অথবা, আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদা কাকে বলে?
অথবা, ‘সামাজিক মর্যাদা’ বলতে মূলত কী বুঝ?
অথবা, সামাজিক পদমর্যাদা কী?
ভূমিকাঃ মানবজীবনের সাথে জড়িত যেসকল মৌল প্রত্যয় রয়েছে তার মধ্যে পদমর্যাদা অন্যতম। কোনাে সমাজের সদস্যের আয়, মর্যাদা, শিক্ষা, প্রতিপত্তি বা ক্ষমতার ভিত্তিতে কতকগুলাে ক্রমােচ্চপদ বা স্তরে ভাগ করা সম্ভব। এসবের ভিত্তিতে কোনাে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান বা পদের স্তরকে আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদা বা Status বলা হয়। মূলত পদমর্যাদা বা Status বলতে সাধারণত আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদাকেই বুঝায়।
পদমর্যাদার প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পদমর্যাদা প্রত্যয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি মতামত তুলে ধরা হলাে-
সমাজবিজ্ঞানী Prof. Kingsly Davis পদমর্যাদার সংজ্ঞা নির্ণয়ে বলেন, সামাজিক মর্যাদা হলাে এক বিশেষ সামাজিক অবস্থান। এ সামাজিক অবস্থানের পেছনে বর্তমান থাকে সমগ্র সমাজের স্বীকৃতি ও সমর্থন। পরিকল্পিতভাবে বা ইচ্ছামতাে সামাজিক মর্যাদা সৃষ্টি করা যায় না। লােকাচার ও লােকনীতির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামাজিক মর্যাদার সৃষ্টি হয়।
সমাজবিজ্ঞানী Ralph Linton এই প্রসঙ্গে বলেন, “ Status is the place in a particular system, which a certain individual occupies at a particular time”
Q R.M MacIver বলেন- “সামাজিক অবস্থান হলাে মর্যাদার ভিত্তি। এ সামাজিক অবস্থান ব্যক্তিগত গুণাগুণ বা সামাজিক ভূমিকা ছাড়াই ব্যক্তি মানুষের পক্ষে প্রভাব প্রতিপত্তি, শ্রদ্ধা ভক্তি, মান-সম্মান প্রভৃতির সৃষ্টি করে থাকে।”
Duncan Mitchell পদমর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ একটি সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, “Social status refers to the position occupied by a person, family, or kinship group in a social system relative to others. This determines rights, duties, and other behaviors including the nature and extent of the relationships with the persons of the other statutes.”
মানুষ সামাজিক জীব। প্রত্যেকেরই সামাজিক জীব হিসেবে একটি পরিচিতি রয়েছে। এই সামাজিক পরিচিতির ধরনের যে মাত্রা তাকেই পদমর্যাদা বলা হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পদমর্যাদা প্রত্যেক মানুষের জন্য সামাজিক স্বীকৃতিস্বরূপ। এই পদমর্যাদার বলেই মানুষ তার স্বীয় সমাজ থেকে সম্মান পেয়ে থাকে। মানুষ দুটি দিক দিয়ে পদমর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। তবে সমাজ সাধারণত অর্জিত মর্যাদা অর্থাৎ মানবিক গুণাবলি দ্বারা অর্জিত মর্যাদাকেই বেশি মূল্যায়ণ করে থাকে। প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থা ও আধুনিক মননশীলতার জন্য অর্জিত মর্যাদা প্রত্যেক মানুষের পদমর্যাদার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।