ার বদেীলতে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে স্বার্থপর ও মুনাফাখোর উৎপাদনকারী/ব্যবসায়ীরা ভোক্তা সাধারনের কাছ থেকে সর্বচ্চ দাম আদায় করে এবং শ্রমিকদেরকে নূন্যতম মজুরি দেয়। এর ক্ষেত্রে ভোক্তা ও শ্রমিক উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দাম ব্যবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করে সামাজিক স্বার্থ বা কল্যাণের জলাঞ্জলি দেয়।

দামব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ভোক্তারা স্বাধীন থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেখানে চটকদার বিজ্ঞাপন, ধূর্ত বিক্রয় প্রতিনিধি, দ্রব্যেও কৃত্রিম দুস্প্রাপ্যতা, বাজারের দূরুত্ব ইত্যাদি দ্বারা প্রতিনিয়তই ভোক্তাগন প্রতারিত হয়। যে কারণে ভোক্তাকে পুরোপুরি স্বাধীন বলা যায় না।

তাছাড়া দাম প্রক্রিয়া আয় বৈষম্য বাড়ায়। ধনীরা অধিক দামে তাদের পছন্দসই দ্রব্যাদি ক্রয় এবং সম্পদ কুক্ষক্ষগত কওে বিলাসী জীবনযাপন করে। অনেকে আবার মনে করেন দাম ব্যবস্থা খরচ ও উপকার ঠিকমত পরিমাপ করতে পারে না। এটি কেবর উৎপাদনকারীদের হিসাব রাখে। কিন্তু কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে গিয়ে সমাজ কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হলো তার হিসাব রাখে না। এছাড়া দাম ব্যবস্থা ব্যক্তিগত চাহিদা প্রকাশ করে, সামাজিক চাহিদা নয়।

উপরিউক্ত অসুবিধাগুলোর আলোকে বলা যায়, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দামব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান যথেষ্ট নয়।

৬. A দেশের নাগরিক মি. কলিন্স স্ব-উদ্যোগে উৎপাদন ও ব্যবসা পরিচালনা করেন। সেদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত সহ সকল খাতই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচারিত হয় এবং অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম নির্ধারিত হয়। ব্যবসার প্রয়োজনে তিনি অন্য একটি দেশ B তে গিয়ে সে দেশের অর্থনীতির উল্টো চিত্র অবলকন করলেন। B দেশে উৎপাদন, ভোগ ও বন্টন সবই কেন্দীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ক. ব্যষ্টিক অর্থনীতি কী?

খ. নির্বাচন সমস্যা উদ্ভাবের কারণ কী?

গ. A দেশের অর্থব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ণয় এর তিনটি বৈশিষ্ট লেখ।

ঘ. শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে A ও B দুই দেশের অর্থব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অর্থশাস্ত্রের যে শাখায় অর্থনীতির অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।

খ. সম্পদেও স্বল্পতাই নির্বাচন সমস্যা উদ্ববের প্রধান কারণ।

অভাবের তুলনায় সম্পদ সীমিত, এ সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও অপচয়রোধ করা দরকার। এ কাজ করতে গিয়ে অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা হলো নির্বাচন সমস্যা। নির্বাচন সমস্যা বলতে বোঝায়, সম্পদেও এমন ভাবে ব্যবহার করা যাতে তার দ্বারা সমাজের বেশিভাগ লোকের অধিকাংশ অভাব পূরণ করা যায়। তবে সম্পদের স্বল্পতার কারণে মানুষের সকল অভাব পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই কোন অভাবগুলো বঅধিক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথমে পূরণ করতে হবে তা নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ সীমিত সম্পদ ও অসীম অভাবের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে নির্বাচন উদ্ভব হয়।

গ. উদ্দিপকে উল্লেখিত A দেশের অর্থব্যবস্থা হলো ধনতান্ত্রিক। নিম্নে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার তিনটি বৈশিষ্ট তুলে ধরা হলো:

১. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত। ব্যক্তি তার প্রয়োজন মতো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে পারে। একজন ব্যক্তি তার কর্মতৎপরতার মাধ্যমে যত ইচ্ছা সম্পদ ভোগ করতে পারে তাতে কোনো বাধা নেই।

২. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখানে মুনাফা অর্জনের প্রত্যাশায় সব বিনিয়োগকারীই অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে।

৩. ব্যক্তিস্বার্থ ও পছন্দের স্বাধীনতা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিদ্বনদ্ধী মনোভাবের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়।

উদ্দিপকের আলোচিত A দেশে উৎপাদন কার্যক্রম ও ব্যবসা পরিচালিত হয় ব্যক্তিগত উদ্যোগে। তাছাড়া সেখানে অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার দাম নির্ধারন করে। সুতরাং বলা যায় ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যে সকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা উদ্দিপকে আলোচিত A দেশের অর্থব্যবস্থার সাথে সংগতিপূর্ণ। তাই বলা যায় A দেশের অর্থব্যবস্থার প্রকৃতি ধনতান্ত্রিক।

ঘ. উদ্দিপকের A দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও B দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে A ও B দেশের অর্থব্যবস্থার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূলত মুনাফা অর্জনের উদেশ্য পরিচালিত হয়। এ অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত। তাছাড়া উৎপাদন ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকায় উৎপাদনকারী তার ইচ্ছে মতো পণ্য উৎপাদন করে থাকে। একন জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করা হয় না। ফলে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজে আয় ও সম্পদেও সুষম বন্টন হয় না। এই কারণেই ধনী শ্রেণি আরও ধনী হয় এবং দরিদ্র শ্রেণি আরও দরিদ্র হতে থাকে। এভাবে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা সমাজে শ্রেনিবৈষম্যের সৃষ্টি করে।

অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষক্ষ। এক্ষেত্রে সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্টিত হয়। উৎপাদনের সকল উদ্যোগ রাষ্টই গ্রহণ করে। এখানে ভোক্তা নিজের ইচ্ছে মতো দ্রব্য ভোগ করতে পারে না। এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন কার্যক্রম এমন ভাবে পরিচালিত হয় যাতে সমাজের সকল ব্যক্তি উৎপাদিত পণ্য ও সকল সেবা সমান ভাবে ভোগ করতে পারে। এ ব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদনের সকল উপকরণের ওপর সামাজিক মালিকানা বজায় থাকে বলে আয় ও সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়। ফলে সমাজে শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি হয় না।

উদ্দিপকের আলোচিত A দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান। এদেশে শিক্ষা, স্বাস্থখাত সহ প্রায় সকল খাতই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। তাই A দেশে পরিচালিত অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয় না। যা কিনা শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টিতে ভূমকা পালন করে। অন্যদিকে B দেশের অর্থব্যবস্থা সমাজতান্ত্রিক। এদেশে উৎপাদন, ভোগ ও বন্টন সবই কেন্দীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ফলে সমাজে আয় ও সুষম বন্টন ঘটে যা সমাজে শ্রেণিবৈষম্য সৃস্টিতে বাধা দেয়।

৭. মি. K একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাজারে চাল কিনতে গিয়ে দেখলেন যে, বাজারে চালের দাম কমে গেছে। তিনি ব্যবসায়ীকে এর কারণ জিঞ্জাসা করেন। ব্যবসায়ী তাকে জানান যে, সরকার ১০ টাকা করে চাল বিক্রি করায় বাজারে চালের দাম কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা ও যোগানের সমতার ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হয়।

ক. দুষ্প্রাপ্যতা কী?

ক. কোন অর্থব্যবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না?

খ. উদ্দীপকের আলোকে মি. K এর কোন ধরণের অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান-ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের উল্লেখিত দেশটির অর্থব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থার তুলনায় কোন দিক দিয়ে ভালো বলে তুমি মনে করো?

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অভাবের তুলনায় সম্পদের স্বল্পতা বা অপর্যাপ্ততাকেই অর্থনীতিতে দুষ্প্রাপ্যতা বলে।

খ. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না।

ধনতন্ত্রে স্বয়ংক্রিয় মূল্যব্যবস্থা মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। বরং ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দ্বারা বাজাওে পণ্যেও দাম নির্ধারিত হয়। বাজার চাহিদা ও বাজার যোগান পণ্য ও সেবা দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকের আলোকে মি. K এর দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।

যে অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রিয় মালিকানা পাশাপাশি অবস্থান করে তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। ধনতান্ত্রিক ও নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার সংমিশ্রিত রুপই হলো মিশ্র অর্থব্যবস্থা। এ অর্থব্যবস্থায় বাজার অথনীতির ধারণাকে উৎসাহিত করা হয়। বাজার চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে এখানে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। কিন্তু কোনো বিশেষ দ্রব্যের ক্ষেত্রে অথবা কোনো বিশেষ অবস্থায় সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে পারে।

উদ্দীপকের মি. K একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাজারে গিয়ে দেখলেন যে চালের দাম কমে গেছে। তিনি ব্যবসায়ীকে এর কারণ জিঞ্জাসা করলে ব্যবসায়ী তাকে জানান যে সরকার ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি করায় বাজারে চালের দাম কমে গেছে। এখানে দেখা যায় মি. K এর দেশে চালের দাম চাহিদা ও যোগানের দ্বারা নির্ধারিত হলেও সরকার কতৃক কম দামে চাল বিক্রি করায় বাজারে চালের দাম কমে গেছে। এখানে সয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা ও সরকারি দাম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পাশাপাশি অবস্থান করছে। সুতরাং বলা যায় মি. K এর দেশের অর্থব্যবস্থায় মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত দেশটিতে মিশ্র অর্থব্যবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান। নিম্নে মিশ্র অর্খব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার তুলনায় কোন দিক দিয়ে ভালো তা ব্যাখ্যা করা হলো-

মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা ও রাষ্ট্রিয় মালিকানা পাশাপাশি অবস্থান করে। এ অর্থব্যবস্থায় চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। এখানে যেমন ভোক্তার স্বাধীনতা বিদ্যমান, তেমনি কোনো বিশেষ অবস্থায় বা কোনো বিশেষ দ্রব্যের ক্ষেত্রে সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রন করতে পারে।

অন্যদিকে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণ গুলোর ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বিদ্যমান এবং সরকারি বাধা ছাড়াই অবাধে দাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারব্যবস্থা পরিচালনা হয়। এ অর্থব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ বণটনে চরম বৈষম্য বিরাজ করে। এখানে ধনী শ্রেণি আরও ধনী হয় ও দরিদ্র শ্রেণি আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মুনাফা অর্জনই ব্যবসায়ের প্রধান লক্ষ্য বলে বিবেচিত হয়। এজন্য পুঁজিপতিরা ভোক্তাকে জিমিণ করে বেশি দামে দ্রব্য বিক্রি করে কিন্তু কম মজুরি প্রদান করে শ্রমিকদেও শোষণ করে। অন্যদিকে মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকার বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে দামব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিক শোষণ বন্ধ করে। এ অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার দুর্বলতা পরিহার করে এবং সুবিধাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এসব কারণেই উদ্দীপকে উল্লেখিত দেশটির অর্থব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থার থেকে ভালো।

৮. 

ক. উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা কাকে বলে?

ক. স্বয়ংক্রিয় মূল্যব্যবস্থা ধারণাটি ব্যাখ্যা করো?

খ. উদ্দীপকের ‘ক’অংশে যে অর্থব্যবস্থাকে নির্দেশ করা হয়েছে তার ইতিবাচক দিকগুলো ব্যাখ্যা করো।

গ. ‘ক’ অর্থব্যবস্থা অপেক্ষা ‘খ’ অর্থব্যবস্থা উল্টো-বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা হলো এমন একটি রেখা, যে রেখার বিভিন্ন বিন্দুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ও চলতি প্রযুক্তি সাপেক্ষে দুটি উৎপন্ন দ্রব্যের সম্ভাব্য বিভিন্ন সংমিশ্রণ নির্দেশ করে।

খ. সরকারি হস্তক্ষেপ ব্যতিত যখন চাহিদা ও যোগানের কোনো পর্ণ্যের দাম নির্ধারিত হয় তখন তাকে স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা বলে।

স্বয়ংক্রিয় মূল্যব্যবস্থায় চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে পর্ণ্যের দাম নির্ধারিত হবে এবং সরকারি কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। অন্যভাবে বলা যায় বাজারব্যবস্থায় যে অদৃশ্য হাত ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে দ্রবের দাম নির্ধারন করে তাকে স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা বলে।

গ. উদ্দীপকে ‘ক’ অংশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। নিচে এর ইতিবাচক দিকগুলো ব্যাখ্যা করা হলো-

ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট হলো সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে জমি, কল-কারখানা, যন্ত্রপাতি ও উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সম্পদের অবাধ ভোগ-দখল, হস্তান্তর ও উত্তরাধীকারের অধিকার ভোগ করে। ধনতন্তে অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। উৎপাদন, বিনিময়, বন্টন ও ভোগ সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি উদ্যোগের প্রাধান্য থাকে। ধনতান্ত্রিক সমাজে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সরকারি অংশগ্রহণ বা হস্তক্ষেপ থাকে না বললেই চলে।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সব ক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। প্রতিযোগিতার ফলে নতুন নতুন দ্রব্যের উদ্ভাবন সম্ভব হয় এবং উৎপাদনের খরচ হ্রাস পায়। আবার ক্রেতা ও বিক্রেতার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ‘ক’ ও ‘খ’ অর্থব্যবস্থা হলো যথাক্রমে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও মিশ্র অর্থব্যবস্থা। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা উত্তম।

মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বোঝায় যেখানে সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা উভয় স্বীকৃত। এ অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি অবস্থান করে। ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের একটি সংমিশ্রিত রূপই হলো মিশ্র অর্থব্যবস্থা। এখানে ধনতন্ত্রের ন্যায় সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যক্তি উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে। আবার জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক খাতসমূহ এবং কিছু কিছু বৃহৎ ও মেীলিক শিল্পের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে।

অপরদিকে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে এবং মুনাফার ভিত্তিতে উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা বা ভোগকারীর ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে এবং ভোগকারীর ইচ্ছা ও রুচি অনুয়াযী উৎপাদন করা হয়। এ অর্থ ব্যবস্থার হলো অবাধ প্রতিযোগিতা। ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। এখানে উৎপাদন, বন্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না, বরং একটি স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থার মাধ্যমেই সবকিছু নির্ধারিত হয়।

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে মিশ্র অর্থব্যবস্থায় যেহেতু সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি অবস্থান করে সেহেতু এ অর্থব্যবস্থায় সামাজিক কল্যাণ বেশি হয়। এজন্য বলা হয়ে থাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে উত্তম।

৯. 

 ক-দেশ  খ-দেশ
  1. বাজারে দাম স্থির থাকে
  2. ভোক্তার ইচ্ছানুযায়ী অতিরিক্ত ভোগের সুযোগ নেই
  1. দামের উথান-পতন বিদ্যমান
  2. অতি-উৎপাদন বা স্বল্প উৎপাদন হতে পারে

ক. নির্বাচন বলতে কী বোঝায়?

খ. কীভাবে উৎপাদন করা হবে-সমস্যার উদ্ভব হলো কেন?

গ. উদ্দীপকে কোন দেশে ‘স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা’ বিদ্যমান ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকের দুটি দেশের সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক আছে কী না? মতামত দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. নির্বাচন হলো অসংখ্য অভাবের মধ্য থেকে গুরুত্ব অনুসারে প্রয়োজনীয় অভাব বাছাই করা।

খ. অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করার জন্য কীভাবে উৎপাদন হবে সমস্যার উদ্ভব হয়।

পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে উৎপাদন কেীশল হয় শ্রম নিবিড় অথবা পুঁজি নিবিড়। অর্থাৎ যে দেশে পুঁজি অপেক্ষা শ্রমের সরবরাহ বেশি, শ্রমের মূল্য সস্তা, সে দেশে উৎপাদন কেীশল শ্রম নির্ভর হয়। অন্যদিকে যে দেশে পুঁজির পরিমাণ বেশি, শ্রমের মূল্য বেশি, সে দেশে উৎপাদন কেীশল পুঁজি নির্ভর হয়। যেমন উন্নত দেশগুলোতে উৎপাদন কেীশল পুঁজি নিবিড়, অন্যদিকে অন্যদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে উৎপাদন কেীশল শ্রম নিবিড় হয়। কী উপায়ে উৎপাদন করা হবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোন সমাজে কী পরিমাণ এবং কোন ধরনের উপকরণ অধিক পরিমাণ আছে তার প্রেক্ষিতে স্থির করা হয়। সম উৎপাদন রেখার সাহায্যে সমস্যাটির বিশ্লেষণ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে ‘খ’ দেশে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা বিদ্যমান। অর্থাৎ উদ্দীপকের ‘খ’ দেশটির বৈশিষ্ট্যের বিচারে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থনীতির অন্তর্গত।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণগুলোর ওপর ব্যক্তি মালিকানা বজায় আছে। এজন্য উৎপাদন বিষয়ক কার্যাবলি ব্যক্তি উদ্যোগেই পরিচালিত হয়। যেখানে কোন কোন দ্রব্য, কী পরিমাণ এবং কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে সে সম্পর্কে ব্যক্তি পর্যায়েই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যেসব দ্রব্য উৎপাদনে মুনাফা বেশি, উদ্যোক্তারা সেইগুলো উৎপাদন করে। অবশ্য এমনটি করতে গিয়ে তারা ক্রেতাদের ইচ্ছা, পছন্দ ও রুচি দ্বারা যথেষ্ট প্রবাভিত হয়।

‘খ’দেশে বাজার ব্যবস্থা কার্যকর। সেখানে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা দ্বারা সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা কার্যকর থাকায় দ্রবাদির দাম তাদেও নিজ নিজ চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাত দ্বারা নির্ধারিত হয়। উৎপাদন ব্যয় ও দাম দ্বারা দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। ‘খ’ দেশে প্রচলিত অর্থব্যবস্থার উপরিল্লিখিত দিকগুলো ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্টগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং উদ্দীপকে ‘খ’ দেশে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা কার্যকর আছে।

ঘ. উদ্দীপকের দুটি দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। উদ্দীপকের ‘ক’ দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এবং ‘খ’ দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়েছে যার যেীথ উদ্যোগে পরিচালিত হয় মিশ্র অর্থনীতি বা বাংলাদেশের অর্থনীতি।

যে অর্থব্যবস্থা ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুর্বলতা পরিত্যাগ কওে এবং গুণগুলো গ্রহণ করে গড়ে ওঠে তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। অর্থনৈতিক অভিঞ্জতায় দেখা যায় বিশুদ্ধ ধনত্ত্র বা সমাজতন্ত্র কোনোটিই সমাজের কাম্য উন্নয়নের জন্য একক ভাবে যথেষ্ট নয়। তাই অনেক ধনতান্ত্রিক দেশে বাজার কার্যক্রমের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন সরকারি নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকে। তেমনি বর্তমানে অনেক সমাজতান্ত্রিক দেশেও সীমিত পর্যায়ে মিশ্র অর্থব্যবস্থার প্রচলন দেখা যায়।

উদ্দীপকের ‘ক’ দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়েছে। এ দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার সাথে মিল করণ করলে দেখা যায় সমাজতন্ত্রের ভোক্তার বা ক্রেতার চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এরূপ অবস্থায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষই উৎপাদন নির্ধারণ করে এবং এগুলো ক্রেতা ক্রয়ে বাধ্য থাকে। তেমনিভাবে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থায়ও সরকার চাইলে কোনো দ্রব্যের দাম ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অন্যদিকে উদ্দীপকের ‘খ’ দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান। যেখানে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজার নির্ধারিত হয়। একই ভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দাম ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় আছে। এর ফলে সমাজের অসীম চাহিদার সাথে সীমিত সম্পদ তথা যোগানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় বাজারে দাম নির্ধারিত হয়।

সুতরাং উদ্দীপকের দুটি দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে।

১০. জনাব মনিরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন। তার পঠিত বিষয়ের সাথে আয় ও নিয়োগ তত্ত্ব, বন্টন তত্ত্ব, সাধারণ দাম তত্ত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি তত্ত্ব ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট। মনিরুল সাহেবের বন্ধু জনাব হাসান একই বিষয়ে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন। তবে বিষয়বস্ত্তুর ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা আছে। যেমন তিনি চাহিদা তত্ত্ব, উৎপাদন ও ব্যয় তত্ত্ব, কল্যাণ অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশুনা করছেন।

ক. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কী?

ঘ. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার গুরুত্ব নেই কেন-ব্যাখ্যা করো?

ক. উদ্দীপকে অর্থনীতির কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা করো।

খ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিষয়টি অর্থনীতিতে কোনো গুরুত্ব বহন করে কিনা-মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. যেসব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক পরিবেশ দ্বারা মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয় তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

খ. সামজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থার গুরুত্ব নেই। কারণ সেখানে দেশের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো দ্রব্য বা সেবার দাম নির্ধারিত হয়।

চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে দাম নির্ধারিত হওয়াকে স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা বলে। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা অনুপস্থিত। কারণ সেখানে ‘অরোপিত দাম’ অর্থাৎ যা কিনা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ জন্যই সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থার গুরুত্ব নেই।

গ. উদ্দীপকে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির ধারণা দুটি ফুটে উঠেছে।

অর্থনীতির বিষয়গুলোর আলোচনার পদ্ধতিগত দিক থেকে বিবেচনা করে অর্থনীতিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা:ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি। অর্থনীতির যে শাখায় তার একক উপাত্তসমূহের কার্যাবলি ও বৈশিষ্টগুলো আলাদা আলাদা ভাবে আণুবিক্ষণিক পর্যালোচনা করা হয় সেই শাখাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে। যেমন-ব্যক্তি বা কোনো ফামের উৎপাদন, বিনিময়, বন্টন, ভোগ, দাম, মূল্য, মজুরি, আয়-ব্যয়, নিয়গ-বিনিয়োগ, সঞ্চয়, অভাব ইত্যাদি চলকসমূহ ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে আলোচিত হয়।

অন্যদিকে অর্থনীতির যে শাখায় তত্ত্ব উপাত্তগুলোকে অত্যন্ত বৃহৎ পরিসরে বিচার বিশ্লেষণ করা হয় তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। যেমন-জাতীয় উৎপাদন, জাতীয় বন্টন, জাতীয় ভোগ, দামস্তর, মজুরি স্তর, নিয়োগ স্তর, জাতীয় সঞ্চয় ইত্যাদি চলকসমূহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে আলোচিত হয়। সর্বোপরি বলা যায় উদ্দীপকের সাথে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির ধারণা সংগতিপূর্ণ।

ঘ. অধ্যাপক র‌্যাগনার ফ্রিশ অর্থনীতিকে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক দু’ভাগে ভাগ করেন। উদ্দীপকে এ বিষয় দুটি উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে এদের পারস্পরিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো-

ব্যষ্টিক অর্থনীতি যেখানে অর্থনীতির একক বিশ্লেষণ করে, সামষ্টিক অর্থনীতি সেখানে সামগ্রিক বিষয়ের বিশ্লেষণ শেখায়। অতএবঅর্থনীতির বিভিন্ন এককের যোগফল তথা সমষ্টিই সামগ্রিক অর্থনীতি। তাই এর প্রথমটি ছাড়া দ্বীতিয়টি অচল। অর্থাৎ ব্যষ্টিক বিশ্লেষণ ব্যতীত সামষ্টিক বিশ্লেষণ এবং সামষ্টিক বিশ্লেষণ ব্যতীত ব্যষ্টিক বিশ্লেষণ অসম্পর্ণ। ব্যষ্টিক অর্থনীতি যেখানে মূল্য নির্ধারণ করে, সামষ্টিক অর্থনীতি সেখানে মূল্যস্তর ও কর্মসংস্থানের পথ নির্দেশ করে। সুতরাং ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি পরস্পরের বিকল্প নয় বরং পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

জাতীয় আয় ব্যাখ্যা করতে হলে ব্যক্তিগত আয় বিবেচনা করতে হয়। অন্যদিকে দেশের মোট উৎপাদন বিশ্লেষণের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন জানা প্রয়োজন। সুতরাং কোনো অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয়ের বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-বিনিয়োগ স্তরে ফার্মেগুলোর কাম্য মূলধন স্টকের উপর নির্ভর করে এবং কাম্য মূলধন স্টক ফার্মের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তাই সামষ্টিক অর্থনীতি উপলব্ধির জন্য ব্যষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সুতরাং মানবজীবনের অর্থনৈতিক ঘটনাবলি আলোচনার জন্য উভয় শাখা বা পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন।

সুতরাং বলা যায় উদ্দীপকের বিষয়টির পারস্পরিক গুরুত্ব রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক ও যর্থাথ।