প্রশ্নঃ ‘লিসপেন্ডেন্স’ নীতি কী? বিনা নোটিশে ক্রয় এবং আদালত কৃর্তক নিলাম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘লিসপেন্ডেন্স’ নীতি কি প্রযোজ্য? মুসলিম আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই নীতি কি প্রযোজ্য?
উত্তরঃ
লিপেন্ডেন্স নীতিঃ ইংলিশ আইনে একটি প্রবাদবাক্য রয়েছে। Pendente lita nihil innruatur অর্থাৎ মামলা রুজু অবস্থায় নতুন কোন অবস্থার সৃষ্টি করা উচিৎ হবে না । এই নীতিবাক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ কমন ল’ এর লিপেডেন্স নীতিটি এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারাটি এরই অভিব্যক্তি মাত্র ৷
এই ধারা মতে, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে অবস্থিত যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন কোন আদালতে কোন স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে বিবেচনাধীন সময়ে মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এবং মামলাটিতে সম্পত্তির উপর কোন স্বত্ব সম্পর্কে নির্দিষ্ট ও প্রত্যক্ষভাবে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে আদালতের অনুমতি ছাড়া কোন পক্ষই উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বা অন্য কোন ভাবে ব্যবহার করতে পারবে না, যার ফলে আদালতের সম্ভাব্য কোন ডিক্রী বা আদেশের দ্বারা লব্ধ কোন পক্ষের কোন অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে। তবে আদালত অনুমতি দিলে বা আদালত কোন শর্ত আরোপ করলে সেই শর্তানুসারে উক্ত হস্তান্তর করা যাবে। এই ধারাটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যে তারিখে কোন উপযুক্ত আদালতে কোন আরজি পেশ করা হয় বা কার্যক্রম শুরু করা হয় সে তারিখ হতে উক্ত মামলা বা কার্যক্রমের রুজু অবস্থা শুরু হবে এবং আদালতের চূড়ান্ত ডিক্রী বা আদেশ জারী পূর্বক প্রাপ্য আদায় না হওয়া পর্যন্ত বা তা হতে অব্যাহতি না দেয়া পর্যন্ত বা বর্তমান কোন আইনে তামাদি না হওয়া পর্যন্ত তা আদালতের বিবেচনাধীন বলে গণ্য হবে।
এই ধারাটির মূল কথা হচ্ছে এই যে, যখন প্ৰত্যক্ষভাবে ও নির্দিষ্টভাবে কোন অধিকার নিয়ে পক্ষগণের মধ্যে কোন মামলা চলে তখন কোন পক্ষই সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে না।
উদাহরণঃ ক, খ এর নিকট একটি সম্পত্তি বিক্রি করে। উক্ত সম্পত্তি অগ্রক্রয়ের (Preemption) জন্য গ, খ এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলা রুজু অবস্থায় খ ঐ সম্পত্তি ঘ. এর নিকট বিক্রি করে। এক্ষেত্রে গ, ঘ এর বিরুদ্ধে অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এ ধরণের মামলায় নির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির অধিকার জড়িত থাকে। তাই এক্ষেত্রে লিপেনডেন্সের নীতি প্রয়োগ করে হস্তান্তর বন্ধ করা যায়।
বিনা নোটিশে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘লিসপেন্ডেন্স’ নীতিঃ
বেলামী বনাম সেবাইন মামলায় লর্ড ক্রেনওয়ার্থ বলেন, “ইহা বলা শুদ্ধ হবে না যে মামলা চলাকালীন সময় মামলার বিষয়বস্তুর ক্রেতা নোটিশের নীতি দ্বারা বাধ্য হয়। মামলার কোন পক্ষ এই নীতির দ্বারা বাধ্য হচ্ছে এই কারণে নয় যে মামলা রুজু অবস্থা কোন পক্ষের জন্য অবগতির সামিল। সে বাধ্য হয় এই কারণে যে, আইন মামলা চলাকালীন সময় মামলার অন্য পক্ষের ক্ষতি করে বিরোধীয় সম্পত্তির অধিকার অন্য কাউকে নিতে অনুমতি দেয় না।”
স্ট্রং এর মতে- “প্রত্যেক মানুষ যে যেখানে বাস করে সেই রাষ্ট্রের বা সার্বভৌমত্বের বিচার আদালত কি রায় দেয় তার প্রতি মনোযোগী হবে বলে ধরে নেয়া হয়। কাজেই মামলা চলাকালীন মামলার সম্পত্তি মামলার বিষয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবগতি ছাড়া মূল্যে বিনিময়ে ক্রেতা এই নীতির দ্বারা একইভাবে বাধ্য হবে যেনো সে উক্ত মামলার কথা জেনেই ক্রয় করেছে এবং সে অনুসারে সে মামলার রায় বা ডিক্রীর দ্বারা বাধ্য হবে।”
অতএব বলা যায় যে, বিনা নোটিশে ক্রয়ের ক্ষেত্রেও লিসপেনডেন্স নীতি প্রযোজ্য হবে।
আদালত কর্তৃক নিলাম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘লিসপেন্ডেন্স’ নীতিঃ
লিনপেনডেন্স নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল ব্যতিক্রম রয়েছে তন্মধ্যে আদালতের আদেশে হস্তান্তরের ক্ষেত্ৰ অন্যতম। মামলা চলাকালীন সময়ে আদালতের আদেশ নিয়ে হস্তান্তর করলে উক্ত হস্তান্তর এই নীতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু শর্ত থাকে যে উক্ত আদেশ আদালতের উপর শঠতা করে লাভ করা হয়নি তা নিশ্চিত হতে হবে। শঠতা করেছে প্রমাণিত হলে লিসপেন্ডেন্সের এই নীতি প্রযোজ্য হবে।
মুসলিম আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ‘লিসপেন্ডেন্স’ নীতিঃ
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যা বর্ণিত রয়েছে তার কোন কিছুই মুসলিম আইনের নিধানকে প্রভাবিত করবে না। ৫২ ধারায় এই লিসপেনডেন্স নীতিটি দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে। কাজেই মুসলিম আইনের সাথে বিরোধ দেখা দিলে মুসলিম আইনই প্রাধান্য পাবে। তাই একজন দাতা মুসলিম আইনের অধীনে একটি সম্পত্তির দখল গ্রহীতার নিকট অর্পণ করে থাকলে এবং পরে সেই দান প্রত্যাহার করে সম্পত্তিটি ফিরিয়ে নিতে চাইলে লাহোর হাই কোট তা অগ্রাহ্য করেন [১৯৬৫ পি. এল. ডি. লাহোর -২০০] কেননা এক্ষেত্রে লিসপেনডেন্স নীতি প্রয়োগ করে দানগ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তি বিক্রি করা বন্ধ করা যায় না।