অথবা, হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনী ও কার্যাবলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা, মহানবী (স)-এর বাল্যজীবন সম্পর্কে আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ প্রখ্যাত দার্শনিক মিলটন বলেছিলেন- The Childhood shows the man as morning shows the day. ধ্বংসের মুখােমুখি দাঁড়ানাে বিশ্বমানবতাকে সার্বিক নেতৃত্ব দেয়ার সুমহান ব্রত নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন মহানবী (স)। তার বাল্যজীবন তথা মাক্কী জীবন ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার মক্কা জীবনকে নবুয়ত পূর্ব এবং নবুয়ত পরবর্তী জীবন- এ দুটি অংশে ভাগ করা যায়। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলাে।
মহানবী (স)-এর মক্কী জীবনঃ নিম্নে মুহাম্মদ (স)-এর মক্কী জীবন ফুটিয়ে তোলা হলো-
ক. নবুয়তপূর্ব জীবনঃ মানব জাতির কল্যাণময় জীবনের দিক নির্দেশকারী মহান শিক্ষক মুহাম্মদ (স) অসংখ্য বাধা বিপত্তির মাঝে নবুয়তপূর্ব বাল্যজীবন অতিবাহিত করেন। নিম্নে তার বাল্যকালের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলাে-
১. জন্মলাভঃ ঐতিহাসিক তাবারি, ইবনে খালদুন, ইবনে হিশাম, আমীর আলীসহ অধিকাংশের মতে, নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ, আশীর্বাদের মূর্তপ্রতীক হযরত মুহাম্মদ (স) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ২৯শে আগস্ট, মােতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল সােমবার ঝিরঝিরে সমীরণের দোলা লাগা প্রভাতে বিবি আমেনার গর্ভে ভূমিষ্ট হন।
২. বংশ পরিচিতিঃ হযরত মুহাম্মদ (স) হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর। মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশােদ্ভূত হাশেমী শাখায় মহানবী (স) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব আর মাতার নাম আমেনা বিনতে ওয়াহাব।
৩. নামকরণঃ ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, আমেনার গর্ভে যে শিশুটি জন্ম গ্রহণ করলেন, পিতামহ আবদুল মুত্তালিব তার নাম রাখলেন মুহাম্মদ এবং মাতা আমেনা শিশুর নামকরণ করেন আহমদ। এ দুটি নামই পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে।
৪. ধাত্রী হালিমার তত্ত্বাবধানে মুহাম্মদঃ মহানবী (স) জন্মের পর প্রথম সাত দিন নিজ মায়ের দুধ পান করেন। অতঃপর আরবের প্রথানুযায়ী শিশু মুহাম্মদ (স)-কে লালন পালনের জন্য সাদ গােত্রীয় বিবি হালিমার তত্ত্বাবধানে অর্পণ করা হয়। তিনি পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তার গৃহে লালিত পালিত হন। ঐতিহাসিক পি, কে, হিট্টি বলেন, মহানবী (স) বিবি হালিমার শুধুমাত্র ডান পার্শ্বের স্তন্যটির দুধ পান করতেন। বাম পার্শ্বের স্তন্যটি হালিমার সন্তানদের হক হিসেবে রেখে দিতেন।
৫. বক্ষ বিদীর্ণঃ ভাষা শিক্ষা ও বিবি হালিমার তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় দু’জন সাদা পােশাকধারী ফেরেশতা মহানবী (স)-এর সিনা চাক তথা বক্ষ বিদীর্ণ করে তার আত্মার পরিশুদ্ধি করেন। তখন তার বয়স মাত্র চার বছর। পর্যায়ক্রমে এ ঘটনা চার বার ঘটে। ঐতিহাসিক খােদা বক্স বলেন, “শুধু বক্ষ বিদীর্ণই নয়, এ সময় তিনি তৎকালীন আরব সমাজের মধ্যে উৎকৃষ্ট আরবি ভাষায় কথা বলতেও অভ্যস্ত হন।”
৬. মা আমেনার মৃত্যুঃ ধাত্রী হালিমার গৃহ উজ্জ্বল করে মহানবী (স) ছয় বছর বয়সে মা আমেনার কোলে ফিরে আসেন। মা আমেনা তার পূর্ব ইচ্ছানুযায়ী এ বছরই পিতৃকুলের সাক্ষাতে ও স্বামীর কবর যিয়ারত করার জন্য শিশু পুত্রকে নিয়ে মদিনায় যান। মদিনা থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মক্কার অদূরে আবওয়া নামক স্থানে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। অতঃপর বিশ্বস্ত পরিচালিকা উম্মে আয়মন নিঃসহায় শিশু মুহাম্মদকে মক্কায় নিয়ে আসেন, এবং এসে দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে পৌঁছে দেন।
৭. আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুঃ সাত বৎসর বয়সে পিতামহ আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মদ (স)-এর লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার অভিভাবকত্ব মাত্র দুই বৎসর কাল স্থায়ী হয়। ৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। এভাবে হযরত (স) অতি অল্প বয়সেই মাতা-পিতা ও পিতামহের স্নেহ হতে বঞ্চিত হন।
৮. আবু তালেবের অধীনেঃ দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালেব মুহাম্মাদ (স) লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চাচা তাকে যথাসাধ্য আদর যত্নে প্রতিপালন করতে থাকেন। কিন্তু চাচার আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় বালক মুহাম্মদ (স)-কে কঠোর পরিশ্রম করতে হতাে। এ সময় তিনি পাহাড়ের উপত্যকায় মুক্ত আকাশের নিচে মেষ ও উট চরাতেন।
৯. আল আমিন উপাধি লাভঃ শৈশবকালেই মুহাম্মদ (স)-এর কর্মনিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, সততা, আমানতদারিতা, বিশ্বস্ততা, বিনম্র স্বভাব, আত্মবিশ্বাসসহ অন্যান্য বৈশিষ্টের কারণে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ফলে তৎকালীন সমাজের সকলেই তাকে ভালােবাসতো এবং এসব গুণের কারণে তাকে তারা আল আমিন উপাধিতে ভূষিত করেন (৫৭৯-৫৮০ খ্রিঃ)।
১০. সিরিয়া গমন ও সাধুর ভবিষ্যদ্বাণীঃ ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, ৫৮২ খ্রিস্টাব্দে ১২ বছর বয়সে প্রিয়নবী (স) চাচা আবু তালেবের সাথে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেন। এ পরিভ্রমণে খােদাদ্রোহী সামুদ জাতির ধ্বংসাবশেষ অবলােকন ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে তার মন এক পরম সত্তার সান্নিধ্য পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ সময় বসরা নগরে বুহায়রা নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রী মহানবীকে শেষ নবী হিসেবে শনাক্ত করেন এবং আবু তালেবকে তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে উপদেশ দেন।
১১. হারবুল ফিজারে অংশগ্রহণঃ বালক মুহাম্মদ (স)-এর ১৫ বছর বয়সের সময় কুরাইশ ও কায়স গােত্রের মধ্যে খেলা, ঘােড়দৌড় ও কাজের প্রতিযােগিতা নিয়ে হারবুল ফিজার তথা অন্যায় বা পাপাচারীদের যুদ্ধ নামে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে গােত্রীয়ভাবে তিনি তার চাচার সাথে অংশগ্রহণ করেন। তিনি কায়েস গােত্রের নিক্ষিপ্ত তীর সংগ্রহ করে তার চাচার হাতে তুলে দিতেন। কিন্তু নিজে অস্ত্র ধারণ করেননি।
১২. হিলফুল ফুযুল গঠনঃ আর্তপীড়িত, নির্যাতিত, ব্যথিত অত্যাচারিতকে রক্ষা ও আরবে শান্তি স্থাপন করতে কতিপয় শান্তিপ্রিয় যুবককে নিয়ে ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে একটি শান্তি সংঘ গঠন করেন। এ সংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিম্নরূপঃ
ক. নিঃস্ব, অসহায় ও দুর্গতদের সেবা করা।
খ. অত্যাচারিতকে সাহায্য করা ও অত্যাচারীকে বাধা দেয়া।
গ. শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।
ঘ. গােত্রে গােত্রে সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্টা করা।
ঙ. বিদেশী বণিকদের ধনসম্পদের নিরাপত্তা বিধানের চেষ্টা করা, ইত্যাদি।
১৩. বিবাহঃ ২৫ বছর বয়সে মহানবী (স) তৎকালীন আরবের ধনাঢ্য বিধবা মহিলা ৪০ বছর বয়স্কা বিবি খাদিজাকে বিয়ে করেন। ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, ৫৫ খ্রিস্টাব্দে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল খুবই মধুর।
১৪. হাজরে আসওয়াদ স্থাপনঃ কাবা শরীফের সংস্কার উপলক্ষে হাজারে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে বিরােধ দেখা দিলে মহানবী (স)-কে সালিস মানা হয়। তিনি এ সময় অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তিনি নিজের গায়ের চাদর খুলে তার ওপর কৃষ্ণ প্রস্তরটি স্থাপন করেন এবং বিবদমান গােত্রগুলাের নেতৃবর্গকে চার কোণে ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন। অতঃপর তিনি নিজে কৃষ্ণ প্রস্তরটিকে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করলেন। এভাবেই তিনি একটি অনিবার্য বিরােধের সমাধান করে দেন।
১৫. ধ্যান ও গবেষণাঃ মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত, আলোকিত এ মহামানবের মনে মানব জাতির দুর্দশা গভীরভাবে রেখাপাত করে। তাই মানব জাতির মুক্তির পথ অনুসন্ধানে তিনি ধ্যান গবেষণা শুরু করেন। ফলে হেরা গুহার নির্জনতা তার নিকট প্রিয় হয়ে ওঠে।
১৬. নবুয়ত লাভ ও দাওয়াতঃ চন্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন বয়সে, রমযান মাসের ২৭ তারিখ সােমবার রাতে মুহাম্মদ (স) হেরা পর্বত গুহায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে নবুয়ত লাভ করেন। নবুয়ত লাভের পরপরই তিনি দাওয়াতী কাজ শুরু করেন।
খ, নবুয়ত পরবর্তী মক্কী জীবনের ঘটনাবলিঃ নবুয়ত লাভের মধ্য দিয়ে হযরত (স)-এর জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। তার পরবর্তী জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিচে উল্লেখ করা হলাে-
১. গােপনে দাওয়াতী কাজঃ নবুয়তপ্রাপ্তির পর প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিকট তিন বছরকাল গােপনে দাওয়াত প্রচার অব্যাহত রাখেন। সাফা পর্বতে আরকাম মাখযুমীর গৃহ ছিল ইসলামের গােপন প্রচার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ সময় প্রায় ৪০ জন লােক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
২. প্রকাশ্যে দাওয়াতী কাজঃ নবুয়তের তৃতীয় বছরের শেষভাগে মহানবী (স) প্রকাশ্যে দাওয়াতী কাজ আরম্ভ করেন। ইতােমধ্যে আল্লাহর নিকট থেকে নির্দেশ এলাে- “আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করে দিন” এবং “আপনাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে জনগণকে জানিয়ে দিন এবং এ ব্যাপারে মুশরিকদের পরােয়া করবেন না”। এরপর মুহাম্মদ (স) প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৩. কুরাইশদের নির্যাতনঃ ইসলামের শাশ্বত আহ্বানে সমগ্র আরবে সাড়া পড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে বিদ্বেষপরায়ণ কায়েমী স্বার্থপর কুরাইশ নেতারা মহানবী (স)-এর বিরােধিতায় অবতীর্ণ হয়। তারা ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর, এমনকি মুহাম্মদ (স)-এর ওপরও অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন।
৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতঃ কুরাইশদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহানবী (স)-এর নির্দেশে নবুয়তের পঞ্চম বৎসরের সপ্তম মাসে ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওসমান (রা)-এর নেতত্বে ১৫ জন এবং দ্বিতীয়বার ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে ১৮ জন মহিলাসহ ১০০জন মুসলমান আবিসিনিয়ার রাজা নাজ্জাসীর নিকট আশ্রয় নেন। মুসলমানদের এ হিজরত রাসূল (স)-এর জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
৫. হযরতের বিরুদ্ধে বর্জননীতিঃ নবুয়তের ৬ষ্ঠ বৎসরে হযরত হামজা ও ওমর (রা) ইসলাম ধর্মগ্রহণ করলেন। এতে করে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পেল। এমতাবস্থায় কুরাইশরা মুসলমানদের সাথে কথাবার্তা, ক্রয়-বিক্রয় ও বৈঠক সম্পর্ক স্থাপন বন্ধ করে দিল। রাসূল (স) তার অনুসারীদের নিয়ে ‘শিয়াবে আবু তালেব’ নামক নির্জন পার্বত্য উপত্যকায় আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। অচিরেই মুসলমানদের খাদ্যসামগ্রীর অভাব অনটন দেখা দেয়। তিন বৎসর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে কুরাইশরা তাদের এ বর্জননীতি ত্যাগ করলে হাশেম ও মুত্তালিব গােত্রদ্বয়ের লােকজন নিজ নিজ গৃহে ফিরে আসেন।
৬. আমুল হুযন বা শােকবর্ষঃ বিবি খাদিজা (রা) ছিলেন হযরতের সকল আপদে সমাধানকারী, পরামর্শদাতা ও সাহায্যকারী। আর পিতৃব্য আবু তালেব ছিলেন তার শৈশবের আশ্রয়স্থল, যৌবনের অভিভাবক, সাহায্যকারী ও পরবর্তী জীবনের কার্যাবলির একনিষ্ঠ সমর্থক। নবুয়তের দশম বৎসর ৬২০ খ্রিস্টাব্দে এ দু’জনের মৃত্যুতে রাসূল (স) শােকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন এবং নিজেকে অসহায় ভাবতে লাগেন। এজন্য এ বছরটি আমুল হুন বা শােকবর্ষ নামে খ্যাত।
৭. তায়েফ গমনঃ কুরাইশ নেতাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নবুয়তের দশম সালে মুহাম্মদ (স) ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ গমন করেন। তায়েফের কাফেররা বর্বরতম নির্যাতনে রক্তাক্ত করে মুহাম্মদ (স)-কে সেখান থেকে ফিরে আসতে বাধ্য করেন।
৮. মিরাজে গমনঃ নবুয়তের দশম বর্ষে ২৭ রজব সােমবার আল্লাহর বিশেষ আমন্ত্রণে মুহাম্মদ (স) মিরাজে গমন করেন। এ সময় তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দর্শন, আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভসহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নির্দেশপ্রাপ্ত হন।
৯. আকাবার প্রথম ও দ্বিতীয় শপথঃ ৬২১ ও ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হজ্জ মৌসুমে যথাক্রমে ১২ ও ৭৫ জন মদিনাবাসী আকাবা উপত্যকায় হযরতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তাদের দেশে তাকে আমন্ত্রণ জানান। ইসলামের ইতিহাসে একে বায়তুল আকাবা বলা হয়। এ শপথ দু’বার অনুষ্ঠিত হওয়ায় ইতিহাসে এটাকে আকাবার প্রথম ও দ্বিতীয় শপথ বলা হয়। ইসলামের সম্প্রসারণে এর তাৎপর্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
১০. মদিনায় হিজরতঃ কাফেরদের চরম বিরােধিতা আর তীব্র নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করা ও অসমাপ্ত মিশন সফল করার লক্ষ্যে মহানবী (স) অপেক্ষাকৃত নিরাপদ নগরী মদিনায় হিজরত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অবশেষে মহান আল্লাহর অহী প্রাপ্ত হয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাই মহানবী (স) মদিনায় হিজরত করেন।
উপসংহারঃ ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা আর দুঃখ কষ্টে জর্জরিত ছিল হযরত মুহাম্মদ (স)-এর বাল্যজীবন। তবুও তার মাঝে শৈশবেই অনুপম মহৎ গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই তাে মহান আল্লাহ ঘােষণা করেন, “নিশ্চয়ই আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী”।