অথবা, ‘ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তিতে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রেখেছেন।’- উক্তিটি আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ নবম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলোতে যে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা প্রবহমান ছিল তা নিঃসন্দেহে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির গৌরবজনক অধ্যায়গুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত। একদল যুক্তিবাদী মননশীল ব্যক্তি নিজেদের উদ্যোগে চিন্তার জগতে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা করেন। অতীতের এই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ও হারিয়ে যাওয়া এতিহ্যের হিসাব-নিকাশ করতে গেলে যে অমর ব্যক্তির কীর্তিসৌধ মনের পর্দায় ভেসে ওঠে তিনি হলেন ‘সমাজবিজ্ঞানের সত্যিকার জনক’ বলে খ্যাত প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুন।
সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ইবনে খালদুনের অবদানঃ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে ইবনে খালদুনের অবদান অপরিসীম। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতাঃ ইবনে খালদুন সর্বপ্রথম আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজবিজ্ঞান যখন কেবল একটা অস্পষ্ট বিষয় এবং কিছুটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল, তখন তিনিই প্রথম “উমরান’ ধারণা ব্যবহার করেন। তিনি মানুষের সমাজ ও তার সভ্যতা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অর্জিত উন্নতিকে এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করেন।
সমাজের বৈপ্লবিক বিশ্লেষণঃ ইবনে খালদুন সেই মননশীল ব্যক্তি, যিনি সমাজকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আওতায় এনে উন্নত করার চেষ্টা করেছিলেন। সমাজকে এক বিশেষ পঠন-পাঠনের বিষয়বস্তু বিবেচনা করে ইবনে খালদুন সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে বৈজ্ঞানিক পন্থায় বিশ্লেষণ করেছেন।
সমাজের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানঃ ইবনে খালদুন বিশ্বাস করতেন যে, সমাজের সত্যিকার অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অভিজ্ঞতালব্ধ হতে হবে এবং প্রতিটি সংস্কার বা পরিবর্তনের ভিত্তি হতে হবে সামাজিক ঘটনার বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল। এই চিন্তার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো তিনি সমাজকে নিয়ে আসেন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাছাকাছি।
আল মুকাদ্দিমা রচনাঃ সাধারণ সমাজবিজ্ঞান বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইবনে খালদুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কর্ম হলো “আল-মুকাদ্দিমা” বা “সর্বজনীন ইতিহাসের ভূমিকা”৷ এই মুকাদ্দিমাই ইবনে খালদুনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের যোগসূত্র স্থাপনঃ ইবনে খালদুন তার “কিতাবুল ইবরার” গ্রন্থের ভূমিকা আল-মুকাদ্দিমাতে সমাজ-সভ্যতা ও ইতিহাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে গবেষণার নতুন দরজা উন্মুক্ত করেছেন।
পরিশেষঃ পরিশেষ বলা যায় যে, ইবনে খালদুন সামাজের প্রত্যেকটি দিককে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রত্যক্ষ করতে চেষ্টা করেছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন দিক থেকে সমাজকে পর্যবেক্ষণ, এর গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ এবং এর ক্রমবিকাশের নিয়মগুলো পর্যালোচনা করে তিনি এই সত্য উদ্ভাবন করেন।