পৃথিবীর বিশেষ কতকগুলি অঞ্চলে বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সমাবেশে এক উল্লেখযােগ্য বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলগুলি বাস্তুতান্ত্রিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিত্য প্রয়ােজনে এইরূপ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলিতে মানুষের অবাধ অনুপ্রবেশ ও হস্তক্ষেপে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। ফলে এই অঞ্চলের সমস্ত প্রজাতির জীব সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুত হারে হ্রাস পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এই সকল বিপন্ন জীব প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এইরূপ স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি সমৃদ্ধ স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত বিশেষ প্রাকৃতিক অঞ্চলে নিত্য ভবিষ্যতে বিপন্ন প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে তৎপরতা বাড়ে। এইরূপ অঞ্চলকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বা Biodiversity Hotspot বলা হয়।

ব্রিটিশ বাস্তব্যবিদ্যা বিশেষজ্ঞ নরম্যান মায়ারস্ (Norman Myers) 1988 খ্রীস্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘Biodiversity Hotspot’-এর ধারণা প্রদান করেন। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে মােট 34টি হটস্পটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সাইলেন্ট ভ্যালি, পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান ও অগস্ত্য মালাই হল উল্লেখযােগ্য জীববৈচিত্র্য হটস্পটের উদাহরণ।

(১) স্বস্থানিক সংরক্ষণ : যখন কোনাে জীবকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করা হয়, তখন তাকে স্বস্থানিক সংরক্ষণ (In-Situ Conservation) বলে। সাধারণত কোনাে জীবের প্রাকৃতিক বাসস্থান অঞ্চলে অভয়ারণ্য বা জাতীয় উদ্যান সৃষ্টি করে তার স্বস্থনিক সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। যেমন সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ, অসমের কাজিরাঙায় গন্ডার সংরক্ষণ ইত্যাদি। বিশ্ব সংরক্ষণ তদারকি কেন্দ্র (World Conservation Monitoring Centre) বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রায় 37,000 আরক্ষিত অঞ্চল চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বিশ্বজুড়ে 621টি বায়ােস্ফিয়ার রিজার্ভ গঠন করা হয়েছে।

(২) অস্থানিক সংরক্ষণ : যখন কোনাে জীবকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়ােজন হয় যা তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্ভব নয়, তখন সেই জীবকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে কোনাে সুরক্ষিত অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়। এই ধরনের সংরক্ষণকে অস্থানিক সংরক্ষণ (Ex-Situ Conser vation) বলে। যেমন—বােটানিক্যাল গার্ডেনে উদ্ভিদের সংরক্ষণ করা হয়, জুলজিকাল পার্ক নির্মাণ করে প্রাণীদের সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণাগারে বীজ ব্যাংক, শুক্রাণু ব্যাংক, ডিম্বাণু ব্যাংক, জিন ব্যাংক, টিস্যুকালচার প্রভৃতির মাধ্যমেও অস্থানিক সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

(৩) কৃত্রিম বনাঞ্চল সৃষ্টি : বিভিন্ন অব্যবহৃত ও পতিত জমিতে বৃক্ষরােপণ করে কৃত্রিম বনাঞ্চল সৃষ্টি করতে হবে। যাতে বহু সংখ্যক জীব ঐ বনাঞ্লে আশ্রয় নিতে পারে।

(৪) আন্তর্জাতিক বােঝাপড়া : জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য আন্তজার্তিক স্তরে বিভিন্ন দেশের মধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পারস্পরিক সহয়ােগিতা স্থাপন করতে হবে।

(৫) আইন প্রণয়ন : জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যে সঠিক, পর্যাপ্ত ও কঠোর আইন বলবৎ করতে হবে।

(৬) গবেষণা : প্রাকৃতিক সম্পদের সুস্থায়ী ব্যবহার ও গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে।