অথবা, আত্মা বা মন কাকে বলে?
ভূমিকাঃ প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিককালের বিভিন্ন মনীষী মন বা আত্মা কি, মন বা আত্মার সাথে বস্তুর সম্পর্ক কী ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। আর এর ফলে দর্শনের ইতিহাসে মন বা আত্মা সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ আত্মাকে একটি চিরস্থায়ী সত্তা বা আধ্যাত্মিকদ্রব্য বলে স্বীকার করেছেন। আবার অনেকে আত্মাকে নশ্বর বলে মনে করেছেন।
মন বা আত্মাঃ এ পৃথিবীতে যত জিনিস বা বস্তু আছে এদের থেকে একটি ভিন্ন জিনিস হল মন বা আত্মা। আত্মা কি বা আত্মার স্বরূপ নিয়ে দার্শনিকগণ স্থির সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। সাধারণ মত অনুসারে, আত্মা হল এমন একটি সক্রিয় শক্তি যা স্মরন, চিন্তন, অনুভূতি, বিচার, সংকল্প, ইচ্ছা প্রভৃতি ক্রিয়া করে। মন দেহাশ্রয়ী কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে দেহ হতে ভিন্ন। কিন্তু দর্শনের সুদীর্ঘ ইতিহাসে মনের প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন মতের উদ্ভব হয়েছে। তাই বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্নভাবে মন বা আত্মার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো, প্লাটিনাস, অগাস্টিন প্রমুখের মতে, মন একটি আধ্যাত্মিক দ্রব্য। মন ব্যক্তির সূব বৃত্তির আশ্রয়স্থল। মন অজড়ীয়, অবিভাজ্য এবং অবিনশ্বর। জার্মান দার্শনিক কান্টের মতে, আমাদের আত্মা এক আঙ্গিক ঐক্য, যার সাহায্যে বৈচিত্র্যময় জগতের সবকিছু আমাদের কাছে ধরা দিচ্ছে এক অখণ্ডরূপে। দার্শনিক হিউমের মতে, আমাদের আত্মা প্রত্যক্ষণের সমষ্টি। দার্শনিকদের এসব সংজ্ঞা থেকে বলা যায় যে, প্রকৃতিগতভাবে আত্মা হল জড় ও প্রাণ হতে ভিন্নতর এক শক্তি। মানুষের আত্মারূপ নতুন ধর্মের উন্মেষ ঘটেছে জীবনের প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন স্তরের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে। দেহ ও স্নায়ুতন্ত্র এ নতুন ধর্মের আবির্ভাবকে সম্ভব করে তুলেছে। এ আত্মা একটি শক্তিবিশেষ, যা ব্যক্তিকে শত পরিবর্তনের মধ্যেও অপরিবর্তিত বলে ঘােষণা করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, মন বা আত্মা স্বতন্ত্র কোন বিষয় নয়। মন বা আত্মা এক অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের এ আত্মারূস্বরূপ নির্ণয় নিয়ে যুগে যুগে তাই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্ক হয়েছে।