ভূমিকাঃ নীতি বিদ্যা মানুষের আচরণ নিয়ে আলােচনা করে এবং নৈতিক অবধারণ প্রয়ােগ করার মাধ্যমে তার মূল্যায়ন করার প্রয়াস চালায়। নীতিবিদ্যা বিশেষ ক্রিয়াগুলাের মধ্যে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বিশেষভাবে আলােচনা করে।
ঐচ্ছিক ক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরঃ নীতিবিদ্যার ঐচ্ছিক ক্রিয়ার তিনটি স্তর নিয়ে আলােচনা করা হয়। সেগুলাে নিম্নরূপঃ
১. মানসিক স্তর;
২. শারীরিক স্তর;
৩. পরিসমাপ্তির স্তর;
এর মধ্যে অন্যতম হলাে মানসিক স্তর। নিম্নে তা আলােচনা করা হলাে-
মানসিক স্তরঃ মানুষের ক্রিয়ার মানসিক স্তর বলতে আমরা অন্তঃস্থ সম্পাদিত ক্রিয়াগুলাে বুঝে থাকি। মানসিক স্তর এর কয়েকটি উপস্তর লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলাে-
(ক) অভাববােধঃ মানুষ প্রতিনিয়ত অভাবের সম্মুখীন হয়। কোনাে কিছু পাওয়ার আকাক্ষা মানুষকে সেই জিনিসের প্রতি অভাব জাগায় এবং তা পাওয়ার জন্য মানুষ বিভিন্ন কর্মে নিবৃত্ত হয়।
(খ) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ কোনাে কাজ সম্পাদনের পূর্বে ব্যক্তি ঐ জিনিসের একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করে রাখে। আর অভাবই মানুষকে সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে। তাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলাে মানুষের মানসিক স্তরের দ্বিতীয় স্তর।
(গ) কামনাঃ অভাববােধ থেকে সৃষ্ট মানুষের মনে যে অস্থির অবস্থা যা মানুষকে একটি উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম করে তােলে তাই হলাে কামনা। কামনা মানুষকে কর্মচঞ্চল করে তােলে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তা উপশম হয় তখন মানুষের ভিতরে অস্বস্তি দেখা দেয়।
(ঘ) কামনার দ্বন্দ্বঃ কামনার অস্থির অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে উদ্ভব ঘটে কামনার দ্বন্দ্বের। মাঝে মাঝে মানুষের মধ্যে যখন একাধিক কামনার উদ্ভব ঘটে তখন মানুষ কোনটি নিবৃত্তি করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
(ঙ) বিবেচনাঃ মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি বিবেচনার মাধ্যমে সঠিক কামনাটি নিবৃত্ত করে এবং খারাপ কার্যটি বাদ দেয়। মানুষের মানসিক এই বােধটিই হলাে বিবেচনা।
(চ) সিদ্ধান্তঃ কামনা, কামনার দ্বন্দ্ব এবং সর্বশেষ সঠিক বিবেচনার মাধ্যমে মানুষ একটি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এবং অভাব পূরণের মাধ্যমে একটি শান্ত অবস্থার সৃষ্টি করে। এভাবে মানসিক স্তরের সব স্তর অতিক্রম করে একটি সঠিক কামনাকে গ্রহণ করাই হলাে সিদ্ধান্ত।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক স্তরটি মূলত প্রেষণারই সদৃশ। যা একটির পর একটি পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে এবং শেষে ঐ ক্রিয়ার একটি নৈতিক অবধারণ সৃষ্টি করে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিৎ নৈতিক কার্য সম্পাদন করা