বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ লেখার নিয়মঃ বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে বিদেশি শব্দের সমাহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সাহিত্যিকগণ ভাষার সৌন্দর্য ও প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধির স্বার্থে এসব বিদেশি শব্দ বাংলা সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন। তবে পণ্ডিতগণ বাংলা ভাষায় এসব বিদেশি শব্দ লেখার সুনির্দিষ্ট নিয়মও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা প্রদত্ত হলো-
১. আরবি, ফারসি শব্দে ‘সে’ (ث) ‘সিন’ (س), ‘সোয়াদ’ (ص) বর্ণগুলো প্রতিবর্ণরূপে স এবং শিন (ش)-এর প্রতিবর্ণরূপে শ ব্যবহার হয়। যেমন- সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, সালাত, এশা, শাবান (হিজরী মাস), শাওয়াল (হিজরী মাস), বেহেশত ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে স-এর পরিবর্তে ছ লেখার প্রবণতাও দেখা যায়, তা ঠিক নয়। তবে যেখানে বাংলায় বিদেশি শব্দের বানান সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে স বর্ণটি ছ-এর রূপ লাভ করেছে, সেখানে ছ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- পছন্দ, মিছিল, মিছরি, তছনছ ইত্যাদি।
২. ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি S বর্ণ বা ধ্বনির জন্য স এবং sh, -sion, -ssion, -tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহার হবে। তবে questions ইত্যাদি শব্দের বানান অন্যরূপ। যেমন— কোএচ হতে পারে।
৩. বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনি পদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন— কাগজ, জাহাজ, হাসপাতাল, পুলিশ, হুকুম, হাজার, বাজার, টেবিল, জেব্রা, জুলুম, ফিরিস্তি ইত্যাদি।
তবে ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে যা (ز), যা (ذ), দোয়াদ (ص), যোয়া (ظ) রয়েছে, যার ধ্বনি ইংরেজি z-এর মতো, সেক্ষেত্রে উক্ত আরবি শব্দগুলোর জন্য য ব্যবহার হওয়া সংগত। যেমন- আযান, অযু, কাযা, নামায, মুয়াযযিন, যোহর, রমযান। তবে কেউ কেউ ইচ্ছা করলে এক্ষেত্রে য-এর পরিবর্তে জ ব্যবহার করতে পারে। উল্লেখ্য, জাদু, জোয়াল, জো ইত্যাদি শব্দ জ দিয়ে লেখা বাঞ্ছনীয়।
৪. ইংরেজি st-এর স্থলে সংযুক্ত বর্ণ ‘স্ট’ হবে। যথা— স্টোভ (stove), স্টিমার ইত্যাদি।
৫. বিদেশি শব্দে ঐ এবং ঔ-এর স্থলে যথাক্রমে ‘অই’ এবং ‘অউ’ বসবে। যেমন- পছন্দ সৈ> পছন্দসই, পৈছা > পইছা ইত্যাদি।
৬. বিদেশি শব্দে বিকৃত বা বাঁকা উচ্চারণে ‘অ্যা’, ‘্যা’ ব্যবহার হবে। যেমন- অ্যান্ড, ক্যাসেট ইত্যাদি।