প্রশ্নঃ কাঠামাে কার্যগত তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, কাঠামাে কার্যগত তত্ত্ব কী?
ভূমিকাঃ সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণে- সুষ্ঠু বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি হিসেবে সমাজবিজ্ঞান, মনােবিজ্ঞান, নৃ-বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় থেকে তুলনামূলক রাজনীতিতে যে তত্ত্ব প্রবাহ ঘটেছে তাদের মধ্যে কাঠামােগত পদ্ধতি অন্যতম, যা বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
কাঠামাে কার্যগত তত্ত্বঃ কাঠামাে কার্যগত তত্ত্ব হচ্ছে সমাজব্যবস্থার গতি-প্রকৃতি পর্যালােচনার প্রয়ােজনীয় বিশ্লেষণাত্মক মডেল। Almond ও Powell-এর মতে পরস্পরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট ভূমিকা বলতে কাঠামাে বা Structure এবং Function বা কাজ হচ্ছে প্রত্যক্ষ ফলাফল, যার সাহায্যে কোন নির্দিষ্ট ব্যবস্থার সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব হয়।
কার্যভিত্তিক তত্ত্বের কাজ হলাে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃত কার্যাবলির বিন্যাস ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে উহার প্রকৃত পরিচয় প্রদান করা। কাঠামাে বলতে বুঝায় বুদ্ধিবৃত্তির কর্ম ও আচরণের নিয়মিত ও সমঝােতার এমন এক প্যাটার্ন, যা সকলের নিকট সুস্পষ্ট। অন্যদিকে বহুদিন ধরে কাঠামাে কার্যকর থাকলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় কার্য। যেমনঃ আদালত হচ্ছে কাঠামাে এবং বিচারকার্য সম্পাদন হচ্ছে কার্য।
সুতরাং কোনাে সমাজ ব্যবস্থার কার্যকলাপের পর্যালােচনা করা ও সমাজ ব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে তা বাস্তবে প্রয়ােগ করার উপযােগিতাই হলাে কাঠামাে কার্যগত পদ্ধতি।
অ্যালমণ্ড এবং পাওয়েল-এর ব্যাখ্যাঃ অ্যালমণ্ড এবং পাওয়েল-কে অনুসরণ করে ‘কাঠামো’ ও ‘কার্য’ বলতে কি বোঝায় তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। অ্যালমণ্ড ও পাওয়েল তাদের Comparative Politics: A Development Approach শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাদের মতানুসারে রাজনীতিক ব্যবস্থা বিশ্লেষণের মুখ্য বিষয় হল কাঠামো। ‘কাঠামো’ হল সেই সমস্ত পর্যবেক্ষণীয় কার্যকলাপ যাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘রাজনীতিক ব্যবস্থা’। অ্যালমণ্ড ও পাওয়েল বলেছেন: By structure we means the observable activities which make up the political system.”
তারা আরও বলেছেন, কাঠামো হল পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নির্দিষ্ট ভূমিকাসমূহের সমন্বয়। রাজনীতিক ব্যবস্থা যে সমস্ত পর্যবেক্ষণীয় কার্যকলাপকে নিয়ে গঠিত হয় তাদের মধ্যে একটা নিয়মানুবর্তিতা (regularity) থাকতে হবে। কেবল রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গেই রাজনীতিক কার্যকলাপ সম্পর্কযুক্ত থাকে। মার্টন-এর মতে ‘কাঠামো’ বলতে কোন ব্যবস্থার অন্তর্গত সেই সমস্ত ব্যবস্থাদি (arrangements)-কে বোঝায় যেগুলি কার্যাবলী সম্পাদন করে।
অন্যভাবে বলা যায়, কাঠামো হল কোন ব্যবস্থার পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত কতকগুলি সামাজিক সংগঠন বা কেন্দ্র যার মাধ্যমে কার্য সম্পাদিত হয়। আর রাজনীতিক পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির বা সংগঠনের ক্রিয়াকলাপকে কার্য (function) বা ভূমিকা (role) বলা হয়। ভূমিকা বলতে রাজনীতিক ভূমিকার কথা বলা হয়। রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে ব্যক্তির কাজকর্ম বা আচরণের যে অংশ যুক্ত থাকে তাকে বলে রাজনীতিক ভূমিকা। ভূমিকা হল রাজনীতিক ব্যবস্থার একটি মূল একক। দৃষ্টান্ত হিসাবে আইনসভার কথা বলা হয়ে থাকে। আইনসভাকে ‘কাঠামো’ এবং আইনসভার সদস্যপদকে বা আইন প্রণয়নকে ‘ভূমিকা’ বা কার্য হিসাবে গণ্য করা যায়। অনুরূপভাবে অ্যালমণ্ড আদালতকে বলেছেন কাঠামো এবং বিচারকের পদ বা বিচারকার্যকে বলেছেন ভূমিকা।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, কার্যগত তত্ত্বের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাদানের ক্ষমতা বিভিন্ন দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ। এ তত্ত্ব সাম্প্রতিককালের অগ্রগতি সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য কোনাে নীতি নির্দেশ করতে সক্ষম নয়। সর্বোপরি এ পদ্ধতি প্রয়ােগ করে তৃতীয় বিশ্বের তাত্ত্বিক কাঠামাের উন্নতি সম্ভবপর নয়। উন্নত বিশ্বের জন্য এ তত্ত্বটি অধিক প্রজোয্য। সে হিসাবে বাংলাদেশের জন্যও এই পদ্ধতি কম কার্যকরী।