প্রাচীনকালে শিক্ষা ছিল শুধু তত্ত্বগত ও জ্ঞানভিত্তিক। ফলে শিক্ষকগণ বেশিরভাগ সময় শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক বিকাশের দিকে লক্ষ রাখতেন, ফলে সেইসময় শিক্ষা ছিল সমাজ থেকে অনেকটা দূরে অর্থাৎ শ্ৰম ও জ্ঞানের মধ্যে সঠিক বােঝাপড়া তখন প্রায় ছিলই না।
শিক্ষার আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী শিক্ষা শুধু জীবনব্যাপী প্রক্রিয়াই নয়, এটি গতিশীল প্রক্রিয়াও বটে। কারণ সমাজের ন্যায় শিক্ষাও ক্রমপরিবর্তনীয়। ব্যক্তি ও সমাজের জন্য যেহেতু প্রয়ােজন উন্নত শিক্ষা যেহেতু শিক্ষার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকা প্রয়ােজন।
এই উদ্দেশ্যে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে UNESCO (United Nations Educational Scientific & Cultural Organization) আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন গঠন করে। কমিশন শিশুর সার্বিক বিকাশের দিকগুলি বিশ্লেষণ করে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে Learning to be human’ বা মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা এই শিরােনামে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই রিপাের্টের উল্লেখযােগ্য বিষয় হল-
- আন্তর্জাতিক ঐক্য ও সংস্কৃতি,
- গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস,
- ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ,
- জীবনব্যাপী শিক্ষা।
এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা শিক্ষার উন্নত পরিকাঠামো সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। এর ফলস্বরূপ UNESCO শিক্ষার রূপ নির্ণয়ের সুপারিশ করে। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে জ্যাক্স ডেলর-এর সভাপতিত্বে একবিংশ শতকের আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন গড়ে ওঠে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শিক্ষাবিদ জ্যাক্স ডেলর (Jacques Delors)-এর নেতৃত্বে UNESCO-র উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে চারটি স্তম্ভ কে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাকে সমাজ উপযােগী হিসেবে গড়ে তােলার জন্য জ্যাক্স ডেলর পরামর্শ দেন। এই চারটি স্তম্ভ হলㅡ
- জানার জন্য শিক্ষা,
- কর্মদক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা,
- একত্রে বাঁচার জন্য শিক্ষা,
- প্রকৃত মানুষ তৈরির জন্য শিক্ষা।
যদিও তাঁর এই ক্ষেত্রগুলি বহুকাল থেকেই শিক্ষার লক্ষ্য ছিল, কিন্তু বাস্তবে কখনােই তার যথাযথ প্রয়ােগ ঘটেনি। তাই গতানুগতিক শিক্ষায় অর্থের পরিবর্তে বর্তমানে তাকে সমাজের উপযােগী করে গড়ে তােলার আন্দোলন সর্বস্তরে, সব দেশে শুরু হয়ে গেছে।
Leave a comment