প্রশ্নঃ সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব কী?
ভূমিকাঃ সংস্কৃতি হলাে মানুষের জীবনযাপনের ধরন বা পদ্ধতি। বর্তমানে বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে এক জাতি অপর জাতির খুব কাছাকাছি আসছে। এক সমাজের মানুষ অন্য সমাজের মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু সকল মানুষের আচরণ, বিশ্বাস, মূল্যবােধ, চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তিস্বার্থ ও ধর্মীয় অনুভূতি এক নয়। ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে আচরণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ পার্থক্য থেকেই এক শ্রেণির মানুষ অপর শ্রেণির মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। সমাজের এ অবস্থা থেকে দেখা দিচ্ছে ‘সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব’।
সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বঃ সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বা Cultural Conflict হলাে সমাজের মানুষের আচরণের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অসংগতি। সাধারণ অর্থে, ব্যক্তির কর্মকাণ্ড, আচার-আচরণ, রীতিনীতি, ধ্যান-ধারণা, শিক্ষা, বিচার-বিবেচনা ও বিশ্বাসের মার্জিত রূপই হলাে সংস্কৃতি। ব্যক্তি সাধারণত তার সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতির দ্বারা চালিত হতে থাকে। কিন্ত সমাজ যখন অন্য ধরনের কোনাে কর্মকাণ্ড প্রয়ােগ করে, যা গতানুগতিক সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়- তখন মানুষ সেই কর্মকাণ্ডকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না। এভাবে দুই সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে সমাজে এক ধরনের অসংগতি তৈরি হয়। নতুন সাংস্কৃতিক মিশ্রণে সৃষ্ট এ অসংগতিকেই বলে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এক নিজস্ব ধরনের সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু ত্রয়ােদশ শতকের প্রথমার্ধে তুর্কী বিজয়ের ফলে এক নতুন ধারার সংস্কৃতি এই উপমহাদেশে প্রবেশ করে যা ছিল গতানুগতিক সংস্কৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে হিন্দু ও মুসলিম দুই জাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দেখা দেয়। এর কিছু কিছু রূপ এখনো পর্যন্ত উপমহাদেশে দেখা যায়। হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সংস্কৃতির মিশ্রণে সৃষ্ট অসংগতিই.এই সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের কারণ।
পরিশেষঃ সংস্কৃতি হলাে একটি জাতির ঐতিহ্যস্বরূপ। উপসংস্কৃতি ও পাল্টা সংস্কৃতি একটি সমাজের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে গতিশীল করে তােলে। আবার অনেক সময় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে, যা সাধারণত স্থিতিশীলতার জন্য কাম্য নয়।
Leave a comment