ভূমিকাঃ বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে জাতি ও জাতীয়তাবাদ এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। জাতীয়তাবাদ বর্তমান কালে বিশ্ব রাজনীতির প্রধান পরিচালিকা শক্তি। যার ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্যায়ে ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলাে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন নতুন রাষ্ট্র গঠন করেছে।
জাতি ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে পার্থক্যঃ জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে প্রধান পার্থক্য নিম্নরূপ-
(১) রাজনৈতিক সংগঠনের দিক থেকেঃ জাতীয়তার জন্য কোনাে রাজনৈতিক সংগঠন প্রয়ােজন হয় না। কিন্তু জাতি গঠনে রাজনৈতিক সংগঠন অত্যাবশ্যক।
(২) সুসংহতের দিক থেকেঃ জাতীয়তা খুব বেশি সুসংহত নাও হতে পারে। কিন্তু জাতি সুসংহত হবে এবং স্বাধীন অথবা স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত থাকবে।
(৩) অনুভূতির দিক থেকেঃ জাতীয়তা হচ্ছে মানসিক ধারণা বিশেষ। আর জাতি হচ্ছে মানসিক ধারণা, রাজনৈতিক সংগঠন, স্বাধীন হবার প্রচেষ্টা ইত্যাদির যােগফল।
(৪) সাধারণ সূত্রের দিক থেকেঃ জাতীয়তা গঠনের জন্য কতগুলাে সাধারণ সূত্রের মিল থাকতে হয়। যেমন- ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদি। কিন্তু জাতি গঠনের জন্য প্রয়ােজন হয় তীয়তাবােধের।
(৫) ব্যাপক অর্থেঃ জাতীয়তা হচ্ছে একটি চেতনা আর জাতি একটি সার্বভৌম সংগঠন। অর্থাৎ জাতীয়তার চেতনার সামগ্রিক রূপই হচ্ছে জাতি।
(৭) রাজনৈতিক চেতনার দিক থেকেঃ জাতি ও জাতীয়তার পার্থক্য হলাে- জাতি বিশেষ রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন হয় কিন্তু জাতীয়তা তা হয় না।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জাতি এবং জাতীয়তার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদের মধ্যে পার্থক্য অতি সামান্য। জাতীয়তা হচ্ছে একটি মানসিক চেতনা, আর জাতি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সংগঠন। জাতীয়তা হচ্ছে প্রাথমিক অবস্থা, আর জাতি হচ্ছে পরিণত অবস্থা।