অথবা, ইচ্ছার স্বাধীনতা বলতে কী বােঝ?
ভূমিকাঃ ইচ্ছার স্বাধীনতা দর্শনের একটি অন্যতম বিষয়। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে কি নেই এ বিষয় নিয়ে রয়েছে অনেক মন্তব্য। সাধারণভাবে বলা যায় যে, স্বাধীনতা আছে বলেই মানুষ মনে করে। ইচ্ছার স্বাধীনতা নিয়ে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, নীতিবিজ্ঞানী, মনােবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সকল তাত্ত্বিক পুরুষ তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ।
ইচ্ছার স্বাধীনতাঃ সাধারণত ইচ্ছার স্বাধীনতা বলতে বিভিন্ন বিকল্প কাজের মধ্যে একটিকে পছন্দ করে তা সম্পাদন করার সামর্থ্য বা ক্ষমতাকে বুঝায়। কেউ কেউ মনে করেন, কোন ব্যক্তি যদি এখন যা করেছে, তা থেকে ভিন্নতর কোন কিছু করতে পারত, তাহলে তা করতে পারার সামর্থ্যের মধ্যেই ইচ্ছার স্বাধীনতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বা প্রকৃত অর্থ নিহিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘ক’ ‘খ’কে আঘাত নাও করতে পারত। এবক্তব্যই ইচ্ছার স্বাধীনতার মুল বক্তব্য। কেননা, এ বক্তব্য থেকে বেশ বুঝা যায়, ক’-এর ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে। প্রখ্যাত নীতিদার্শনিক কান্ট বলেছেন যে, কোন কাজ করার সাধ্যতা অর্থাৎ কৃতিসাধ্যতা বা সামর্থ্যের মধ্যেই মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতার অর্থ নিহিত রয়েছে।
দুটি বিরােধী কর্মের মধ্যে একটি কর্মকে নির্বাচন করতে মানুষ কিভাবে স্বাধীন? মানুষের প্রত্যেকটি কর্মই কি নিয়ন্ত্রিত? মানুষ কি তার অদৃষ্টের বেড়াজালে আবদ্ধ? প্রাকৃতিক জগতের ঘটনাবলির মত মানুষের চিন্তা ও কর্ম নিয়ন্ত্রিত হলে মানুষের কি ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকতে পারে? এ ধরনের প্রশ্ন প্রত্যেক বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের মনে নাড়া দেয়। আর এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকে মনে করেন যে, মানুষের ইচ্ছার কোন স্বাধীনতা নেই। আবার অনেকে মনে করেন যে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে। এ ইচ্ছার স্বাধীনতা নিয়ে দর্শনের ইতিহাসে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়। যথা- (১) অদৃষ্টবাদ, (২) নিয়ন্ত্ৰণবাদ, (৩) অনিয়ন্ত্ৰণবাদ এবং (৪) আত্মনিয়ন্ত্রণ বা স্বনিয়ন্ত্ৰণবাদ।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, স্বনিয়ন্ত্ৰণবাদ- নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছে। নিয়ন্ত্ৰণবাদ অনুসারে মানুষ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত। আবার অনিয়ন্ত্ৰণবাদ অনুসারে ইচ্ছার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু স্বনিয়ন্ত্ৰণবাদ এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় করে বিচারবাদীর ভূমিকা পালন করেছে।