অথবা, সমাজতন্ত্র বলতে কী বুঝ?
ভূমিকাঃ সমাজতাত্ত্বিক আলােচনার এক বিশাল অংশ জুড়ে সমাজতন্ত্র স্থান দখল করে আছে। বিশেষ করে ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বিশ্ব চেতনাকে বিপুলভাবে নাড়া দিয়েছে। ফলে পাশ্চাত্যের সমাজতাত্ত্বিকদের লেখায় এর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর বক্তব্যের সমাবেশ ঘটে। এই সমাজতন্ত্র একটি মতাদর্শ ও কর্মপদ্ধতি হিসেবে রাজনৈতিক স্বার্থ ও মূল্যবােধ থেকে জন্ম নিয়েছে।
সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞাঃ সমাজতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Socialism’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Socious’ থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ হলাে সামাজিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলাে Public ownership of the means of production, সমাজতন্ত্র হলাে এমন এক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানা এবং যার বিশেষত্ব নির্ভর করছে শােষণমুক্ত মানুষের সহযােগিতা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার ওপর। এখানে উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথ মালিকানা থাকবে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ নিম্নে সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা প্রদান করা হলাে-
T.B. Bottomore তার ‘Sociology and Socialism’ গ্রন্থে সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেন, ‘Socialism as thought and action created from political interests and values.’
Encyclopedia of Britanica তে বলা হয়েছে, “সমাজতন্ত্র মূলত শিল্প সমাজ, যেখানে শিল্প উৎপাদন পরিচালিত হবে যৌথ শ্রম দ্বারা এবং উৎপাদিত সম্পদ সকলের মধ্যে সুষমভাবে বন্টন হবে।”
ইংল্যান্ডের Social democratic federation-এর বক্তব্য হলাে, ‘Socialism is the socialization of the means of production.’
আমাদের অভিমতঃ উৎপাদনের উপকরণ তথা Means of production-এর ওপর সামাজিক মালিকানা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ নির্ভর এক বিশেষ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক মতবাদের নাম হলাে সমাজতন্ত্র। এখানে উৎপাদনের মালিকানা সামাজিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মার্কস তার তাত্ত্বিক আলােচনার মাধ্যমে সমাজে বঞ্চিত ও শােষিত শ্রেণির বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে তার লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সে সাথে সমাজ বিবর্তনের ধারায় সাম্যবাদি সমাজ প্রতিষ্ঠার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার জন্য তার সমাজতন্ত্র সম্পর্কিত ধারণা বাস্তবতার মুখ দেখছে না। আবার দেখা পরিলক্ষিত হয় যে, পুঁজিবাদী পর্যায়ের পরবর্তী স্তর হিসেবে সমাজতন্ত্র না এসে বরং আগে চলে আসছে।