অথবা, উপসংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দাও।
ভূমিকাঃ সংস্কৃতি হলাে মানুষের জীবনযাপনের ধরন বা পদ্ধতি। বর্তমানে বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে এক জাতি অপর জাতির খুব কাছাকাছি আসছে। এক সমাজের মানুষ অন্য সমাজের মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু সকল মানুষের আচরণ, বিশ্বাস, মূল্যবােধ, চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তিস্বার্থ ও ধর্মীয় অনুভূতি এক নয়। ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে আচরণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ পার্থক্য থেকেই এক শ্রেণির মানুষ অপর শ্রেণির মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। সমাজের এ অবস্থা থেকে দেখা দিচ্ছে ‘সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব।
উপসংস্কৃতিঃ সমাজে মানুষের সামাজিক অবস্থান স্তরবিন্যাসের দ্বারা নির্ধারিত। এ স্তরবিন্যাসের ওপরের স্তরে কিছু লােক বসবাস করে আবার নিচের স্তরেও কিছু লােক বসবাস করে। একই সমাজের অন্তর্ভুক্ত হলেও বিভিন্ন স্তরের সংস্কৃতি একইরকম নয়। স্তরবিন্যস্ত সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বাতন্ত্র বিদ্যমান। এই স্বাতন্ত্র্যকেই বলা হয় উপসংস্কৃতি (Sub-Cuture) সকল সমাজেই উপসংস্কৃতির অস্তিত্ব বিদ্যমান। অর্থাৎ উপসংস্কৃতি হলাে সংস্কৃতির মধ্যে সংস্কৃতি। এ জে এম জিংগার বলেন, “উপসংস্কৃতির বিকাশ এভাবে হয়ে থাকে বলে ধরা যেতে পারে যে, প্রথমে স্থানান্তর বা সংযােগ ব্যবস্থার বিস্তৃতির ফলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমির দলসমূহ এই সমাজের সদস্যে পরিণত হয়। কিন্তু পরে দৈহিক অথবা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাদেরকে পরিপূর্ণ আত্মীয়করণ থেকে বিরত রাখে। এককথায় উপসংস্কৃতি হলাে সংস্কৃতির মধ্যে সংস্কৃতি এবং বৃহত্তর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতম সংস্কৃতি।
পরিশেষঃ সংস্কৃতি হলাে একটি জাতির ঐতিহ্যস্বরূপ। উপসংস্কৃতি ও পাল্টা সংস্কৃতি একটি সমাজের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে গতিশীল করে তােলে। আবার অনেক সময় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে, যা সাধারণত স্থিতিশীলতার জন্য কাম্য নয়।