অথবা, জ্ঞাতি গােষ্ঠি কাকে বলে?
ভূমিকাঃ ‘Anthropology is the study of kinship’- আদি মানব সমাজ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সামাজিক সংগঠনগুলাের মধ্যে যে কয়টি প্রতিপাদ্য বিষয় নৃ-বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে জ্ঞাতি সম্পর্ক তার মধ্যে অন্যতম। বুদ্ধি বৃত্তিসম্পন্ন মানুষ তার আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় সমাজে বাস করে। আর এই সমাজ গঠিত হয় জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে।
জ্ঞাতি সম্পর্কের সংজ্ঞাঃ ইংরেজি ‘Kin’-এর আভিধানিক অর্থ- গােষ্ঠি, কুটুম্ব, জ্ঞাতি। এই ‘Kin’ থেকেই Kinship-এর উৎপত্তি। আর Kinship শব্দের অর্থ জ্ঞাতি সম্পর্ক, রক্ত সম্পর্ক বা আত্মীয়তার সম্পর্ক। রক্তের মাধ্যমে এবং বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তাই হলাে জ্ঞাতি সম্পর্ক।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ রবিন ফক্স তার ‘Kinship and marriage’ গ্রন্থে জ্ঞাতি সম্পর্কের সংজ্ঞায় বলেন, ‘Kinship বলতে কেবল আত্মীয়-স্বজন বা জ্ঞাতি জনের মধ্যকার সম্পর্ককে বুঝায়। জ্ঞাতিরা ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা প্রকৃত পক্ষে, অনুমিতভাবে অথবা কাল্পনিকভাবে রক্ত বা জন্মসূত্রে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
নৃবিজ্ঞানী রিভার্স বলেন, জগতি সম্পর্ক হচ্ছে জৈবিক বন্ধনের সামাজিক স্বীকৃতি।
নৃবিজ্ঞানী Marvin Harris তার People, Nature, and culture গ্রন্থে বলেন, ‘Kinship is the permanent Ideology of the domestic life.’
অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ‘সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি’ গ্রন্থে বলেন, ব্যাপক অর্থে জ্ঞাতি সম্পর্ক বলতে রক্ত, বিবাহ, কল্পনা, বন্ধুত্ব, দত্তক গ্রহণ ইত্যাদি বন্ধন সূত্রে আবদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যকার আত্মীয়তার সম্পর্ককে বুঝায়। |
রেডক্লিফ ব্রাউন বলেন, “যখন আমরা জ্ঞাতি বা কুটুম্ব বা আত্মীয়ের কথা বলি তখন এমন একটি ধারণা
জাগে যে, সে জ্ঞাতির সাথে আমরা কোন এক বিশেষ বন্ধনে আবদ্ধ।”
মালিনস্কি বলেন, প্রথমত, জ্ঞাতি সম্পর্ক হচ্ছে যেসব ব্যক্তিগত সম্পর্কের বন্ধন যা সন্তান উৎপাদনের সামাজিক সূক্ষ্মায়নের ওপর প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক সমষ্টিতেই জীবদ্দশার প্রতিটি পর্যায়ে তার জীবনের পরিধির যে বিস্তৃতি ঘটে এবং যে সম্পর্ক তার প্রাথমিক সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত তাও তার বিস্তৃত অর্থে জ্ঞাতি সম্পর্ক নয়।
রবিন ফক্স তার ‘Kinship and marriage’ গ্রন্থে জ্ঞাতি সম্পর্কের সংজ্ঞায় বলেন – ‘Kinship বলতে কেবল আত্মীয়-স্বজন বা জ্ঞাতি জনের মধ্যকার সম্পর্ককে বুঝায়। জ্ঞাতিরা ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা প্রকৃত পক্ষে, অনুমিতভাবে অথবা কাল্পনিকভাবে রক্ত বা জন্মসূত্রে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।’
পরিশেষঃ উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলাের আলােকে বলা যায় যে, জ্ঞঅতি সম্পর্ক বলতে রক্ত, বিবাহ, কল্পনা, বন্ধুত্ব, দত্তক প্রভৃতি বন্ধনসূত্রে আবদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যকার আত্মীয়তার সম্পর্ককে বুঝায়।