ভূমিকাঃ সাধারণত, ইচ্ছার স্বাধীনতা বলতে বিভিন্ন বিকল্প কাজের মধ্যে একটিকে পছন্দ করে তা সম্পাদন করার সমর্থকে বুঝায়। কেউ কেউ মনে করেন যে, কোনাে ব্যক্তি যদি এখন যা করেছে তা থেকে ভিন্নতর কোনাে কিছু করতে পারতাে, তাহলে তা করতে পারার সামর্থ্যের মধ্যেই ইচ্ছার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নিহিত। মানুষের মনের তিনটি দিক আছে- বুদ্ধি, ইচ্ছা, অনুভূতি। কান্ট বুদ্ধি ও চিন্তনের বিস্তারিত আলােচনা করেছেন।
ইচ্ছা সম্পর্কে কান্টের ধারণাঃ কান্ট (১৭২৪ – ১৮০৪) ইচ্ছার স্বাধীনতাকে নৈতিক অবধারণের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার্য সত্য বলে মনে করেন। তার মতে, ভাল, মন্দ, সৎ, অসৎ, ন্যায়, অন্যায় ইত্যাদি নৈতিক পদের কোনাে মূল্য থাকে না; যদি না ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকে। তার মতে, সামর্থ্যের মধ্যেই মানব স্বাধীনতা নিহিত। কোন ব্যক্তি যদি বল প্রয়ােগ করে কাউকে কোনাে কাজ করতে বাধ্য করে তাহলে কাজের জন্য কোনাে নৈতিক দায়িত্বের প্রশ্ন উঠে না। কান্টের মতে, যখন আমাদের ইচ্ছা এই রকম কোনাে নিয়মের বশবর্তী হয়ে চলে তখনই তাকে মানুষের মত বুদ্ধিমান জীবের উপযুক্ত বলা যেতে পারে। এরকম ইচ্ছাকে প্রজ্ঞাতন্ত্রও বলা যেতে পারে। কেননা প্রজ্ঞা হতে আমরা নিয়ম পেতে পারি। যাই হােক কান্টের মতে, নিয়মানুবর্তিতাই যুক্তিযুক্ত। কান্ট আরও মনে করেন যে ইচ্ছার স্বাধীনতা ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও আত্মার অমরত্ব নৈতিকতার স্বীকার্য সত্য। তবে এগুলাের মধ্যে ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পৰ্কীয় স্বীকার্য সত্যটি হচ্ছে সব থেকে উন্নত ধরনের আমাদের কাজ কর্মে ও ইচ্ছা আমরা একাধিক নিয়ম পালন করে থাকি। কোনাে না কোনাে নিয়মের অধীনে চললেই আমাদের ইচ্ছার যুক্তিযুক্ততা বজায় থাকবে। হতে পারে স্বাস্থ্য বজায় রাখা। সুবিধা পেলেই অর্থ উপার্জন করা এবং নিজে কষ্ট করেও অপরকে আনন্দ দেওয়া একই ব্যক্তির ইচ্ছার নিয়ামক। এরকম হলেও তার ইচ্ছাকে যুক্তিযুক্ত বলা যাবে। কেননা কোনাে না কোনাে নিয়মের দ্বারা তার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আমাদের নৈতিক কাজ কর্ম কোনাে ব্যাপক নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তা আবিষ্কার করাই কান্টের নীতি বিচারের উদ্দেশ্য।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নৈতিক অবধারণের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের অস্তিত্ব, আত্মার অস্তিত্ব ইত্যাদির কিছু মূল্য থাকতে পারে, তবে এক্ষেত্রে ইচ্ছার স্বাধীনতার মূল্যের উপর অধিকতর গুরুত্বারােপ করা হয়। তাই কান্ট বিভিন্ন মানুষের ইচ্ছার ধারণাকে ব্যক্ত করেছেন। তার মতে নিয়মানুবর্তিতাই যুক্তিযুক্ত। নীতি বিদ্যায় কান্টের ইচ্ছার ধারণা সম্পর্কিত মতবাদের গুরুত্ব অপরিসীম।