প্রশ্নঃ সুখবাদ বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ সমাজে বসবাসকারী মানুষের ভালাে-মন্দত্ব, ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব ইত্যাদি নিয়ে নীতিবিদ্যায় আলােচনা করা হয়। নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যায় নৈতিকতার মানদণ্ডের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলােচনা করা হয়। মানব আচরণের ভালাে-মন্দ ইত্যাদি বিষয়ের মানদণ্ড কিভাবে নিরূপণ করা হবে তা নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার পাঠের ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনেরূ মতবাদ পেয়ে থাকি। সুখবাদ তাদের মধ্যে অন্যতম।
সুখবাদঃ সুখবাদ শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘Hedone’ থেকে। Hedone শব্দের অর্থ হলাে সুখ (Happiness)। কাজেই সুখবাদ হলাে এমন একটি মতবাদ যা সব সময় পরম কল্যাণ খোঁজায় ব্যস্ত থাকে। সুখবাদের মূল ভিত্তি হলাে সুখই পরম কল্যাণ। মানুষের একমাত্র কাম্যবস্তু ও সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলাে সুখ অন্বেষণ করা। জগতে সুখেরই শুধুমাত্র অন্তর্নিহিত মূল্য আছে। নৈতিকতার একমাত্র মানদণ্ড হলাে সুখ এবং সুখই পরম ভালাে। কোনাে কাজ ভালাে না মন্দ তা আমরা নিরূপণ করতে সুখকে গ্রহণ করি এবং এর দ্বারা সাথে সাথে আমরা নৈতিক অবধারণ গঠন করি। মানুষ সব সময় সুখ অন্বেষণ করে। সুখই মানুষের স্বাভাবিক কামনার বস্তু। যে সমস্ত কাজ মানুষের সুখ দেয়, সে সমস্ত কাজই ভালাে এবং যে সমস্ত কাজ মানুষের দুঃখ দেয়, সে সমস্ত কাজগুলাে মন্দ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মানুষ সর্বদাই সুখ কামনা করে এবং দুঃখকে পরিহার করে। প্রত্যেক মানুষকে সুখ অন্বেষণ করা উচিত। সুখবাদ ব্যাখ্যা করলে বিভিন্ন ধরনের শাখা উপশাখার উদ্ভব হয়। যেমন সিজউইক (১৮৩৮-১৯০০) সুখবাদকে দু’টি ভাগে ভাগ করার কথা বলেছেন। যেমন- (১) মনস্তাত্ত্বিক সুখ এবং (২) নৈতিক সুখবাদ। আবার এই নৈতিক সুখবাদকে দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- (১) আত্মবাদী নৈতিক সুখবাদ এবং (২) পরার্থবাদী বা সৰ্ববাদী সুখবাদ বা উপযােগবাদ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের আদর্শের মাপকাঠি হলাে সুখবাদ কোন পন্থার সাহায্যে সর্বোচ্চ সুখ লাভ করা যায় সুখবাদ যেটা আমাদের শিক্ষা দেয়। ব্যক্তির পরম সুখ লাভ করা তার জীবনে অপরিহার্য বিষয়। সুতরাং বলা হয়ে থাকে যে, নীতিবিদ্যায় সুখবাদের গুরুত্বকে অস্বীকার করার জো নেই।