অথবা, অপরাধ বলতে কী বােঝ?
ভূমিকাঃ অপরাধ বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলাের মধ্যে অন্যতম। এ সমস্যাটি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করছে। সমাজের সর্বস্তরেই আজ অপরাধের বিষবাষ্প ছড়িয়ে রয়েছে। অপরাধের হিংস্রতায় এ দেশের সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, সংহতি, মূল্যবােধ, নিরাপত্তা প্রভৃতি চরম হুমকির সম্মুখীন। সমাজের এ অপরাধ প্রত্যয়টি আপেক্ষিক। স্থান, কাল, পাত্রভেদে অপরাধের ধরনের পরিবর্তন হয়।
অপরাধের সংজ্ঞাঃ সহজ কথায় বলা যায়, আইন বিরােধী যেকোনাে কাজই হলাে অপরাধ। সমাজ ও আইন কর্তৃক অস্বীকৃত ও অস্বাভাবিক আচরণই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত। দেশের প্রচলিত আইন ব্যবস্থা এবং সমাজের প্রচলিত। প্রথা-প্রতিষ্ঠান যেসমস্ত কাজকে সমর্থন করে না এবং যা সবার দৃষ্টিতে অসামঞ্জস্যশীল তাই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে অপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
সমাজবিজ্ঞানী কোনিগ তার ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেন, সমাজ বা গােষ্ঠী দ্বারা দৃঢ়ভাবে অসমর্থিত বা নিষিদ্ধ মানবাচরণই অপরাধ। আবার যেহেতু সমাজভেদে এবং একই সমাজে যুগভেদে সামাজিক রীতি-নীতি ও আইন প্রথা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয় তাই অপরাধমূলক আচরণ চূড়ান্ত নয়, বরং তা আপেক্ষিক।
অপরাধ বিজ্ঞানী Garofalo অপরাধের সমাজতাত্ত্বিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, মানুষের আবেগ ও অনুভূতিকে আহত করে এবং সমাজের জন্য যা ক্ষতিকর এমন কাজই অপরাধ।
অধ্যাপক গিলিন এবং গিলিন বলেন, ‘কোনাে গােষ্ঠীর যদি নিজেদের কার্যকর শক্তি থাকে তখন তারা যদি এমন কোনাে কাজ করে যা সমাজের পক্ষে হিতকর নয় এবং তা দ্বারা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন সে কাজকে অপরাধ বলা হয়।
অপরাধ বিজ্ঞানী স্টিফেন বলেন, অপরাধ হচ্ছে সে সব কাজ করা বা না করা যার জন্য আইন শাস্তি বিধান করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে অপরাধের সংখ্যা মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দৃষ্টির গােচরে-অগােচরে প্রতিদিন অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা সমাজের সাবলীল গতিধারাকে ব্যাহত করে। তাই সুস্থ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে সবাইকে অপরাধ প্রতিরােধে যত্নশীল হতে হবে।