বিশ্বে এমন অনেক সৌখিন মানুষ আছেন যারা ঘড়ি খুব ভালোবাসেন । নিজের কাছে সংগ্রহ করে রাখার জন্য দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়ান । যারা শখ করে বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং দুর্লভ ঘড়িগুলো হাতে দিতে বা দেয়ালে টাঙিয়ে রাখার জন্য সংগ্রহ করে থাকেন । এই স্মার্টফোনের যুগে ও ঘড়ি মানুষের কত প্রিয় তা ঘড়ির দাম দেখলে বোঝা যায় । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে গ্রাফ ডায়মন্ড এবং গ্রাফ জুয়েলারি হ্যালুসিনেশন এখন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ঘড়ি ।
যার দাম ৫৫ মিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশি টাকায় ৪৬৪ কোটি টাকার ও বেশি ।অসংখ্য রঙিন হীরা ব্যবহার করে নারীদের হাতের ব্রেসলেট এর ডিজাইনে এই ঘ ড়ি তৈরি করা হয়েছে । তবে এই ঘড়িটি পুরুষরাও ব্যবহার করে থাকে । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ি সম্পর্কে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ঘড়ির ইতিহাস
মানুষ যখন প্রথম সময় পর্যবেক্ষণ করতে শেখে তখন তারা সূর্যের গতিবেগ দেখেই সময় নির্ধারণ করতো । সময় নির্ধারণ করতে গিয়ে তারা ঘড়ির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে । ঘড়ি তৈরি করার পর ঘড়ি সম্পর্কে জানতে শুরু করে যারা ঘড়ি সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞই ছিলনা ।ঘড়ি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ১৮৮৪ সালের দিকে । ইয়াং বেল আধুনিক ঘড়ি তৈরি করেন । তারপর আসে বালিঘড়ি ,মিথ ঘড়িএবং মহাজাগতিক ঘড়ি।
এরপর আরও কত যে ঘড়ি তৈরি হয়েছে তা আমরা বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে বুঝতে পারি । এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ি যার দাম শুনলে আপনারা নিজেরা ও অবাক হয়ে যাবেন । এই বিশ্বের সবচেয়ে দামি জিনিসটা কি জানেন! সেটা হলো সময় । আর এই দামি জিনিসটা কে জানতে প্রয়োজন একটি দামি ঘড়ি ,তাইনা ! তো আসুন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ি নিয়ে আলোচনা করা যাক-
ক্যারেট কোপার্ড ওয়াচ
বিশ্বের সবচেয়ে দামি দশটি ঘড়ির মধ্যে ক্যারেট কোপার্ড ওয়াচ এর অবস্থান সবার আগে । এই ঘড়িটি তৈরি করেছেন আল রাজ অল বিট ক্লক । তিনি কিছুদিন আগে সৌদি আরবের মক্কায় বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই ঘড়ি তৈরি করেছেন । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ঘড়ি হিসেবে এই ঘড়িটি ও বিক্রি হয়েছে যার দাম ২৫মিলিয়ন ডলার । এই ঘড়িটি সাজানো হয়েছে ২০১ ক্যারেটের ডায়মন্ড দিয়ে । এর মধ্যে
রয়েছে ১১ক্যারেট সাদা ডায়মন্ড ,১৩ ক্যারেট হলুদ ডায়মন্ড ১৫ ক্যারেট পিংক ডায়মন্ড ডিয়ে ।
একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ১৬৩ ক্যারেট হলুদ ও সাদা ডায়মন্ড। ঘড়ি চারপাশে ডায়মন্ড দিয়ে সজ্জিত করণ করা হয়েছে যা অত্যন্ত দুর্লভ এবং দেখতে অসাধারণ । আপনি যদি ঘড়ি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে নাম্বার ওয়ান এই ঘড়িটি অনায়াসেই কিনতে পারেন ।
প্যাকেট ফিলিপস প্লাটিনাম ওয়াল্ড টাইম ওয়াচ
আপনি নিশ্চয়ই এই ঘড়ির নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এই ঘড়ির রহস্য । এই ঘড়ি একসঙ্গে বিভিন্ন দেশের ও শহরের সময় জানাতে পারে । আপনারা যারা একসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে সময় একসঙ্গে জানতে চান তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি১০টি ঘড়ির মধ্যে এই ঘড়িটি নিতে পারেন । এই ঘড়ির দাম আকাশছোঁয়া মনে হলেও এর দাম ৪ মিলিয়ন ডলার যা শৌখিন মানুষের কাছে তেমন কিছুই নয়।
এটি একটি সাহায্যকারী সামগ্রী হিসাবে ২৪ টি দেশের সময় একসাথে জানাতে পারে ।যদিও ২৪টি দেশের বা শহরের সময় ভিন্ন । এটি তৈরি হয়েছে প্ল্যাটিনাম বা ১৮ ক্যারেট হলুদ ,ও গোলাপি ডায়মন্ড ও সাদা সোনা দিয়ে । আপনি এই ঘড়িটি নির্বাচন আপনার জন্য করতে পারেন ।
প্যাকেট ফিলিপস সুপার কম্প্লিকেশন ওয়াচ
এই ঘড়িটির ডিজাইনার হলেন হেনরি গ্রাভেস যিনি আমেরিকার একজন নাগরিক এবং তিনি পেশায় একজন ব্যাংকার । খেলোয়াড়রা এই ঘড়ি সাধারণত ব্যবহার করে থাকেন ,বিশেষ করে যারা সাঁতার বা ফুটবল খেলেন তারা খেলার সময় এ ধরনের ঘড়ি ব্যবহার করে সময় দেখে থাকেন । তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ইংরেজদের হাতে । তবে যারা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী তাদের হাতে ও এ ধরনের ঘড়ি দেখা যায় । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে এটিও একটি ।
এই ঘড়ির দাম ১১ মিলিয়ন ডলার । এটিও ১৮ ক্যারেট ডায়মন্ড দিয়ে তৈরি পুরনো ক্লাসিক ঘড়ি । দামি ঘড়ি কিনতে চাইলে আপনি ও এই প্যাকেট ফিলিপস সুপার কম্প্লিকেশন ওয়াচ কিনতে পারেন ।
প্যাকেট ফিলিপস স্কাই মুন ট্যুর বিলিয়ন ওয়াচ
সৌখিন ও ঘড়ি প্রেমী মানুষের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় ঘড়ি । এটি বিশ্বের সর্বপ্রথম ঘড়ি যার দুটি বৈশিষ্ট্য আছে । এই ঘড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি আকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময় নির্ধারণ করে ।এর একটিতে দেখা যায় সাধারণ সময় এবং অন্যটিতে দেখা যায় চাঁদের সময়। এই ঘড়িটি সময় দেখার জন্য বেশ আকর্ষণীয় । এই ঘড়ির দাম ১.৩ মিলিয়ন ডলার । আপনি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ টি ঘড়ির মধ্যে থেকে এই ঘড়িটি নির্বাচন করতে পারেন এবং আপনার জন্য কিনতে পারেন ।
ভ্যান্সেরন কন্সটাটিন ট্যুর ডি ইল ওয়াচ
ভ্যান্সেরন কন্সটাটিন ট্যুর ডি ইল ওয়াচ নামের এই ঘড়িটি ও দ্বিমুখী সময় বহন করে । এটি পাঁচবার সময় নির্ধারণ করতে পারে । এর মধ্যে আছে সানসেট টাইম , মিনিট , সেকেন্ড এবং ক্যালেন্ডার রিপোর্টিং। অনন্য গুণসম্পন্ন এই ঘড়িটি দেখতে সাদাসিধে হলেও কাজে তা নয় । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে এই ঘড়িটি অন্যতম । এই ঘড়িটি তৈরি হয়েছে ১৮ক্যারেটের টাইম পিচ দিয়ে । এই ঘড়িটির দাম ১.৫ মিলিয়ন ডলার । আপনি যদি ঘড়ি প্রেমি মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে এই ঘড়িটি কিনতে পারেন ।
হুবহু ব্ল্যাক ক্যাভিয়ার ব্যাস্ক ওয়চ
আপনি আপনার পছন্দের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে হুবহু ব্ল্যাক ক্যাভিয়ার ব্যাস্ক ওয়চ নির্বাচন করলে করতেই পারেন । কারন এই ঘড়িতে আছে অনন্য দুটি বৈশিষ্ট্য । এই ঘড়িটি ও দুটি দিক নির্দেশ করে । এর একটি হলো সাধারণ সময় এবং আরেকটি বিগ ব্যাস্ক । এই ঘড়িটি তৈরি হয়েছে ১০০টিরও বেশী ডায়মন্ড এবং ১৮ক্যারেটের সাদা সোনা দিয়ে । এই ঘড়ির দাম ৮মিলিয়ন ডলার । এই
ঘড়ি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আপনার হাতে হবে মানানসই । সত্যিই অসাধারণ ঘড়ি এটা । আপনি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে একটি হিসেবে এ ঘড়ি কিনতে পারেন ।
দ্যা কোপ্রিট আইচ ক্যাব ওয়াচ
দ্যা কোপ্রিট আইচ ক্যাব ওয়াচ ঘড়িটি নামে যেমন সুন্দর , দেখতে ও তেমনই সুন্দর । আবিষ্কারক সিস এই ঘড়িটি তৈরি করেছেন । এই ঘিড়িটি ও তৈরি হয়েছে ৬০ক্যারেটের ডায়মন্ড টাইম পিস এবং ১৮ ক্যারেটের সাদা সোনা দিয়ে। এই ঘড়ির দাম ১.১ মিলিয়ন ডলার । আপনারা যারা বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১0 টি ঘড়ির মধ্যে এই ঘড়িটি নির্বাচন করতে চান তারা এই ঘড়িটিকে কিনতেই পারেন। দাম বেশি মনে হলেও যারা সৌখিন এবং ঘড়ি প্রেমি তাদের কাছে এটা কিছুই নয় ।তাই আপনি এই ঘড়িটি কিনতে পারেন ।
নাম্বারে ব্যালেন্স পেইন ওয়াচ
আপনি সময় দেখার পাশাপাশি ক্যালেন্ডারের তারিখ দেখতে চান ! তাহলে এখনই কিনে নিতে পারেন নাম্বারে ব্যালেন্স পেইন ওয়াচ ঘিড়িটি । কারণ এই ঘড়িতে আপনি সময় দেখার পাশাপাশি ক্যালেন্ডারের তারিখ এবং প্রতি সেকেন্ড সময় গড়িয়ে যাওয়ার খসড়া যা এই ঘড়ির সাথে যুক্ত আছে তা পেয়ে যাবেন । কারণ এটি বহন করে চলে ঐতিহ্যের কিছু বিষয়বস্তু । গ্রান্ড কমপ্লিকেশন মডেলের এই ঘিড়িটির নাম্বার-১৭৩৫ যার কিছু আলাদা বিশেষত্ব আছে ।
এটি তৈরি হয়েছে ১৭৩৫ ক্যালিবার উইন ডিং এবং ১৮ক্যারেটের সোনাদিয়ে । এই ঘড়ির দাম ৮ লাখ ডলার ।বিশ্বের সবচেয়ে দামি দশটি ঘড়ির মধ্যে অন্যতম ঘড়ি এটি । আপনারা যারা ঘড়ি প্রেমি এবং যাদের সামর্থ্য আছে এবং যারা ঘড়ি পরতে ভালোবাসেন তারা এই ঘড়িটি কিনতে পারেন । হাতে পরার মত এত সুন্দর ঘড়ি খুব কমই দেখতে পাওয়া যায় ।
নাম্বারে বাজেট পকেট ওয়াচ
নাম্বারে বাজেট পকেট ওয়াচ নাম শুনে কি মনে হচ্ছে ! এই ঘড়ি শুধু পকেটে রাখা যায় ? আসলে তা নয় । এই ঘড়িটি পকেটে রাখার পাশাপাশি হাতেও পরা যায় । ইংরেজরা এই ঘড়ি বেশি ব্যবহার করেন । কারণ এটা আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে । এই ঘড়িটি ১৮ক্যারেটের সিলভার গোল্ড ডায়াল দিয়ে তৈরি । এই ঘড়ির মডেল নাম্বার ১৯০৮ বি এ ১২ এবং দাম ৭লাখ ৩৪ হাজার ডলার । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১0 টি ঘড়ির মধ্যে এটি ও একটি ।
লুইচ ময়নেট ম্যাগিস্ট্রালিস ওয়াচ
আপুনি পৃথিবীতে বসেই চাঁদের সময় দেখতে চান ! তাহলে এখনই কিনে নিন লুইচ ময়নেট ম্যাগিস্ট্রালিস ওয়াচ । এই ঘড়িতে আপনি একসঙ্গে পৃথিবী এবং চাঁদের সময় দেখতে পাবেন । এটি একটি হাত ঘড়ি । এবং এতে সময় দেখার জন্য ৫ টি ডায়াল আছে । ১৮ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি এই ঘড়িতে আরো আছে ক্যালেন্ডার এবং মনোক্রনোগ্রাফ এবং আরো যুক্ত আছে ডুফার লুনার মেটিউরিট । এই ঘড়ির দাম ৬০ হাজার ডলার । বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির মধ্যে আপনি এই ঘড়ি কিনতে পারেন ।
পাঠকের শেষ কথা
প্রিয় দর্শক আমি আজকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি দশটি ঘড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ।ঘড়ি তৈরির ইতিহাস থেকে শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি ঘড়ির দাম সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিতভাবে এই পোষ্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। আজকাল প্রায় প্রত্যেক ঘরে আধুনিক ঘড়ি রয়েছে। আপনি এখন আধুনিক ঘড়িতে সময় দেখার পাশাপাশি মোবাইলে কথা বলা , এসএমএস দেখা , এমনকি চাঁদের সময় পর্যন্ত দেখতে পারেন ।
তাই ঘড়ি প্রেমের মানুষ হিসাবে আপনি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ টি ঘড়ির মধ্যে একটিকে নির্বাচন করতে পারেন । সূর্যঘড়ি পা প্রকৃতিনির্ভর ঘড়ি প্রথম আবিষ্কার হয় মিশরে । ইউরোপিয়ানরা ১৪ শতাব্দীতে এসে এই তত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কার করেন । আর এই সূত্র ধরেই এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে অনেক আধুনিক ঘড়ি ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি , আপনি একজন সৌখিন এবং ঘড়ি প্রেমী মানুষ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১0 টি ঘড়ির মধ্যে যেকোনো একটি নির্বাচন করুন এবং নিজের সংগ্রহে রাখুন ।