ভূমিকাঃ মধ্যযুগে চিন্তার ইতিহাসে যেসব মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছিল, তাদের মধ্যে সেন্ট অগাস্টিন অন্যতম। তিনি যে সমস্ত বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন তার মধ্যে তার দাস সম্পর্কিত ধারণা অন্যতম। এরিস্টটল প্রথম দার্শনিক যিনি দাসতত্ত্বকে রাষ্ট্রচিন্তায় আলোচনা করেছেন; কিন্তু পরবর্তীতে অগাস্টিন দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন ভিন্ন কারণে। তার মতে, পাপী দাসত্ব করবে মুক্ত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য।
সেন্ট অগাস্টিনের দাস সম্পর্কিত ধারণাঃ নিম্নে দাসপ্রথা সম্বন্ধে অগাস্টিন ধারণা ব্যক্ত করা হলো-
(১) স্ববিরোধীতায় ভরাঃ সেন্ট অগাস্টিন দাসপ্রথা সম্পর্কে যে মতবাদ প্রদান করেছেন তা অন্যান্য খ্রিষ্টীয় যাজকের মতোই স্ববিরোধীতায় পূর্ণ।
(২) যুক্তিযুক্ত ও ন্যাসঙ্গতঃ অগাস্টিনের মতে, দাসপ্রথা যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত। তিনি তার মতবাদের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন এই বলে যে, রাষ্ট্রের ন্যায় দাসপ্রথাও মানুষের পতনের অবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতি। এটি মানুষের অপরাধ থেকে উৎসারিত।
(৩) দাসত্ব পাপের ফলঃ অগাষ্টিনের মতে, সৃষ্টিকর্তা যখন মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টির কর্তৃত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেন, তখন মানুষের একটা অংশ পাপ করায় তারা তাদের সৃষ্টির মর্যাদাকে হারিয়ে ফেলে। ফলে দাসত্ব বরণে বাধ্য হয়। তিনি আরও বলেন, দাসের ভাগ্য পাপের মাসুল বৈ অন্য কিছু নয়।
(৪) এরিস্টটলের মত থেকে ভিন্নঃ এরিস্টটলের মতে, যেহেতু স্রষ্টা কতকগুলো লোককে যুক্তিবর্জিত মানুষ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। অতএব তাদের শাসিত হওয়া ছাড়া শাসন করার যোগ্যতা নেই। অগাষ্টিনের মতে, দাসত্ব পাপের ফল।
সকল মানুষ সমানঃ এরিস্টটলের মতে, প্রকৃতিগতভাবে প্রভুরা উৎকৃষ্ট আর দাসরা নিকৃষ্ট। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান, সকলের ওপর ঈশ্বরের অনুগ্রহ সমানভাবে বর্ষিত হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, অগাস্টিনের দাসপ্রথার সুস্পষ্ট বিরোধিতা সত্ত্বেও এ কথা বেশ জোর দিয়ে বলা যায় যে, প্রাচীন জগতে যে নীতির ভিত্তিতে দাসপ্রথার যথার্থতা প্রমাণ করা হয়েছিল, তিনি তার মূলে কুঠারাঘাত করেন।