মিত্রত্ব সর্বত্রই দুর্লভ, মিত্রত্ব রক্ষা করাই কঠিন।
রক্ত-সম্পর্কের বাইরে মানুষে মানুষে সৌহাদ্য গড়ে ওঠে সম্প্রীতির বন্ধনে, আত্মার বন্ধনে। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে অনেকের সঙ্গেই মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে খুব সহজেই বন্ধু পাওয়া যায়। এদের মধ্যে প্রকৃত বন্ধু যেমন কম, তেমনি বন্ধুত্ব টিকেও থাকে আরো কম। সামাজিক জীব সমাজেই বসবাস করে। মানুষ একাকী বাস করতে পারে না। সে খোঁজে তার সাহচর্য, যার সাহচর্যে সে সুখের দিনে উৎসাহ এবং দুঃখের দিনে সান্ত্বনা প্রত্যাশা করে। এমনি এক প্রাণের মানুষ হয়, প্রাণের বন্ধু। হৃদয় সঞ্চিত আবেগের আদান-প্রদান ও পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষে মানুষে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের নিবিড় সম্পর্ক। বন্ধুত্ব যত সহজে গড়ে ওঠে, তত সহজে তা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। কারণ প্রতিটি মানুষ যেমন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল, তেমনি। প্রত্যেকের রয়েছে স্বার্থ চেতনা। পারস্পরিক স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বার্থচেতনায় যতক্ষণ না আঘাত লাগে, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট থাকে। কিন্তু যখনই সেখানে আঘাত লাগে, তখনই সে বন্ধন ছিন্ন হয়। মিত্রত্ব রক্ষা করতে হলে সে ত্যাগ তিতিক্ষা, ক্ষমা-ঔদার্য-সহিষ্ণুতার প্রয়োজন আমরা বহু ক্ষেত্রেই সে গুণগুলো অর্জনে সক্ষম হই না। তাই বন্ধুর সামান্য অপরাধকেই বিশাল ভেবে ক্ষমা করার মতো ঔদার্য্য বিস্মৃত হই। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি হারিয়ে, প্রতিশোধ স্পৃহায় বন্য হয়ে উঠি। এ ধরনের বন্ধুত্ব বা মিত্রতা একতরফা ও স্বার্থপরতা নির্ভর। যে বন্ধুত্ব সাময়িক স্বার্থপরতা চিহ্নিত নয়, বন্ধন ও পারস্পরিক সম্প্রীতি যে বন্ধুত্বের ভিত্তি সে বন্ধুত্বই প্রকৃত বন্ধু। এ ধরনের বন্ধুত্ব সুসময়ে গড়া দুঃসময়ের ভাঙা আত্মিক বন্ধুত্ব নয়। সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতের কষ্টিপাথরে নির্ভেজাল হতে পারলেই কেবলমাত্র গড়ে উঠতে পারে প্রকৃত বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বে দু’পক্ষকেই হতে হয় স্বার্থত্যাগী। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসই গড়ে তুলতে পারে বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন। স্বার্থচেতনার অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই প্রকৃত বন্ধুত্ব টিকে থাকে এবং মহিমান্বিত হয়।