প্রশ্নঃ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (Intellectual Property Law) বলতে কি বুঝায়? বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের বিবরণ দাও। একটা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে (Intellectual Property Law) এর ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ Intellectual Property Law এর ধারণা বর্তমান বিশ্বের একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও যুগান্তকারী ধারণা। এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের মানুষের কাছে শুধুমাত্র স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ধারণাই ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিক্রমায় Intellectual Property একটি স্বতন্ত্র প্রকৃতির সম্পত্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যদিও এটা এক প্রকার Property তবুও সম্পত্তির অন্যান্য ধারণা থেকে এই সম্পদের ধারণাটি ভিন্ন। বর্তমানে Intellectual Property ক্রমাগত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গুরুত্ব লাভ করেছে।
মেধা ভিত্তিক সম্পত্তির সংজ্ঞাঃ Intellectual Property একটি নতুন ধারণা। এটা এমনই এক প্রকার সম্পত্তি যার উৎপত্তিস্থল হলো মানুষের মন, বুদ্ধিবৃত্তি তথা বিচারশক্তি। সুতরাং, মানুষের মন ও মেধা থেকে যে সম্পত্তির সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই Intellectual Property বলে।
বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদঃ Intellectual Property এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, এর বিষয়বস্তু হচ্ছে মানব মন। মানব সৃষ্ট বলে এই ধরণের সম্পদকে বলা হয় মেধাভিত্তিক সম্পদ। যে আইন দ্বারা এই সম্পত্তি সংরক্ষণ করা হয়, তা হচ্ছে মেধাভিত্তিক সম্পত্তি আইন। যেমন- পেটেন্ট, ডিজাইন, ট্রেডমার্কস, কপিরাইট ইত্যাদি। এই সকল সম্পত্তি মানুষের মেধা ও মন থেকে বেরিয়ে আসে, তথা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উৎপাদন করে বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে Intellectual Property।
একটি দেশের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে Intellectual Property এর ভূমিকাঃ কোন একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (Intellectual Property) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। আবিস্কৃত কোন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ প্রকাশের একচ্ছত্র অধিকারের সনদ যখন তার মালিককে প্রদান করা হয় বা মঞ্জুর করা হয়, তখন অন্যান্য প্রতিযোগীরা নকল না করে, নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ উৎপাদনের চেষ্টা চালায়। অথবা তারা তাদের উৎপাদনের উন্নতি ঘটায় কিংবা প্রক্রিয়াজাত করতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সংরক্ষণ বা নকলের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহন না করলে অনেক প্রযুক্তিগত তথ্য গোপন থেকে যেত, যা পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর হতো।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির (Intellectual Property) প্রকারঃ সাধারণত ধরা বা ছোঁয়া যায় না এমন প্রকৃতির সম্পদ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ হয়ে থাকে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি বস্তুগত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত একগুচ্ছ অধিকারের সমষ্ঠি, যা আবিস্কার কর্তা কর্তৃক আবিষ্কৃত বা সৃষ্ট হয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রাচুর্যতার কারণে, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি এবং যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি ঘটায় ব্যবসায় বানিজ্যে বিশ্বায়নের এক বিরাট প্রভাব পড়েছে। একইভাবে তা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের উপরেও প্রভাব ফেলেছে এবং বর্তমানে এটি আন্তজার্তিক রূপ ধারণ করছে। নিচে Intellectual Property এর শ্রেণী বিভাগ ও তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত আইনের শিরোনাম উল্লেখ করা হলো-
Intellectual Property | |
Patent | The Patents And Designs Act, 1911 |
Design | The Patents And Designs Act, 1911 |
Trade Marks | The Trade Marks Act, 2009 |
Copyright | The Copyright Act, 2000 |
বাংলাদেশ উপরোক্ত আইনগুলির মাধ্যমে মেধাস্বত্ব সম্পদের প্রটেকশন দিয়ে থাকে। এছাড়া সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আরও বিভিন্ন প্রকারের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা সংরক্ষণে আইন প্রণয়নের আলাপ-আলোচনা চলছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইন পাঠের প্রয়োজনীয়তাঃ বর্তমান বিশ্বে Intellectual Property আইন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশী। কারণ বর্তমান যুগকে পুরোপুরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ বলা যেতে পারে। তাছাড়া ব্যাপক শিল্পায়ন, উন্মক্ত বাণিজিকীকরণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভুতপূর্ব উন্নয়নের ফলে গোটা বিশ্ব বলতে গেলে এখন হাতেমুঠোয়। আর এই কারণেই মানুষের মেধাসৃষ্ট ও বুত্তিবৃত্তিক সম্পত্তিগুলির বাণিজ্যিক উৎপাদন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেয়া সহজ হতে সহজতর হয়েছে।
তবে এ সুফল যতটুকু অন্য মানুষ ভোগ করছে, তার চেয়ে অনেক বেশী সুফল ভোগ করার অধিকার রয়েছে সম্পত্তিটির মালিকের। কেননা তিনি অনেক পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে কোন কর্ম সৃষ্টি করেছেন। অথচ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তার অধিকার লংঘন করে; তার অনুমতি ছাড়াই অনেকে অবৈধ উপায়ে কর্মটির পুনঃউৎপাদন করে বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে অধিকতর হারে।
ফটোকপি মেশিন, ক্যাসেট রেকর্ডার, ভিডিও রেকর্ডার ইত্যাদির বদৌলতে কোন বই, লেখনি, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র ইত্যাদি কপি করে পুনঃরুৎপাদন অত্যান্ত সহজলভ্য এবং প্রায় ব্যয়হীন হয়ে উঠেছে। ফলে অবৈধ ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই এই ক্ষেত্রে উৎসাহিত হয় এবং পাইরেসিতে লিপ্ত হয়। কপিরাইট ছাড়াও বর্তমানে অবৈধ ট্রেডমার্ক ও ট্রেডনামের ব্যবহার একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। একজনের পেটেন্ট করা আবিস্কার অন্যের দ্বারা ব্যাপকভাবে উৎপাদন, ডিজাইন নকল ইত্যাদি যেন মানুষের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
বস্তুত এই কারণেই ইনটালেকচুয়াল প্রপার্টি ল’ এর অধ্যায়ন ও প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইনের উদ্দেশ্যঃ Intellectual Property আইনের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপঃ
১) পণ্যের নকল উৎপাদন প্রতিরোধ করা।
২) বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্বাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা।
৩) মানুষের মেধা ও শ্রমকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া।
৪) তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নে গতিশীলতা আনয়ণ করা।
Leave a comment