অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা-ভাবনা করলে পরিণামে নিজেরই ক্ষতি সাধিত হয়। তাই পরের ক্ষতির চিন্তা থেকে দূরে থাকা সকলের কর্তব্য।
সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন-এর সৃষ্ট সকল মানুষের যাবতীয় কর্ম প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য হলো সুখে-শান্তিতে ও আরামে থাকা। এই দুনিয়ায় কত রকমের মানুষ দেখা যায়। কেউ নিজের সবকিছু দিয়ে, এমন কী প্রাণ দিয়েও পরের উপকার করে। আবার এমন লোকও আছে, যারা পরের ভালো তো করেই না বরং কী করে সর্বনাশ করা যাবে সেই চিন্তায় সব সময় মশগুল থাকে। এ ধরনের মানুষ নেহায়েতই অমানুষ। তাদের অনিষ্ট আচরণে শুধু সেই নয়, সাথে ব্যক্তি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়:
“যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিছে যে নিচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।”
উল্লিখিত উক্তিটির মূল কথা হলো- যে নিজের উপকার হবে ভেবে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা চালায়, মূলত সে নিজেই তার নিজের ক্ষতি করে।
পৃথিবীতে মহাপুরুষগণের জীবনী পাঠে দেখা যায়, তাঁরা সমগ্র জীবন মানুষের কল্যাণ সাধনে বিলিয়ে দিয়েছেন। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চলার পথে এক বৃদ্ধা বিদ্বেষবশত প্রতি দিন কাঁটা বিছিয়ে রাখত। মহানবী (স.) কাঁটার আঘাতে কষ্ট পেলেও বৃদ্ধাকে কোনোদিন গালমন্দ করেন নি। একদিন হযরত মুহম্মদ (স.) তাঁর চলার পথে কাঁটা দেখতে না পেয়ে বিস্মিত হন এবং খবর নিয়ে জানতে পারলেন যে, যে বৃদ্ধা এই কাজ করতেন সে ভীষণ অসুস্থ। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) তৎক্ষণাৎ বুড়িকে দেখার উদ্দেশ্যে সেই বুড়ির বাড়িতে পৌঁছেন এবং তার অসুখের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন। এতে সেই বৃদ্ধা বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করতে পারে, পরের অনিষ্ট চিন্তা ও কাজের মধ্যে কোনো মঙ্গল নেই। বরং এরূপ পরের অনিষ্ট চিন্তা ও কাজ নিজের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। পরের অনিষ্ট করতে গিয়ে বহু লোক নিজেদের জীবনকেই ধ্বংস করেছে। এর বহু নজির ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। এই বিচিত্র জগতে মানুষ ক্ষুদ্র স্বার্থোদ্ধারে এত অন্ধ হয়ে পড়ে যে, পরের অমঙ্গল ও অনিষ্ট করতে গিয়ে স্বাভাবিক জ্ঞানবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে এবং পরিণামে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে।
কখনোই অপরের কোনো অকল্যাণ চিন্তা করা যাবে না। এসব পরিহার করে বরং পরের স্বার্থে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতে হবে। তবেই জীবন সার্থক এবং সুন্দর হবে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : যে ব্যক্তি অপরের অনিষ্ট চিন্তা করে সে দু’দিন আগে হোক আর পরে হোক নিজের অনিষ্টও ভোগ করে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
সম্প্রসারিত ভাব : বিশ্বের সমস্ত ধর্মশাস্ত্রে অপরের মঙ্গল কামনাকারীর প্রশস্তি কীর্তন করা হয়েছে। যারা পরের অনিষ্ট করে তারা দুষ্কৃতিকারী। নিজের অপকর্মের ফল তাদেরকে ভোগ করতেই হবে। যে অন্যায় করে সে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী। অতএব তার অন্তরে আত্মগ্লানিরূপ নরকানল সব সময় প্রজ্জ্বলি থাকে। মুহূর্তের জন্যেও তার জীবনে স্বস্তি নেই। বাস্তবেও আমরা এর প্রতিফল দেখতে পাই। অনিষ্টকারীকেই পর্যাপ্ত শাস্তি ভোগ করতে হয়। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। অতএব পরের অনিষ্ট সাধনের মত কোন গর্হিত কাজ করার চিন্তা থেকে আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেককে রক্ষা করা উচিত। আমাদের প্রতি মুহূর্তে স্মরণ রাখতে হবে যে, অপরের অনিষ্ট চিন্তা করা মহাপাপ। যে কাজে অন্যের অনিষ্ট ঘটবে সে কাজ করা কোন সুবিবেচক লোকের উচিত নয়। সুতরাং লোকহিতকর কর্ম সম্পাদনে আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। এ মর্মে উল্লেখ্য যে, দেখ ভাই চরাচরে, যে যেমন কর্ম করে তেমনি ফল সে তার পায়। মানব জীবনের মহৎ গুণাবলীর মধ্যে পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পরোপকারের মত মহৎ গুণের তুলনা নেই। অধিকাংশ মানুষের জীবন দুঃখ-দারিদ্র্যে পরিপূর্ণ। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা সবার থাকা উচিত। পৃথিবীর জীবন সুখকর করে তোলার জন্য মানুষের জীবন থেকে অভাব-অনটন, দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে হবে।
তাই আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা অপরের কল্যাণ তো করেই না, বরং অপরের ক্ষতিসাধনে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু তাদের বিপদ যে তারা নিজেরাই ডেকে আনছে তা তারা জানে না। ফলে তারা অজ্ঞাতসারে নিজেদেরই অনিষ্ট ডেকে আনে।