মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন
Substantive & Adjective Law
আলোচ্য বিষয়:
- মূল আইনের সংজ্ঞা
- মূল আইনের প্রকৃতি
- মূল আইনের উৎস ও প্রকারভেদ
- পদ্ধতিগত/প্রক্রিয়াগত/বিশ্লেষণিক
আইনের সংজ্ঞা - মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সামঞ্জস্যতা
- মূল (স্থায়ী) আইন ও পদ্ধতিগত আইনের পার্থক্য
- “মূল আইন ও
পদ্ধতিগত আইনের পার্থক্য প্রকৃতিগত নয়, বরং গঠনগত” – স্যামন্ড - মূল, পদ্ধতিগত
ও
প্রতিকারগত আইনের ব্যবধান - কাৰ্যবিধিসমূহে
মূল আইন ও
পদ্ধতিগত আইনের অস্তিত্ব - ফৌজদারী কার্যবিধি
নিছক পদ্ধতিগত আইন কিনা যাচাই - দেওয়ানী
কার্যবিধি নিছক প্রক্রিয়াগত আইন কিনা যাচাই
মূল আইন (Substantive law) পদ্ধতিগত আইন (Adjective Law/Procedural law) আইনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আইনের terms দুটি “Substantive”এবং “Adjective” ১৯৪৩ সালে প্রথম বেন্থাম(Jeremy Bentham) তাঁর The works of Jeremy
Bentham বইয়ে উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রে অনুসৃত আইনের এই দুইশ্রেণী সমাজবদ্ধ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
মূল (আসল/স্থায়ী) আইনের সংজ্ঞা
[Definition of Substantive law]
যেসকল আইন ও বিধানে জনগণের পারস্পরিক অধিকার ও দায়দায়িত্ব কিংবা জনগণের এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ বা মামলার পক্ষগণের মধ্যকার পারস্পরিক অধিকার ও দায়–দায়িত্ব সম্পর্কিত বিধি–বিধান উল্লেখ থাকে,সেগুলোকে মূল আইন(Substantive Law) বলা হয়। মূল আইনের মাধ্যমে কোন অধিকার লংঘন সংক্রান্ত বিষয়ে এর যথার্থ প্রতিকারের দাবী উত্থাপন করা যায়। এক্ষেত্রে মূল আইন বলবৎ করার জন্য পদ্ধতিগত আইনকে অনন্য সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাংবিধানিক আইন, ভূমি আইন, চুক্তি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, দন্ডবিধি ও অংশীদারীত্বমূলক আইনগুলোর বিষয়বস্তু ইত্যাদি মূল আইনের উদাহরণ।
মূল আইনের প্রকৃতি
[Nature of substantive laws]
- মৌলিক আইনগুলো ব্যক্তির
অধিকার(rights)এবং বাধ্যবাধকতা(obligations) প্রতিষ্ঠিত করে। - এই আইনগুলো মামলার সিদ্ধান্ত
নেওয়ার স্বাধীন ক্ষমতা(independent power) রয়েছে। - মৌলিক আইনগুলি যে কোনও অপরাধের আইনি প্রেক্ষাপট(legal
context) (মামলা কীভাবে পরিচালিত হবে এবং অপরাধে নির্দিষ্ট শাস্তি ইত্যাদি) নির্দেশ করে। - বিধিবদ্ধ
আইন বা common law ব্যবস্থার নজির হলো substantive laws। - মৌলিক আইন ব্যক্তিদের
মধ্যে আইনী সম্পর্ক বা ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে কাজ করে। - মৌলিক আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত
নাগরিকদের অধিকার, বাধ্যবাধকতা এবং অপরাধ বা অন্যায় এমন কি তাদের প্রতিকার উভয়ই সংজ্ঞায়িত এবং নির্ধারিত হয়। - মৌলিক আইন বিচার প্রশাসনের(administration
of justice) সাথে সম্পর্কিত মামলার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে।
মূল আইনের উৎস
[Sources of substantive laws]
মৌলিক আইন সাধারণত থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে—
- Common laws এর নীতি যা ইতিমধ্যেই সংবিধিবদ্ধ আইন(statutory laws) হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে।
- সংবিধান(
Constitutio) - একই ধরনের ঘটনা ও পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বিচারিক নজির(judicial precedents)।
- বিভিন্ন চুক্তি যা আইনের শর্তকে নির্দেশ করে। যেমন-ইউরোপীয়
ইউনিয়নের(EU) প্রবিধান ও
নির্দেশাবলী এবং WTO এর নিয়ম ও
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ইত্যাদি। - আইনজ্ঞদের
লেখা - রাজা/শাসকের কাছ থেকে আদেশ;
- শরিয়া আইন
পদ্ধতিগত (প্রক্রিয়াগত/বিশ্লেষণিক) আইনের সংজ্ঞা
(Definition of Adjective Law):
পদ্ধতিগত আইন বলতে এমন এক শ্রেণীর আইনকে (বিধিকে) বুঝায়, যদ্বারা মূল আইনসমূহ বাস্তবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়। আমরা জানি, পদ্ধতিগত আইনের দ্বারা জনসাধারণের পারস্পরিক অধিকার ও দায়দায়িত্ব বা জনসাধারণ ও সরকারের মধ্যকার অধিকার ও দায়দায়িত্ব সৃষ্টি করা হয়। প্রসঙ্গক্রমে স্যার জন স্যামন্ড (Sir John Salmond) বলেন, “পদ্ধতিগত আইন হল আইনের এমন একটি শাখা, যা মামলার পদ্ধতি বা কার্যধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে” (The law of
procedure or Adjective law may be defined as that branch of law which
Governments the process of litigation) I
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, পদ্ধতিগত আইনে ঐসব নীতির কথা বর্ণিত থাকে যেসকল নীতিগুলো ভঙ্গ (উপেক্ষিত) হলে সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ যে উপায়ে আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে সক্ষম হতে পারে। যেমন– ফৌজদারী কার্যবিধি, দেওয়ানী কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রাসঙ্গিক মামলার রায়ে বিচারপতি হামিদুর রহমান অভিমত প্রকাশ করেন যে, “পদ্ধতিগত বিষয়বস্তুগুলো কি কি? ইহা সুস্পষ্ট যে, প্রতিকারমূলক বিষয়, বিচার প্রশাসন প্রণালী, সাক্ষ্য গ্রহণের বিধি ও আদালত ইত্যাদি বিষয়গুলো পদ্ধতিগত ব্যাপার” [আফজাল বনাম শের আফজাল; PLD (1969) SC 147]
পদ্ধতিগত আইনের গুরুত্ব বা প্রভাব (Importance of Adjective law):
আইনের অন্যতম প্রকার পদ্ধতিগত আইনের গুরুত্ব অত্যধিক। কেননা পদ্ধতিগত আইনের মাধ্যমেই মূল আইনগুলো বাস্তবে কার্যকর করে তুলা হয়। বিশেষত পদ্ধতিগত আইনের নীতিতে বলা হয়েছে যে, এসকল নীতিসমূহ ভঙ্গ করা হলে বা উপেক্ষিত হলে সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থপক্ষ আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ পদ্ধতিগত আইনে অনুরূপ আশ্রয় নেয়ার বিধানাদি বর্ণিত থাকায় এতে প্রতিপক্ষ আইনের নির্ধারিত গতিপথে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির ব্যাপারে সহজ উপায়ে মোকাবেলা করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তাই অধ্যাপক প্যাটন (Prof. Paton) অভিমত ব্যক্ত করেন যে, “মূল আইন দ্বারা মানুষের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করলেও পদ্ধতিগত আইনের অভাবে তা অকার্যকর হয়ে পড়বে” (The substantive law which defines our rights and duties
is, of course, important to all of us. but unless the adjective law is a
working machine, the substantive will not exist)।
পদ্ধতিগত আইনের আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারে কতিপয় বিষয়াদির কথা উল্লেখ করতে পারি যে, কোন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে, কারা মামলার পক্ষ হবে, কিভাবে মামলা গঠন করতে হবে, কিভাবে আরজি জবাব দিতে হবে, কি প্রক্রিয়ায় সমন জারি করতে হবে, এতে আদালত কি ধরনের আদেশ দিবে এবং ঐ আদেশ কিভাবে কার্যকরী করা হবে ইত্যাদি বিষয়াদি পদ্ধতিগত আইনে সন্নিবেশিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে উক্তিটি খুবই মূর্তমান হয়েছে যে, “The law of procedure leads to the smooth
working of the schemes of our statue.” [Ram Vs. Ram Narain (1953)] !
উপরন্ত পদ্ধতিগত আইন হল মানুষের সহায়ক এমনই একটি আইন, যদ্বারা ন্যায়বিচারেরঅভীষ্ট লক্ষ অর্জন করা সম্ভবপর হয়। কারণ এরূপ পদ্ধতিগত আইনের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারকগণ যেকোন বিরোধীয় মামলার ব্যাপারে অন্ত সঙ্গত কারণে সুপ্রীমকোর্টের মন্তব্যটি তুলে ধরতে পারি যে, “A code of procedure is designed of facilitate justice.” |
Sangram Singh Vs. Election Tribunal Katak; (AIR, 1955)]।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, মানুষের অধিকার নির্ধারণ ও কর্তব্য পালন সংক্রান্ত বিধিবিধান লংঘন করার দায়ের ক্ষেত্রে উহার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনসঙ্গত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে পদ্ধতিগত আইনের গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোন কায়দা নেই। এ প্রসঙ্গে উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য হয় যে, “The law procedures of Adjective law is
only a
channel to administer law” [Punjab
Cooperative Bank Vs Bikramlal (AIR, 1959)]
মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সামঞ্জস্যতা
(Relation between substantive &
Adjective law):
সাধারণভাবে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনকে ভিন্নমুখী বলে মনে করা হলেও আবার কতিপয় ক্ষেত্রে উভয়টির মধ্যে যথেষ্ট সামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। কাজেই যে সকল মৌলনীতি ওপর ভিত্তি করে উভয় আইনের মধ্যকার সামঞ্জস্য সূচিত হয়েছে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হল; যথা–
১) অস্তিত্বগত: এ আইনের বিধান অনুযায়ী কোনো চুক্তির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হলে তজ্জন্য তা অবশ্যই লিখিত হবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কেননা চুক্তি লিখিত না হলে উহা বাতিলযোগ্য হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। এতদ্ব্যাপারে মূল আইনের বিধানে সহিত পদ্ধতিগত আইনের যথার্থ মিল রয়েছে।
২) ইচ্ছাগত: কোনো অপরাধ সংঘটনের পশ্চাতে প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায় ইচ্ছা থাকার বিষয়টি প্রকট আকারে দাঁড়ায়। কিন্তু সাত বৎসর বয়সের অনুর্ধ্ব শিশুর ক্ষেত্রে কোনরূপ অপরাধ প্রবণতার ইচ্ছা থাকতে পারে না। বিষয়টি উভয় আইনের নীতিতে সমর্থন করা হয়।
৩) সময়সীমা: কোন মামলা দায়ের করতে হলে বিধিবদ্ধ আইনে উল্লিখিত সময় সীমার মধ্যে অবশ্যই দায়ের করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এব্যাপারে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের প্রসঙ্গকথা একইরূপে মেনে নেয়া হয়। কেননা বিধিবদ্ধ সময়সীমা উত্তীর্ণ হলে অধিকার ভঙ্গের দরুণ পরবর্তীতে আর কোনক্রমে প্রতিকারের প্রার্থনা মঞ্জুর করা হয় না। এর ফলে মূল আইনের
অধিকারটিও বিনষ্ট হয়ে যায়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, যেকোন মামলার জন্য যথাযথ আইন প্রয়োগের দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের পারস্পরিক সামঞ্জস্যতাকে অস্বীকার করার কোন কায়দা নেই। সহজ কথায়, উভয় প্রকার আইনকে কোনো মামলার এপীঠ এবং ওপীঠ হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে বিচারপতি হিউয়ার্ট মন্তব্য করেন যে, “শুধু বিচার করলেই হবে না, ন্যায়বিচার যে করা হয়েছে তা স্পষ্টত প্রতীয়মান হওয়া আবশ্যক” (বক্স বনাম সাসেক্স; 1934 (1) Q.A. 556) এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন জনসাধারণের উপকারার্থে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের পার্থক্য
(Difference between substantive law &
Adjective law)
অধ্যাপক স্যামন্ডের মতে, মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নির্ণয় করা খুবই কঠিন। কারণ উভয়টি আইনগত ব্যাপারে পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কাজেই মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যকার উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলোকে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করতে পারি যথা–
মূল আইন |
পদ্ধতিগত আইন |
১. মূল আইন বলতে ঐসকল আইনগুলোকে বুঝায় যার দ্বারা জনসাধারণের পারস্পরিক অধিকার ও দায়–দায়িত্ব বা জনসাধারণ ও সরকারের মধ্যকার পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্বের বিধি–বিধান উল্লেখ থাকে। |
পদ্ধতিগত আইন বলতে এমন এক শ্রেণীর আইনকে বা বিধিবিধান কে বোঝায় যার মাধ্যমে মূল আইন সমূহ বাস্তবে কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করা যায় |
২. মূল আইন কোন মামলার প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বরং তাকে ভুল উদ্দেশ্য করতে বিষয়বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট। |
পদ্ধতিগত আইন কোন মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত বিচার প্রশাসনের সাথে একান্তভাবে সম্পর্কযুক্ত এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক স্যামন্ড (Prof. Salmond) বলেন, “Substantive law relates not to be process litigation but |
৩. মূল লাইনের মাধ্যমে প্রতিকার লাভ করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। |
পদ্ধতিগত আইনের মাধ্যমে প্রতিকার বিধানের রীতিসুদ্ধ প্রণালীকে বাস্তবে কার্যকর করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে |
৪. মুল আইন প্রকৃতগতভাবে এক ধরনের অর্পিত অধিকার বিশেষ। |
আইন হলো কোন অধিকার কার্যকর করার প্রশ্নে প্রযোজ্য এক ধরনের প্রণালী প্রাসঙ্গিক মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে “The former is a vested right while the |
৫. মুল আইন সর্বতোভাবে মামলা ভক্তের পক্ষবৃন্দের বিরোধী ও বিষয়বস্তুকে আঁকড়িয়ে পারস্পরিক আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করে। |
পদ্ধতিগত আইন মামলা ভুক্ত–পক্ষ বৃন্দেরআচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। |
৬. মুল আইন ঘটানো সংশ্লিষ্ট যেকোনো মামলার ন্যায় বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে অধিকার নির্ধারণ করে থাকে। |
পদ্ধতিগত আইন হলো ন্যায়বিচার পরিচালনার প্রশ্নে অধিকার টে লঙ্ঘনের কারণে কি উপায়ে তা প্রতিকারের বিধান করা যায় সে সম্পর্কে অধিকার সৃষ্টি করে। |
৭. মুল আইন ন্যায়বিচার পরিচালন এ বিচার প্রশাসনের অবিষ্ট লক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। |
পদ্ধতিগত আইন এ সকল লক্ষ্য অর্জনের উপায় উদ্ভাবনকল্পে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক স্যামন্ড (Prof Salmond) বলেন, “Substantive law is concerned with the ends which the |
৮. মূল আইনের মাধ্যমে শুধু অধিকার সর্বস্ব আইন গুন্নে প্রায়গী দিক থেকে চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় না। |
পদ্ধতিকে তো আইনের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সময় কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পা…। যেমন ফিটিং সমান সাক্ষ্য রায় ও সম্পাদনা ইত্যাদি |
৯. মূল আইনের কার্যকারিতা আদালত বহির্ভূত ঘটনার সাথে জড়িত। |
পদ্ধতিগত আইনের কার্যকারিতা সরাসরি আদালতের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত। প্রসঙ্গক্রমে জনৈক আইনবিদ বলেন, “Substantive |
১০. মূল আইনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষমতা প্রয়োগকে প্রতিকারগত অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করা হয় |
পদ্ধতিগত আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে অধিকার লঙ্ঘনীত প্রতিকার সাধনে গৃহীতব্য উপায় সমূহকে আহতভুক্ত করা হয় |
১১. মূল আইন সর্বাপট কোন আইনের সারকথার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। |
পদ্ধতিগত আইন কোন আইনের গঠন রীতি সংক্রান্ত বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে। এ প্রসঙ্গে জনৈক আইনবিদ বলেন “The Procedural law deals with the form and not with |
১২. মূল আইনের ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ কোন মামলার পরিণতি সম্পর্কে তথ্য অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে থাকেন। |
পদ্ধতিগত আইনের ক্ষেত্রে কোন মামলার যথার্থ পরিণতি লাভের উদ্দেশ্যে সহায়ক প্রণালী ব্যবহার করা হয় |
১৩.মূল আইনের মধ্যে কোনরূপ step বা স্তর বা পদক্ষেপ থাকে না। |
পক্ষান্তরে, পদ্ধতিগত আইনকে কার্যকর করতে হলে ৫টি স্তর(সমন,প্লিডিং,সাক্ষ্য বা প্রমাণ,রায়, ও রায় কার্যকরীকরণ) মেনে চলতে হয়। |
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে বস্তুগত পার্থক্যের চেয়ে বরং রূপগত পার্থক্যই প্রাধান্য পেয়েছে। কেননা আপাতদৃষ্টিতে যদিও মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যকার পার্থক্যটি কেবল তত্ত্বগতভাব নির্দেশ করে, তথাপি বাস্তব ক্ষেত্রে এর কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে থাকে। তা সত্বেও দেখা যায়, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
“মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে পার্থক্য প্রকৃতিগত নয়, বরং গঠনগত”–“স্যামন্ড
আইনের জগতে বিরাজমান মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন সম্পর্কে বিধৃত আলোচ্য উক্তিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা মানুষের অধিকার নির্ধারণ ও দায়িত্ব আরোপ করার প্রয়োজনে আইনকে সঠিকভাবে কার্যকর করে তোলার পথে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে বলে অনেকের ধারণা। আমরা জানি, মূলনীতি বিষয়ক আইন হচ্ছে আসল; আর পদ্ধতিগত আইন হল উপলক্ষ মাত্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ পার্থক্য খুবই ক্ষীণ, “যাকে সত্যিকারার্থে পার্থক্য বলা সাজে না। তাই অধ্যাপক স্যামন্ড (Prof. Salmond) বলেন, “মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে পার্থক্য প্রকৃতিগত নয়, বরং গঠনগত”।
প্রসঙ্গটির বিশদ বর্ণনায় দেখা যায়, উপরোক্ত আইন দুটোর মধ্যে একশ্রেণীর আইন কিঞ্চিত গঠন রীতি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্যশ্রেণীতে পরিণত হতে পারে। দৃশ্যত আইনের ইতিহাসে এ ধরনের পরিবর্তন প্রায়শই ঘটে থাকে। উপমাস্বরূপ আলোচনা করতে পারি যে, পদ্ধতিগত আইনে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের নিয়ম হচ্ছে, একটি হস্তান্তর বা স্বাক্ষরের মাধ্যমেই একটি চুক্তি প্রমাণিত হতে পারে। গোড়ায় এটা অনেকটা মূল আইনের ন্যায় গৃহীত হতে পারে যেখানে এরূপ বিধান রয়েছে যে, একটি চুক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত অকার্যকর থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা লিখিত বা স্বাক্ষরিত না হবে। বস্তুত ইহা দ্বারা একদিকে স্বাক্ষর স্বত্বের একচেটিয়া প্রমাণ ইঙ্গিত করে, আর অন্যদিকে স্বাক্ষরটির মাধ্যমে নিজেই স্বত্বের অংশীদার বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যকার পার্থক্যটি খুবই সংকীর্ণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে তত্ত্বগত সঠিক কোন পার্থক্য নেই। বিশেষত কার্যবিধি আইন অনুসারে সাত বৎসরের অনূর্ধ্ব শিশুর ক্ষেত্রে অপরাধপূর্ণ কোন মানসিকতা থাকতে পারে না। যদরুণ মূল আইন এ ধরনের বয়সের শিশুদেরকে শাস্তি প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এছাড়া কার্যবিধি আইন মোতাবেক ভৃত্যের কর্মতৎপরতা হবার বিষয়টি মালিকের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিক, তবে আবার এমনো কিছু মূলনীতি রয়েছে। যেগুলো ভৃত্যের (কর্মচারীর) কাজের জন্য কর্মকর্তাদেরকে (মালিককে) দায়বদ্ধ করা হয়। এভাবে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যকার পার্থক্যটাকে আঙ্গিকগত (গঠনগত) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে – যাকে প্রকৃত কোন পার্থক্য বলা যায় না।
মূল, পদ্ধতিগত, ও প্রতিকারমূলক আইনের ব্যবধান
(Difference between substantive, Adjective &
Remedies law)
আইনের জগতে প্রতীয়মান মূল আইন, পদ্ধতিগত আইন ও প্রতিকারমূলক আইন এগুলো সমার্থক নহে। মূলত এগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, মূলনীতি বিষয়ক আইন অধিকার চিহ্নিত করে, পদ্ধতিগত আইন অধিকার সংক্রান্ত জটিলতা নিষ্পত্তিক্রমে অধিকার বলবৎ করে; আর প্রতিকারমূলক আইনটি শুধু পরিদৃষ্ট হয় যাকে কোন অধিকার মনে করা হয় না। সার্বিক বিবেচনায় আইনের স্বীকৃত বিধি অনুসারে অধিকার সংরক্ষণ কিংবা ইহা লংঘনের দায়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর সমর্থনপুষ্ট তথ্য অবলোকনে দেখা যায়, আইনের স্বীকৃত বিধি অনুসারে অধিকার সংরক্ষণ কিম্বা তা লংঘনের দায়স্বরূপ প্রতিকার বিধান করাই হল আইনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যায় স্যামন্ড দেওয়ানী ও ফৌজদারী কার্যবিধির (পদ্ধতিগত আইনের) উল্লেখপূর্বক বলেন যে, এতে অন্যায়কারী অপরাধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করা হয়নি। অথচ অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করার বা উহা খন্ডনের অধিকার এবং আদালতের রায়ের বিপক্ষে আপীল দায়ের করার অধিকারের বিধান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতদ্ আঙ্গিকে একে একেবারে নির্ভেজাল। পদ্ধতিগত আইন হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। অন্যদিকে প্রতিকার বিধানের প্রক্রিয়াকে পদ্ধতিগত আইনরূপে বিবেচনা করা হলেও প্রতিকার লাভ করার বিষয়টিকে অধিকার বলে গণ্য করা হয়। অবশ্য একে অনেকটা মূল আইনের অংশ বিশেষ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। উপরন্ত ফৌজদারী ও দন্ডবিধি আইনে শুধু অপরাধের বিষয়টি ব্যক্ত করা না হলেও উহাতে প্রদত্ত শাস্তির পরিমাপ ও পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; অথচ তা পদ্ধতিগত আইন হিসেবে গৃহীতব্য। কাজেই প্রতিকারমূলক আইনকে শুধু অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন নামে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা যায় না।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, কতিপয় ক্ষেত্রে এমনো কিছু অধিকার রয়েছে। যেগুলো পদ্ধতিগত আইনের অন্তর্গত বটে। যেমন– আপীল দায়েরের অধিকার, কারো পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার অধিকার এবং প্রতিপক্ষকে জেরা করার অধিকার ইত্যাদি বিষয়াদি পদ্ধতিগত আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আবার প্রতিকার চিহ্নিত করার বিধানটি মূলনীতি বিষয়ক আইনও হতে পারে। এভাবে দেখা যায়, মূলনীতি বিষয়ক আইনের অধিকারটি প্রতিকার চিহ্নিত করণের সাথে সংশ্লিষ্ট; আর পদ্ধতিগত আইনের অধিকারটি বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রতিকার করণের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রসঙ্গক্রমে বিচারপতি কর্ণেলিয়াস মন্তব্য করেন যে, “একজন প্রশাসনিক কর্মচারীর গৃহীত প্রশাসন পদ্ধতি সম্পর্কে এরূপ ধারণা সুস্পষ্ট হওয়া আবশ্যক যে, তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন” [জাফরুল্লাহ খান বনাম জিম্মাদার (১৯৬৪)]।
কার্যবিধিসমূহে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের ভূমিকা বা অবদান বা প্রভাব বা গুরুত্ব:
দেওয়ানী–ফৌজদারী কার্যবিধিতে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের অস্তিত্ব (কার্যকারিতা):
দেওয়ানী কার্যবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার আলোকে মামলা সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের কার্যকারিতার অস্তিত্ব নানাভাবে বিদ্যমান। এর তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, দেওয়ানী আইনে আইনের মূলনীতিগুলো বিধৃত থাকে। যেমন– চুক্তি, আইন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ইত্যাদি মূলনীতিসমূহ দেওয়ানী আইন হিসেবে চিহ্নিত। বস্তুত এ আইনে যেসব নীতির কথা বলা হয়েছে ঐসব নীতিগুলো ভঙ্গ বা উপেক্ষিত হলে এতে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ উহার ন্যায়গত প্রতিকার লাভের উদ্দেশ্যে আদালতে আশ্রয় গ্রহণ করতে সমর্থ হয়। আর পদ্ধতিগত আইনে আদালতের আশ্রয় নেয়ার নীতিগত পদ্ধতিগুলো বর্ণিত হয়েছে। মূলনীতি সংশ্লিষ্ট ফৌজদারী কার্যবিধিতে দন্ডবিধি আইনের কথা বর্ণিত হয়েছে। এতে অপরাধের পরিচয়সহ শাস্তির বিধান উল্লেখপূর্বক দন্ডবিধিতে ২০টি পরিচ্ছদ রয়েছে, উহার ১৯টিতে রয়েছে তরাধের সংজ্ঞা ও দন্ড প্রদানের বিধান। এভাবে ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, শান্তিভঙ্গ, মুদ্রা ও দলিল জাল, বাটখারা সংক্রান্ত অপরাধ, জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে অপরাধ, ধর্ম সংক্রান্ত অপরাধ, মানবদেহ সংক্রান্ত অপরাধ, মনুষ্যহরণ, ডাকাতি, চুরি, মানহানি এগুলোর সংজ্ঞা যেমন দন্ডবিধিতে পাওয়া যায়, তেমনি আবার পাওয়া যায় শাস্তির বিধান। বস্তুত আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে সঠিকভাবে অবগত হবার প্রশ্নে শুধু এসব তথ্যকথা জেনে তেমনকোন ফায়দা নেই; যদি তা কার্যক্ষেত্রে বাস্তবে প্রয়োগ করা না হয়।
জ্ঞাতব্য যে, অপরাধ প্রতিকারার্থে ফৌজদারী কার্যবিধির আশ্রয় নিতে হয় –এ ফৌজদারী কার্যবিধিটি গোড়ায় পদ্ধতিগত আইন হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া দন্ডবিধিতে যেসব অপরাধের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, ঐসব অপরাধের বিচার সম্পাদন করা হয় আদালতে। যদরুণ ফৌজদারী কার্যবিধিতে আদালতের গঠন প্রক্রিয়া, আদালতের শ্রেণীবিভাগ এবং এর মতামত সম্পর্কিত বিধিবিধান উল্লেখ রয়েছে। উপরন্ত মানুষের অধিকার নির্ধারণ ও দায়দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির প্রয়াসে অপরাধীর বিরুদ্ধে সমন জারীকরণ, গ্রেফতারী পরোয়ানা, আদালতে হাজির হওয়া, সাক্ষ্য–প্রমাণ উপস্থাপন ও রায় লিখন ইত্যাদি পদ্ধতিগুলো ফৌজদারী কার্যবিধির অন্তর্ভুক্ত আদালতে এগুলো সবই পদ্ধতিগত আইন হিসেবে জানা। ১৮৫৯” (If we could first know where we are, and whether we are
tending could better judge what to do and how to do it) এভাবে কার্যবিধিসমূহে মূল আইন ওপদ্ধতিগত আইনের অস্তিত্ব অনেক বিস্তার লাভ করে রয়েছে।