অথবা, ণ-ত্ব বিধান বলতে কী বুঝ? ণ-ত্ব বিধানের তিনটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
অথবা, বাংলা বানানে মূর্ধন্য-ণ ব্যবহারের নিয়মগুলো উদাহরণসহ লেখ৷
ণ-ত্ব বিধানঃ যে বিধান বা নিয়মে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ-তে পরিণত হয়, তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে। এর ব্যবহারের নিয়ম বা সূত্রগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
১. ট-বর্গের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- কণ্টক, কুণ্ঠা, লুণ্ঠন, দণ্ড, ভণ্ড ইত্যাদি।
২. ঋ, র, ষ- এ কয়টি বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- কৃপণ, কৰ্ণ, বৰ্ণ, তৃণ, ঋণ, ভাষণ ইত্যাদি।
৩. প্র, পরা, পরি, নির এ চারটি উপসর্গের পর এবং অন্তর শব্দের পরবর্তী নব, নশ, নহ, নদ, নী, অন, হন্- এ ৭টি ধাতুর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- প্রণাম, পরিণতি, নিৰ্ণয় ইত্যাদি ৷
৪. মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও সমাসবদ্ধ কয়েকটি শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- অগ্রণী, গ্রামীণ ইত্যাদি।
৫. খাঁটি বাংলা ও বিদেশি শব্দে কখনো মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- কান, কুরআন, ইরান ইত্যাদি।
৬. প্র, পরা, পূর্ব অপর- এ চারটির পরবর্তী অ শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- প্রাহ্ন, পরাহ্ন, পূর্বাহ্ন, অপরাহ্ন ইত্যাদি।
৭. পর, পার, উত্তর, চান্দ্র, নার, রাম শব্দের পর ‘আয়ন’ শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন— পরায়ণ, উত্তরায়ণ, নারায়ণ, রামায়ণ ইত্যাদি।
৮. ঋ, র, ষ-এর পর স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য, ব, হ বা ং (অনুস্বার) থাকলে তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- দর্পণ, গ্রহণ, শ্রবণ, লক্ষণ, ভক্ষণ ইত্যাদি।
৯. ত, থ, দ, ধ-এর পূর্বে সংযুক্ত বর্ণ দন্ত্য-ন হয়; এক্ষেত্রে কখনো মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন— দৃষ্টান্ত, বৃন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন, বন্ধন ইত্যাদি।
১০. যদি ঋ, র, ষ-এর পর ক-বর্গ, প-বর্গ, য, র, হ, ও ছাড়া অন্য কোনো বর্ণ থাকে এবং তারপর দন্ত্য-ন থাকে, তাহলে মূর্ধন্য-ণ হবে না। যেমন- দর্শন, দর্শন, নর্তন, প্রার্থনা, বর্ধন ইত্যাদি।
১১. কিছু কিছু শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- কল্যাণ, গণ, অণু, কণা, গুণ, গণিত, গণিকা, আপণ, কোণ, বাণিজ্য, বিপণি, বীণা, বাণী, তৃণ, নিপুণ, পণ্য, পুণ্য, পণ, ফণি, মাণিক্য, লাবণ্য, শণ, শোণ, লবণ, শোণিত, শাণিত, শোষণ, কৰ্ষণ ইত্যাদি।