মূলত যে নাটকের ভাষায় থাকে সংলাপ এবং আঙ্গিকে থাকে কবিতার অবয়ব তাই কাব্যনাট্য হিসেবে বিবেচিত। তবে সংলাপাত্মক কবিতাকেই কাব্যনাট্য বলা চলে না। কাব্যনাট্যের কাব্য ও নাট্যধর্মের নির্দিষ্ট পরস্পর সম্পর্ক এবং শিল্পগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই সকল সাহিত্যেই প্রথম যুগের নাটক কবিতার ভাষাই অবলম্বন করেছে। তাই কাব্যনাট্যেই নাটকের পদযাত্রা। বিশেষত প্রথমে সাহিত্যের প্রকাশমাধ্যমই ছিল কাব্য-ভাষা।

কাব্যনাটক সার্বিকভাবে অন্তর্নাটক। সুতরাং কাব্যনাটকের সংলাপ মানুষের অন্তসত্যকে বাঙ্ময় করে। অন্তর্লোক উন্মোচনের অনিবার্য তাড়নায় সেখানে সংলাপ যখন নাটকীয় পরিস্থিতির গভীরে প্রবেশ করে তখন কবিতাকে স্বাভাবিক কথ্যভাষার মতোই অবলীলাক্রমে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ সেই সংলাপ আর তখন নিছক কবিতা থাকে না, নাট্যগুণ সমন্বিত এক কাব্যভাষা হয়ে ওঠে।

কাব্যনাটকের ভাষা সম্পর্কে শঙ্খ ঘোষ বলেন, “যে কোনো মুহূর্তে ভাবনা বা অনুভব অনুকূল গাঢ়তায় প্রবেশ করতে – পারে, এমন কাব্যভাষা তাই নির্মাণ করতে হবে কাব্যনাট্যে, তার জন্য স্থিতিস্থাপক নম্য এক ছন্দের প্রয়োজন এবং এর দ্বারা একদিকে যেমন এ নাটকে জীবনচিন্তার সাময়িকতা ও কবিকল্পনার চিরন্তনতা যুক্ত হবে, অন্যদিকে তেমনি কবিতার জগৎও প্রসারিত হবে বহুদূর।”

এলিয়টের মতে, “আমাদের প্রতিদিনের সাধারণ অভিজ্ঞতাও যেমন কাব্যনাট্যের বিষয় হতে পারে, তেমনি সাধারণ পরিচিত ছকের মানুষও কাব্যনাট্যের চরিত্র হতে পারে। তবে কাব্যনাট্যে ঐ বাস্তবতার বহির্সত্যের চেয়ে তার অন্তর্গত। পরিচয় ও ব্যাখ্যাই রূপায়িত হওয়া প্রয়োজন।”

সুতরাং আমরা বলতে পারি- ‘কাব্যনাট্য ভাষা, চরিত্র ও ঘটনার বাস্তব রূপকে সম্পূর্ণগ্রাহ্য করে নিয়েই তার অন্তঃস্তলে যে নিগূঢ় সত্যের ব্যঞ্জনা সুপ্ত থাকে, তা উদ্ঘাটনে সচেষ্ট হয়।’

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।