উত্তর : প্রদত্ত চরণগুচ্ছ কাহ্নপাদানাম রচিত ১০ নং চর্যাপদ থেকে গৃহীত হয়েছে। এখানে অন্ত্যজশ্রেণির প্রতিনিধি ডোম্বী এবং তাদের আবাস-অবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ। বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধনসংগীত। বৌদ্ধ সহজিয়াগণ তাঁদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রাচীন বাংলার মানুষের জীবন ও সমাজের বিশ্বাস, সংস্কার, আচার, রীতিনীতিকে সহজভাবে তুলে ধরেছেন। চর্যার বাঙালি সমাজ মূলত ডোম, শবর, জেলে, কাপালিক, তাঁতিসহ সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের জীবনের রূপায়ণ। সে যুগে নিম্ন শ্রেণির মানুষ উচ্চ শ্রেণির দ্বারা উপেক্ষিত, অবজ্ঞাত ছিল। নগরে প্রবেশের অধিকার তাদের ছিল না। দিনের আলোতে যারা ছিল অস্পৃশ্য, রাতের আঁধারে তাদের ঘরের পাশেই ঘুরঘুর করতো।
তথাকথিত উচ্চশ্রেণির পুরুষেরা। আর্য সমাজ তাদের অনার্য বলে সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখতো নগরের বাইরে। সেখানে তাদের জীবন ও জীবিকার সংগ্রাম। উঁচু উঁচু টিলার উপরে তাদের ঘর। ঘনবসতি না হওয়ায় প্রতিবেশী নেই। আপদেবিপদে সংকটে তারা নিজেরাই নিজেদের টিকিয়ে রাখতো। ভূসম্পদ থেকেও ছিল বঞ্চিত। পাহাড়ের অনুর্বর মাটি চাষ করে ফসল ফলাত। আর্থিক অসচ্ছলতা আর অভাব অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। নগরে প্রবেশের অধিকার না থাকায় তারা শিক্ষা সংস্কৃতির চর্চা থেকেও ছিল বঞ্চিত। এ এক ধরনের শোষণ। শোষিত শ্রেণি নিজেদের উচ্চশ্রেণি বলে দম্ভ করতো কিন্তু তাদের লোলুপ দৃষ্টি থাকত নগরের বাইরের নারীদের প্রতি। এখানে ‘বামহন’ বলতে কবি ব্রাহ্মণ সমাজের কথা বলেছেন।
মূলত দিনের বেলা যারা অন্ত্যজ অস্পৃশ্য, রাতের বেলায় তারাই স্পৃশ্য হয়ে উঠে। প্রাচীন বাংলার সমাজে এই শ্রেণিবৈষম্য প্রকট ছিল।