অথবা, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিবরণ দাও।
ভূমিকাঃ মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় এই সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানব জাতির ক্রমবিবর্তন, উন্নতি ও উৎকর্ষতার এতাে বড় অবদান মিশরীয় সভ্যতার মত আর কোনাে সভ্যতা রাখতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার পথিকৃৎ হিসেবে মিশরীয় সভ্যতা এক অনন্য গুরুত্বের দাবিদার।
মিশরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নে মিশরীয় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলাে-
রাজনৈতিক অবস্থাঃ খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হয়। প্রাক রাজবংশীয় যুগে মিশরে কতগুলাে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন-নগর রাষ্ট্র ছিল। তবে এ রাষ্ট্রগুলি সংঘবদ্ধ ছিল না। এ সময়ে মেনেস নামের এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি জাতি ও রাষ্ট্র গঠন করেন। এভাবে মিশরে সর্বপ্রথম রাজবংশের সূচনা হয়।
প্রাচীন মিশরীয়দের অর্থনৈতিক জীবনঃ প্রাচীন মিশরীয়দের অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক। কারণ মিশরীয় সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল নীল নদের অববাহিকায়। আর এ নীল নদ ছিল অত্যন্ত উর্বর। তাই মিশরীয়গণ নীল নদে বাধ দিয়ে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ কৃষি ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি।
প্রাচীন মিশরীয়দের সামাজিক জীবনঃ নিম্নে প্রাচীন মিশরীয়দের সামাজিক জীবন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলাে-
(১) উচ্চশ্রেণিঃ প্রাচীন মিশরীয় সমাজে সবার ওপরে ছিল এই উচ্চশ্রেণি। রাজ পরিবার, সভাসদ, ধর্মমন্দিরে অবস্থানরত পুরােহিতগণ এবং ধনী ভূ-স্বামীরা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
(২) মধ্যবিত্ত শ্রেণিঃ প্রাচীন মিশরীয় সমাজে উচ্চশ্রেণির পরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থান ছিল। ব্যবসায়ী, কারিগর, লিপিকার ও অবস্থাসম্পন্ন কৃষক সমাজ এ শ্রেণির অন্তর্গত ছিল।
(৩) নিম্নশ্রেণীঃ প্রাচীন মিশরীয় সমাজে সর্বনিম্ন শ্রেণি ছিল দরিদ্র কৃষক ও মজুর শ্রেণি। তাদের ঘরবাড়ি ছিল খড় ও মাটির তৈরি। তবে সামান্য কিছু আসবাবপত্র থাকলেও তা ছিল কাঠ ও টুল জাতীয়। তারা কর আদায়কারীদের ভয়ে সর্বদা ভীত থাকত। এ ছাড়া শ্রমিকদের জোর করে রাস্তাঘাট তৈরি ও পিরামিড তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতাে।
(৪) শিল্পকলাঃ শিল্পকলায় প্রাচীন মিশরীয়গণ অমরকীর্তি রেখে গিয়েছেন। এর জ্বাজল্য প্রমাণ এখনও মিশরের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। শুধুমাত্র শিল্পের জন্য তারা শিল্পচর্চা করতেন না, বরং জীবন, দর্শন, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতির প্রভাব তাদের শিল্পকর্মে প্রতিভাত। সজীব, বাস্তবধর্মী ও সমৃদ্ধ শিল্পকলার নিদর্শন দেখা যায় তাদের নির্মিত পিরামিড, মন্দির, ভাস্কর্য, দেওয়ালচিত্র, তৈজসপত্র, কাঠ ও পাথরে খােদাই করা বিভিন্ন দ্রব্যাদিতে।
(৫) মিশরীয় স্থাপত্যঃ মিশরীয়গণ ছিলেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য হিসেবে পরিগণিত তাদের নির্মিত পিরামিডগুলাে আজো দর্শকদের বিস্ময়ে বিমুগ্ধ করে। মিশরের অক্ষত মমিগুলো আজও আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীদের প্রতি বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জস্বরূপ।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরীয় সভ্যতায় কতকগুলাে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন সনদ অধিকাংশই ছিল মিশরীয়দের সৃষ্টি। মিশরীয়রা আধুনিক সভ্যতার মূলভিত্তি রচনা করে বিশ্বসভ্যতার বিকাশে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। প্রাচীন মিশরীয়দের সরকার পদ্ধতি, আইন, স্থাপত্য, শিল্পকলা, সাহিত্য, ধর্ম, কৃষি, শিল্প, লিখন পদ্ধতি, বিজ্ঞান, বর্ষপঞ্জিকা ইত্যাদির নিকট বিশ্বসভ্যতা অনেকাংশে ঋণী।